স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির পথিকৃৎ, শীর্ষ আলেম, সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (রহ.)-এর ‘জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সকাল ১০টায় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিজ্ঞাপন
জমিয়তের প্রাণপুরুষ মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (রহ.)-এর স্মরণসভায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরী সভাপতিত্ব করবেন।
স্মরণসভায় দেশের শীর্ষস্থাীয় আলেম এবং জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন স্মরণসভা প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ওয়ালী উল্লাহ আরমান।
তিনি জানান, সারাদেশ থেকে জমিয়তের নেতাকর্মীরা স্মরণসভায় অংশ নেবেন। এ লক্ষে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছি।
মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ২০২১ সালের ৩১ মার্চ রাজধানীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি তিন ছেলে ও চার মেয়ে সন্তানের জনক।
মুফতি ওয়াক্কাস এরশাদ সরকারের ধর্ম ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। যশোর-৫ আসন থেকে তিনি কয়েক বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দেশের শীর্ষ আলেম হিসেবেও পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি, হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মুফতি ওয়াক্কাস ২০২০ সালের শেষ দিকে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তবে কওমি মাদরাসাভিত্তিক এই সংগঠনটির সর্বশেষ সম্মেলনে প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর অনুসারীদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে কমিটি গঠন করায় হেফাজত ছাড়েন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নিজের নির্বাচনী এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি।
দরূদের মাধ্যমে যেভাবে দয়াময় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ হয় তেমনি এর মাধ্যমে অর্জিত হয় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্য। হাদিসে নবীজী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার নৈকট্য লাভ করবে ওই ব্যক্তি, যে আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করে।’ -জামে তিরমিজি : ৪৮৪
নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা প্রকাশের একটা মাধ্যম হলো- অধিক পরিমাণে দরূদ পেশ করা। অতএব যে নবীজীকে মহব্বত করবেন, রহমতের নবী তাকে স্নেহের সঙ্গে গ্রহণ করে নেবেন- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে কেয়ামতের বিভীষিকাময় মুহূর্তে নবীজী (সা.) তাকে ভুলে বসবেন- তা কি ভাবা যায়! এ বিষয়টিই উল্লেখিত হয়েছে আলোচ্য হাদিসে।
কেয়ামতের দিন নবীজীর নৈকট্য লাভ করার একটি অর্থ হলো, কেয়ামতের দিন সে নবীজীর শাফায়াত লাভে ধন্য হবে- ইনশাআল্লাহ।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আমার প্রতি সকালে দশবার আর সন্ধ্যায় দশবার দরূদ পড়বে, কেয়ামতের দিন সে আমার শাফায়াত লাভ করবে। -আত তারগিব ওয়াততারহিব : ৯৮৭
আল্লামা মুনাভি (রহ.) বলেন, অর্থাৎ সে নবীজীর বিশেষ শাফায়াত লাভ করবে।
হাদিসে বলা হয়েছে, এ আমল পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়োজিত রয়েছে ফেরেশতাদের বিশেষ জামাত। আমরা যখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে দরূদ ও সালাম পেশ করি, তখন তা পৌঁছে যায় প্রিয় নবীজীর রওজা মোবারকে সোনার মদিনায়। যে যেখানে যত দূরেই অবস্থান করুক না কেন। বান্দার দরূদের হাদিয়া পৌঁছে দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নিযুক্ত রয়েছে ফেরেশতাদের বিশেষ জামাত।
নবীজী (সা.) বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে জমিনে বিচরণকারী ফেরেশতারা নিযুক্ত রয়েছেন। তারা আমার উম্মতের পক্ষ থেকে আমার নিকট সালাম পৌঁছায়। -সুনানে নাসাঈ : ১২৮২
