বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন মানেই দায়িত্ববান হওয়ার যাত্রা, আর তার সঙ্গে হৈ-হুল্লা ও আনন্দ। বড় হয়ে ওঠার তাড়াহুড়ার মধ্যেও জীবনের স্বাদ নেওয়ার ব্যস্ততাটুকু আঁটেসাঁটে কিছুটা জায়গা করে নেয়। ক্লাস শেষ করে ফিরে হলের একরত্তি সেই থাকার জায়গা। তবুও একসঙ্গে থাকতে থাকতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছেলেগুলোর মধ্যে যে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো যেন হয়ে ওঠে ‘দ্বিতীয় পরিবার‘।
এই পরিবারের সবচেয়ে আনন্দঘন ও স্মৃতিময় দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘হল ফেস্ট’। সহজেই ক্লাস-পরীক্ষার হাজারো ব্যস্ততা, একঘেয়েমি, একাকিত্ব থেকে প্রাণবন্ত করে তোলে শিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের হল ফেস্ট দিয়ে শেষ করেছে সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালকে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা ফেস্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এছাড়া ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম ছাত্রদের সাথে কেক কাটেন। জুনিয়রদের সাথে সিনিয়ররাও উচ্ছ্বাসের সাথে ফেস্টে যোগ দেয়। নাচ-গানের আসর মাতিয়ে রাখে সবাইকে।
ফেস্টের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকালে সিনিয়র-জুনিয়র এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ হয়। বিকেলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন সংলগ্ন হেলিপ্যাডে ফ্ল্যাশ মব পারফরমেন্স করে ১ম বর্ষের একদল শিক্ষার্থী। সন্ধ্যায় আবার নাচের আসর বসে কে.আর মার্কেটে এবং রাতে গ্র্যান্ড ডিনার।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) ছিল হল ফেস্টের শেষ দিন। দিনটির শুরু হয় রঙ খেলার মাধ্যমে। বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন ছিলো ওইদিন বিকেলে। রাতে অনুষ্ঠিত হয় কালচারাল নাইট। সঙ্গীত, নাচ, কৌতুক আর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ র্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে শেষ হয় সোহরাওয়ার্দী হলের তিন দিনের জমকালো এই ফেস্ট।
এবারের ফেস্টের নাম ছিল ‘দ্য রয়াল আনভেইলিং’ এবং থিম ছিল একটি মমি, যা সামনের হুমকিময় জীবনের প্রতীকী। ফেস্ট মানেই আনন্দ, হাসি, ঘুরাঘুরি, সিনিয়র-জুনিয়রের মাঝে বন্ধন আরও মজবুত করা। দেশের আনাচে কানাচে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা বছর শেষে একত্র হয়ে স্মারক হয়ে উঠেছে এই হল ফেস্ট । ‘ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি, স্ট্রেন্থ ইন হারমনি’ ছিল ফেস্টের স্লোগান। শো-ডাউনটির থিম ছিল জুলাই বিপ্লব।
প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ছোট থেকে বড় হওয়ার জীবন প্রবাহে পাড়ি জমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কেউ চলে আসেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে; কেউবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে, আবার অনেকে চলে যান দূর প্রবাসে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিতে বাড়ির সাথে সম্পর্ক একরকম ছিন্ন করতেই হয়। মায়ের আদর, বাবার শাসন, ভাইবোনের খুনসুটির ইস্তফা দিয়ে এ যেনো এক অঘোষিত ত্যাগ।
মায়ের আঁচল ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ হয়ে ওঠে এই হলগুলোই। সেই প্রথম বর্ষ থেকেই অচেনা-অজানা সবাই হাসি, কান্না, আড্ডায় পাশে থাকেন একে অপরের। সবাই মিলে হয়ে উঠেন বৃহৎ সদস্যের ‘দ্বিতীয় পরিবার’।