নবীজি (সা.)-এর দুর্দিনের সঙ্গিনী

মক্কা, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-12-25 21:02:10

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.)। তিনি আমৃত্যু নবী কারিম (সা.)-এর সহযোদ্ধা ছিলেন, ভালো বন্ধু ছিলেন, বিপদে সাহসদাতা ছিলেন। তিনি নবী কারিম (সা.)-এর কাজে অনুপ্রেরণা দিতেন। তার জীবদ্দশায় নবীজি (সা.) কাউকে বিয়ে করেননি। তিনি ইন্তেকাল করার পরও নবীজি তাকে স্মরণ করতেন। তার আত্মীয়-স্বজনকে ভালোবাসতেন। এমনকি তার বান্ধবীদের জন্যও উপঢৌকন পাঠাতেন। তার প্রশংসায় নবীজি আনন্দবোধ করতেন। নবীজি (সা.) তার এই দুর্দিনের সঙ্গিনীকে ভীষণ ভালোবাসতেন।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি খাদিজা ছাড়া নবীজির সহধর্মিণীদের আর কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত হইনি, অথচ আমার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটেনি। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বকরি জবাই করতেন তখন বলতেন, এর গোশত খাদিজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদা আমি তাকে রাগিয়ে দিলাম এবং বললাম, খাদিজাকে এতই ভালোবাসেন? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, ‘তার ভালোবাসা আমাকে রিজিক হিসেবে দেওয়া হয়েছে।’ -সহিহ মুসলিম: ৬১৭২

তিনি স্ত্রী হিসেবে নবীজির কতটা আপন ছিলেন, হাদিসের আলোকে তার কিছু চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো-

প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী: হজরত খাদিজা (রা.) প্রথম নারী, যিনি নবীজির দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, ‘যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করি সেদিন [এর আগে খাদিজা (রা.) ও আবু বকর (রা.) ব্যতীত] অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। আমি সাত দিন এমনিভাবে অতিবাহিত করেছি যে আমি ইসলাম গ্রহণে তৃতীয়জন ছিলাম।’ -সহিহ বোখারি : ৩৭২৭

নিঃস্বার্থ বন্ধু: হজরত খাদিজা (রা.) নবীজি (সা.)-এর শুধু স্ত্রীই ছিলেন না, ছিলেন ভালো বন্ধুও। হেরা গুহায় যখন নবীজি (সা.) ধ্যানে মগ্ন থাকতেন, তখন এই মহীয়সী নারী বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে তার কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন। -সহিহ বোখারি : ৩

যাদের হেরা গুহা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে, তারা জানে সেখানে পৌঁছা কতটা দুঃসাধ্য ব্যাপার।

সাহসদাতা ও সান্ত্বনাদাতা নারী: হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হজরত জিবরাইল (আ.)-কে প্রথম দেখে ভয় পেয়েছিলেন এবং খাদিজা (রা.)-কে এসে বলছিলেন, খাদিজা, আমার কী হলো? আমি আমার নিজের ওপর আশঙ্কা করছি। হজরত খাদিজা (রা.) বলেন, না, কখনো তা হবে না। বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোঁজখবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, অতিথির সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন। -সহিহ মুসলিম : ২৯৩

স্বামীকে সমর্থন : মুসনাদ ইবন হাম্বলের বর্ণনায় দেখা যায়, হজরত খাদিজা (রা.)-এর এক প্রতিবেশিনী এক রাতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে বলতে শুনেছিলেন, হে খাদিজা! আল্লাহর কসম, আমি কখনো লাত আর উজ্জার পূজা করব না, আল্লাহর কসম, কখনোই তাদের অর্চনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তখন হজরত খাদিজা (রা.) বললেন, দূর হোক লাত আর উজ্জা। -মুসনাদে আহমদ : ১৭৪৮৭

হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.) নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি বিবি খাদিজা নামে সমধিক পরিচিত। যখন তার বয়স ৪০ ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স ২৫, তখন তাদের বিয়ে হয়।

২৫ বছরকাল তিনি নবী কারিম (সা.)-এর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন যাপন করেন। একজন ছাড়া নবী কারিম (সা.)-এর সব সন্তানসন্ততি তারই গর্ভজাত।

হজরত খাদিজা (রা.) তার চারিত্রিক গুণাবলির জন্য ‘তাহিরা’ (পবিত্র) নামে সুপরিচিত ছিলেন। বিয়ের আগে তিনি ছিলেন মক্কার এক ধনাঢ্য বিধবা। সিরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যার বাণিজ্য চলত। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর গুণাবলির কথা শুনে তিনি নিজের ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করেন।

নবী কারিম (সা.)-এর সততা, বিশ্বস্ততা, ভদ্রতা, পরোপকার-প্রবৃত্তি ও অন্যান্য চারিত্রিক গুণে মুগ্ধ হয়ে হজরত খাদিজা (রা.) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গৃহীত হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় ইসলাম প্রচার শুরু করলে সবাই তার সঙ্গে শত্রুতা শুরু করে এবং তিনি কোরাইশদের অমানুষিক অত্যাচারের শিকার হন। নবুওয়তের সপ্তম বছরে মক্কার কোরাইশরা নবী কারিম (সা.) ও তার পরিবার-পরিজনকে একঘরে করে। তিন বছর পর্যন্ত বর্ণনাতীত কষ্ট সহ্য করতে হয় তাদের। এ সময়টা হজরত খাদিজা (রা.) তার পাশে থেকে সাহস দেন ও সর্ব উপায়ে তাকে সাহায্য করেন।

হজরত খাদিজা (রা.) তার অগাধ ধনসম্পদ ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যয় করেন। নবুওয়তের দশম বছরে তার মৃত্যু হয়।

Related News