বর্ণনায় আরও পাওয়া যায় যে, দায়িত্বশীল ফেরেশতা দরূদ পেশকারীর নাম ও পিতার নামসহ দরূদের হাদিয়া নবীজীর খেদমতে পেশ করেন। কেয়ামত পর্যন্ত সবার দরূদ নবীজীর খেদমতে এভাবে পেশ করা হতে থাকবে। -মুসনাদে বাযযার : ১৪২৫
তাই উম্মতের কর্তব্য হচ্ছে, দরূদের হাদিয়ার মাধ্যমে নবীজীর নিকট নিজেকে বেশি বেশি পেশ করা। এই উপলব্ধি নিয়ে যদি দরূদ পড়া হয়, তাহলে নবীজীর প্রতি ভালোবাসাও বাড়তে থাকবে- ইনশাআল্লাহ।
দরূদের আমল আল্লাহতায়ালার নিকট অত্যন্ত প্রিয়। দরূদের উসিলায় আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন। হজরত উমর (রা.) বলেন, আসমান জমিনের মাঝে দোয়া ঝুলন্ত থাকে। তুমি তোমার নবীর প্রতি দরূদ পেশ করা পর্যন্ত তা ওপরে ওঠে না। -জামে তিরমিজি : ৪৮৬
তাই দোয়া করার একটি আদব হচ্ছে, দোয়ার সূচনা-সমাপ্তি দরূদের মাধ্যমে করা।
বৌদ্ধধর্ম প্রধান দেশ থাইল্যান্ড সম্প্রতি মুসলিম বান্ধব হালাল খাবার ও পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাড়ার ফলে চার বছরের একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
থ্যাইল্যান্ডের ওয়ানিচা আমখাম একজন মুসলিম, গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংককের রাস্তায় রুটি বিক্রির একটি স্টল চালান। তার রুটির সঙ্গে কলা, চিজ, মুরগি থাকে এবং তিনি ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী হালাল খাবার গ্রাহকদের পরিবেশন করেন। এতে তার গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রচুর।
ওয়ানিচার প্রধান গ্রাহক হলেন ব্যাংককে কর্মরত মুসলিম কর্মচারী, ছাত্রছাত্রী এবং পর্যটক। তবে সম্প্রতি তিনি দেখেছেন অনেকেই হালাল খাবারের নামে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেয় যা অন্যায়।
একটি অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, একদিন তার পাশের একটি স্টলে ভাজা স্কুইড বিক্রি করা হচ্ছিল এবং সেখানে হালাল লেখা ছিল অথচ বিক্রেতা নিজে শূকরের মাংস খাচ্ছিলেন যা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ। তিনি বিক্রেতাকে প্রশ্ন করলে সে বলেন, এটা ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য।
দিন দিন বাড়ছে হালাল শিল্প থাইল্যান্ড আশা করছে যে, তার ক্রমবর্ধমান হালাল শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বেশ বড় ইতিবাচক উন্নতি এবং কোভিড-১৯ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার এর জন্য সহায়ক হবে। থ্যাইল্যান্ড প্রধানত পর্যটন শিল্প নির্ভর দেশ। তবে বিশেষজ্ঞরা আশা করেন যে, থাইল্যান্ডের হালাল শিল্প সফল করতে হলে দেশটির মুসলিম দেশের দর্শনার্থীদের আস্থা অর্জন করতে হবে। হালাল খাদ্যপণ্য এবং রাস্তার খাবারের সনদপত্রের অভাবে থাইল্যান্ডের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে, থাই সরকার একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে তারা তাদের হালাল পণ্য প্রচার করতে এবং শিল্পের মান উন্নত এবং পরিকল্পনা প্রনয়ণে জোর দেয়। তাতে একটি ‘হালাল ভ্যালি’ তৈরির প্রস্তাব রয়েছে, যা থ্যাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতে হতে পারে।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ আআত পিসানওয়ানিচ বলেছেন, থাইল্যান্ডের সুনাম খাদ্য, পানীয় এবং কৃষির জন্য। তবে মালয়েশিয়া বহু আগেই মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বেশ আস্থা অর্জন করেছে কিন্ত থাইল্যান্ডের জন্য একই ধরনের আস্থা তৈরি করা কঠিন।
হালাল সনদপত্র এবং রপ্তানিতে সাফল্য বর্তমানে থাইল্যান্ডে প্রায় ১৫ হাজার কোম্পানি, ১ লাখ ৬৬ হাজার পণ্য এবং ৩ হাজার ৫০০ রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেগুলো হালাল সনদপ্রাপ্ত। মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার পরে, থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম হালাল পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। ২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে, থাইল্যান্ড প্রায় ৪.১ বিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্য, যেমন চিনি, চাল এবং ফ্রোজেন মুরগির মাংস, মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহে রপ্তানি করেছে। থাইল্যান্ডের প্রায় ৯৩ শতাংশ জনসংখ্যা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও, দেশটি হালাল পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সুযোগ বাড়ছে।
