নতুন খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের পরিচয়

ইসলামি খবর, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-10-18 15:48:35

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের নতুন খতিব মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক একজন দেশবরেণ্য ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ ও হাদিস বিশারদ।

জন্ম ২৯ আগস্ট, ১৯৬৯ সালে কুমিল্লায়। পিতা শামসুল হক ছিলেন একজন আলেম। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার খেড়িহর কওমি মাদ্রাসা দিয়ে।

পরে তিনি পাকিস্তানের করাচি বিননূরী টাউন জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া থেকে তাকমিল (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন। তারপর সেখানেই শায়খ আবদুর রশিদ নোমানির তত্ত্বাবধানে তিন বছর হাদিস শাস্ত্রে তাখাসসুস (উচ্চতর গবেষণা) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর দুবছর দারুল উলুম করাচিতে বর্তমান বিশ্বের ইসলামিক স্কলার মুফতি তকি ওসমানীর তত্ত্বাবধানে ফিকাহ শাস্ত্রে তাখাসসুস (উচ্চতর গবেষণা) ডিগ্রি অর্জন করেন।

তাখাসসুস শেষে সৌদি আরবের রিয়াদে শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর তত্ত্বাবধানে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর হাদিসশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার কাজ করেন।

১৯৯৬ সালে ঢাকায় উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা ও দাওয়া প্রতিষ্ঠান ‘মারকাজুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব এবং উলুমুল হাদিস অনুষদের প্রধান। ২০০৫ সাল থেকে মারকাজুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়ার মুখপত্র মাসিক আল-কাউসারের প্রকাশনা শুরু হয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত জনপ্রিয় এ ম্যাগাজিনের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। ২০১২ সালে গঠিত বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনেরও তিনি একজন সদস্য। তিনি তিন ছেলের জনক।

তিনি সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা, পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক সফর করেছেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি এরই মধ্যে বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। 

তার উল্লেখযোগ্য বই হলো- উম্মাহর ঐক্য: পথ ও পন্থা, ঈমান সবার আগে,  প্রচলিত ভুল, হাদিস ও সুন্নায় নামাজের পদ্ধতি, তারাবির রাকাত সংখ্যা ও ঈদের নামাজ, তাছাউফ ও তত্ত্ব বিশ্লেষণ, প্রচলিত জাল হাদিস, তালিবুল ইলমের পথ ও পাথেয়, আল-মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিসিশ শরিফ (আরবি)।

প্রাচীন ও আধুনিক হাজারো কিতাব তার নখদর্পণে। সময়ের মূল্যায়নের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত সচেতন। ঘড়ির কাঁটা ধরে চলেন তিনি। ছাত্রদেরও তিনি সেই শিক্ষাই দেন। সারা দেশের নির্বাচিত ছাত্ররা তার কাছে পড়াশোনার সুযোগ পান। তাদের তিনি সেভাবেই গড়ে তোলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, সজ্জন, অমায়িক ও সাদাসিধে প্রকৃতির। দ্বীন ও নীতি-আদর্শের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেন না। নিয়মের খেলাপ কিছু পছন্দ করেন না।

জ্ঞান, গবেষণা ও পাণ্ডিত্যে দেশের আলেম সমাজের কাছে ব্যাপক পরিচিত নাম মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক। তার ইলমি (জ্ঞানের) গভীরতার কথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন। ইসলামি জ্ঞানের এক সমৃদ্ধ ভাণ্ডার মনে করা হয় তাকে। এজন্য যেকোনো বিরোধপূর্ণ সমস্যার সমাধানে সবার দৃষ্টি থাকে তার ওপর। বর্তমান সময়ে মাসয়ালা-মাসায়েল ও ফতোয়ার ক্ষেত্রে কোথাও কোনো বিতর্ক দেখা দিলে সবাই তার শরণাপন্ন হন। বিশেষ করে ফিকাহ (ইসলামি আইন) ও হাদিসশাস্ত্রে তার গবেষণার ব্যাপ্তি শুধু দেশে নয়, উপমহাদেশসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ আলেমদের কাছে ইলমি ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে ইলমিবিষয়ক সভা-সেমিনারে প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মাওলানা আব্দুল মালেক।

Related News