অন্যান্য অমুসলিম দেশ যেমন ব্রাজিল, চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রও হালাল পণ্যের প্রধান রপ্তানিকারক এবং ওআইসিভুক্ত দেশগুলোতে ৮০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করে। ওআইসি রিপোর্ট পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ২০৬০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক মুসলিম জনসংখ্যা তিন বিলিয়ন হবে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ।
রাস্তার খাবারের বিক্রেতাদের চ্যালেঞ্জ থাই মুসলিম ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ফুয়াদ গুনসুন বলেছেন, থাইল্যান্ড ইতিমধ্যে হালাল পণ্যের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী দেশ। তবে রাস্তার খাবারের বিক্রেতারা প্রায়ই হালাল সনদপ্রাপ্তি সম্পর্কে তেমন জ্ঞান রাখেন না, যা মুসলিম পর্যটকদের কাছে দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাস্টারকার্ড-ক্রেসেন্টরেটিং গ্লোবাল মুসলিম ট্র্যাভেল ইনডেক্স অনুযায়ী, থাইল্যান্ড অমুসলিম দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় মুসলিম-বান্ধব গন্তব্যের মধ্যে অন্যতম। এটি সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান এবং হংকংয়ের পরে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ড মুসলিম পর্যটকদের জন্য হালাল খাবার সরবরাহ সহজলভ্য করছে।
যেমন ব্যাংককের প্রসিদ্ধ পাইকারি বাজার প্রাতুনামে, যেসব ব্যবসায়ী হালাল খাবার বিক্রি করে না, তাদের গ্রাহক সংখ্যা অর্ধেক। তবে ফুয়াদ গুনসুন সতর্ক করে বলেছেন, হালাল বলে ক্রেতাকে ভুল খাবার দেয়া ঠিক নয়; কারণ থাইল্যান্ড যখন শীর্ষ পর্যটন শিল্প হতে চায়।
হালাল মান উন্নত করার প্রচেষ্টা কিছু কোম্পানি ইতিমধ্যে হালাল মান মেনে চলার চেষ্টা করছে। সাহা ফার্মস একটি মুরগি রপ্তানিকারক কোম্পানি, হালাল সনদপ্রাপ্ত এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে প্রবেশ করেছে। সাহা ফার্মসের বিদেশি বিক্রয় ও বিপণনের প্রেসিডেন্ট জারুয়ান চোটিতাওয়ান বলেছেন, কোম্পানিটি মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দ্বারা তাদের পণ্য পরীক্ষিত হয়েছে। ২০২৪ সালে কোম্পানিটি তার হালাল ব্র্যান্ডিং আরও শক্তিশালী ও উন্নয়ন করতে চায়।
থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ইসলামিক কাউন্সিল পরিচালিত Halal.co.th নামক ওয়েবসাইটে হাজার হাজার হালাল সনদপ্রাপ্ত পণ্য তালিকাভুক্ত রয়েছে। যেমন স্ন্যাকস, পানীয় এবং অন্যান্য সামগ্রী। গুনসুন উল্লেখ করেছেন যে, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ার কাছ থেকে হালাল প্রসাধনী এবং পোশাকের মতো পণ্য উৎপাদনে সচেষ্ট হতে হবে। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া হালাল ব্যবসায়িক ব্যবস্থা থেকে থাইল্যান্ড অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
আআত পিসানওয়ানিচ বলেন, যে হালাল সনদপত্র পাওয়া যদিও একটু ব্যয়বহুল। যেমন ব্যাংককে একটি সনদের ফি ১০ হাজার বাথ থেকে শুরু এবং পর্যায়ক্রমে ফি বাড়ে। তবে হালাল খাবার দাবি করে মিথ্যা বললে ব্যাংককের আইনে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হয়। থাইল্যান্ড মুসলিম পর্যটকদের আস্থা অর্জন এবং হালাল কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
হজ প্যাকেজে বাংলাদেশের সব ভ্যাট-ট্যাক্স বাতিল এবং সাধারণ হজযাত্রীদের খরচ কমাতে বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেম ফিসহ সৌদি আরবের অন্যান্য খরচ কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো, হজের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে অপ্রয়োজনীয় খরচ ও রাষ্ট্রের টাকায় হজ করানো বন্ধ করা এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও হজ প্যাকেজ ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল নামের একটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাতকালে দেওয়া স্মারকলিপিতে এসব দাবির কথা তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির।
মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিলের স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের হজের খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের হজযাত্রীদের খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। ইন্দোনেশিয়া থেকে একজনকে হজে যেতে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা খরচ করতে হবে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। বাকিটা সরকারি ‘হজ ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ তহবিল থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ায় যেসব পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম, সেসব পরিবারের সদস্যদের জন্য হজের খরচ ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা।
মাসিক আয় বেশি হলে দিতে হবে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। দেশটিতে হজের জন্য সরকার বড় অংকের ভর্তুকি দিয়ে থাকে। পাকিস্তানে গত বছরের তুলনায় হজের খরচ ৩৬.৫৯ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ লাখ ৭০ হাজার পাকিস্তানি রূপি যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতে ২০২১ সালে এই খরচ ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় চার লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হজ প্যাকেজের খরচ ৫০ হাজার টাকা কমানো হবে। অর্থাৎ সেদেশে হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে যারা হজে যাবেন তাদের খরচ হবে চার লাখ টাকার কম। সিঙ্গাপুরে হজের খরচ গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার ডলার বেড়েছে। সেখানে সবচেয়ে কম প্যাকেজের জন্য দিতে হবে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা।
স্মারকলিপিতে কোরবানির চামড়া ১২০ টাকা করার দাবিসহ সরকারিভাবে হজ গাইড নিয়োগে কওমি আলেমদের প্রতি বৈষম্য নিরসন ও পবিত্র রমজান মাসে মজুদদারি, কালোবাজারি বন্ধ ও নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে গত বছর কোরবানি ছাড়া বেসরকারি ‘সাধারণ’ হজ প্যাকেজের সর্বনিন্ম ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তার সঙ্গে কোরবানি এবং আনুষঙ্গিক খরচ ২ লাখ টাকা লাগে। এতে একজন হজযাত্রীর খরচ কমপক্ষে ৮ লাখ টাকা পড়ে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, হজের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নিয়ে মুসলমানদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। আমরা মনে করি, যৌক্তিক ভাড়া ৭০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিত। পৃথিবীর কোনো দেশ হজ মৌসুমে উড়োজাহাজ ভাড়া বাড়ায় না। বরং আরো ছাড় দেয়। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ, এখানে হজ মৌসুম এলেই উড়োজাহাজ ভাড়া বাড়ানো হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে শিক্ষার হার সবচেয়ে বেশি যে দেশগুলোতে তার মধ্যে ক্যামেরুন অন্যতম। সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি কোরআন শিক্ষায়ও এ দেশের মুসলমানদের যথেষ্ট আগ্রহ।
দেশটির এক সাধারণ কিশোরী আসমা। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি এলাকায় পরিবাবের সঙ্গে তার বসবাস। সে এখন পবিত্র কোরআন হেফজ করছে।
ক্যামেরুনে আসমা ও তার সমবয়সী কিশোর-কিশোরীরা খুবই আকর্ষণীয় ও অভিনব পদ্ধতিতে কোরআনে কারিম হেফজ (মুখস্থ) করে। তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে মারুলা কাঠের স্লেট বা তক্তা থাকে। আকৃতি ও মান অনুযায়ী এসব স্লেটের দাম নির্ধারিত হয়। শিক্ষার্থী পবিত্র কোরআনের যে সুরা বা অংশটি মুখস্থ করতে চায় তাকে স্লেটে সে অংশ ও সুরাটি লিখে দেওয়া হয় এবং স্লেট দেখে দেখে তাকে মুখস্থ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। স্লেটে লিখতে যে কালি ব্যবহৃত হয় তা পানি, লোবান (আগরবাতি তৈরির বিশেষ দ্রব্য) ও কাঠকয়লা দিয়ে তৈরি। লেখা হয় সাদা পালকের কাঠি দিয়ে।
হাতে লেখা সুরাটি যখন শিক্ষার্থীর মুখস্থ হয়ে যায়, তখন এটি শিক্ষককে শোনাতে হয়। পড়া শুনে শিক্ষক খুশি হলে স্লেটটি পানি দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে আবার নতুন সুরা ও অংশ লেখার অনুমতি পায় শিক্ষার্থী।
আসমা ও তার সঙ্গীরা সাধারণত এভাবেই পবিত্র কোরআনে কারিম হেফজ সম্পন্ন করে। স্লেট ধোওয়ায় যে পানি ব্যবহার করা হয়, ক্যামেরুনে সেই পানি খুব মূল্যবান। বিশেষ পাত্রে সংরক্ষণ করে বিভিন্ন কাজে বরকতস্বরূপ তা ব্যবহার করে ক্যামেরুনবাসী। বর্তমানে এখানে কোরআনের সাধারণ প্রতিলিপির ব্যবহার শুরু হলেও প্রাচীন এই পদ্ধতিটি এখনো অনেকে আঁকড়ে রেখেছে।
ক্যামেরুন মধ্য আফ্রিকার এটি দেশ। এর পশ্চিমে নাইজেরিয়া, উত্তর-পূর্বে চাদ প্রজাতন্ত্র, পূর্বে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও ইকুয়াটরিয়াল গিনি, গ্যাবন, দক্ষিণে কঙ্গো প্রজাতন্ত্র। ক্যামেরুন দুই শতাধিক ভাষাভাষী গোষ্ঠীর বাসস্থান।
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দুটি ঔপনিবেশিক অঞ্চল একত্র হয়ে ১৯৬১ সালে ক্যামেরুন গঠিত হয়। এখনো শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে আধুনিক ক্যামেরুন।
দেশটির পুরো নাম ক্যামেরুন প্রজাতন্ত্র। রাজধানী ইয়াউন্দে। সরকারি ভাষা ফরাসি, ইংরেজি, বিভিন্ন ও জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা। প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠী খ্রিস্টান, মুসলমান, আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম।
ইউরোপিয়ানদের মধ্যে সর্বপ্রথম পর্তুগিজরা ১৪৭২ খ্রিস্টাব্দে ক্যামেরুন আসে। এর আগে ক্যামেরুন সম্পর্কে খুব কমই জানা ছিল ইউরোপের মানুষের। দেশটি ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ওই দিনটি তারা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে। কফি, কোকো, তুলা, কলা ও তৈলবীজ উৎপাদনে ক্যামেরুন বিখ্যাত।
ক্যামেরুন ১০টি প্রদেশে বিভক্ত। এটি একটি গরিব রাষ্ট্র। দেশের ৩০ শতাংশ অধিবাসীকে দৈনিক ১.২৫ ডলারের কম অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
ক্যামেরুনের আয়তন চার লাখ ৭৫ হাজার ৪৪২ বর্গকিলোমিটার বা এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৯ বর্গমাইল। প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার এই দেশ আয়তন বিবেচনায় ৫৬তম।
১৮০০ শতকে ক্যামেরুনে মুসলিম বণিক ও সুফি-ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটে। বর্তমানে ক্যামেরুনের প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ সুফি মতবাদে বিশ্বাসী।
ক্যামেরুনে মুসলমানদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। আল মুসলিম ডটনেটের তথ্য মতে, দেশটিতে মুসলিম সংখ্যা মোট অধিবাসীর ২৪ শতাংশ। সিআইএর দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য মতে, ক্যামেরুনে মুসলিম জনসংখ্যা মোট অধিবাসীর ২০.৯ শতাংশ।
তবে অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায় যে, ক্যামেরুনের জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম। সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বরাজনীতিতে মুসলমানরা হাজার বছরের বেশি সময় অধিষ্ঠিত থাকলেও বিগত কয়েক শ বছর থেকে তারা পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্রের জালে আটকে রয়েছে। এখন তারা পৃথিবীর অন্যতম নির্যাতিত ও বিভক্ত জাতি।
ক্যামেরুনের মুসলিম শিশুদের মধ্যে কোরআনচর্চার বেশ আগ্রহ দেখা যায়। দেশটির ক্যামেরুনিয়ান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার বিধান রয়েছে এবং সরকার সাধারণত এই অধিকারকে সম্মান করে।