মানুষ কষ্ট দেয়, সুখ ও স্বস্তি দেন আল্লাহ

প্রবন্ধ, ইসলাম

মাওলানা আল আমিন, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2025-01-11 17:22:17

পবিত্র কোরআন-হাদিসে ঈমানের বহুমুখী কল্যাণ ও সুফলের বিবরণ এসেছে। বলা হয়েছে, ঈমান মুমিনের ইহকালীন ও পরকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ঈমানের স্তর অনুসারে আল্লাহতায়ালা মুমিনের প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেন। ঈমানের বদৌলতে আল্লাহতায়ালা বান্দার পাপ মার্জনা করবেন। মহান আল্লাহ মুমিনকে জান্নাত দান করবেন। পরকালে ঈমান জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের কারণ হবে।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদের জন্যই এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত।’ -সুরা আনআম : ৮২

আর হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি আমার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক না করা অবস্থায় পৃথিবীপূর্ণ গুনাহ নিয়ে আমার সঙ্গে মিলিত হলেও আমি অনুরূপ পরিমাণ ক্ষমাসহ তার সঙ্গে মিলিত হব। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮২১

অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার অন্তরে একটি শস্যদানা পরিমাণ ঈমান আছে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। -সহিহ বোখারি : ৬৫৬০

বর্ণিত কোরআনে কারিমের আয়াত ও হাদিসের শিক্ষা হলো, পেছনে ফিরে দেখুন এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানান। সামনে তাকান এবং তাকে বিশ্বাস করুন। এটি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সর্বোত্তম উপায়। আপনি হয়তো জানেন না সামনে কি আছে কিন্তু আপনি এর রচয়িতাকে জানেন। অতএব তাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করুন এবং দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যান।

যখন আপনার ওপর খারাপ কিছু এবং অবিচার আপতিত হয়, তখন পরাভুত হবেন না। ধৈর্য ধারণ করুন। জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো কিছুই এলোমেলো নয়। সর্বশক্তিমান সবকিছু জানেন এবং দেখেন। তিনি অবশ্যই এসব বিষয়ে যত্ন নেবেন।

আপনি যখন লোকদের কাছ থেকে খুব অল্প প্রত্যাশা করেন অথবা কিছুই আশা করেন না, তখন আপনি সহজে হতাশ হবেন না। অন্যের কাছ থেকে আপনি যত বেশি প্রত্যাশা করবেন ও চাহিদা রাখবেন ততই আপনি হতাশ হবেন। অন্যকে দান ও সহায়তা করার দিকেই মনোনিবেশ করুন। এটি হবে অধিকতর সন্তুষ্টির এক অভিজ্ঞতা। সর্বশক্তিমান আপনাকে এর প্রচুর প্রতিদান দেবেন।

এই দিন ও এই যুগে কে সত্যিকারের বন্ধু কে আর নকল কে তা বলা কঠিন। এমনকি সবচেয়ে ‘ভালো’ মানুষও আপনাকে বোকা বানাতে পারেন। তাই আপনি বাস্তব জীবনের মধ্য দিয়ে যান এই আশায় যে, লোকেরা আন্তরিক ও প্রকৃত হবেন। তবে হতাশ হওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকুন। এটা জীবনেরই অংশ। মানুষ আপনাকে কষ্ট দেবে। শুধুমাত্র সর্বশক্তিমানই আপনাকে সুস্থ ও স্বস্তিতে রাখতে পারেন।

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, আপনার নিজের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে খারাপ বা দোষী মনে করবেন না নিজেকে। এটা মোটেই স্বার্থপরতার কাজ নয়। আসলে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি আপনাকে আরও ইতিবাচক জীবনযাপনে সহায়তা করবে। আপনাকে নিজের যত্ন নিতে হবে, নয়তো অন্যকে দেওয়ার মতো কিছুই আপনার হাতে থাকবে না। মনে রাখবেন, এই প্রচেষ্টায় আপনি বেশ মূল্যবান।

যারা আপনাকে ভিলেনের মতো দেখানোর জন্য বাইরে রয়েছেন তাদের কথা মনে রাখুন। তারা কখনই পুরো ঘটনাটি বলে না। কেবল সেই অংশটি চয়ন করে যা আপনাকে খারাপ দেখায়। তাদের একটি এজেন্ডা রয়েছে এবং তারা এর শেষ পর্যন্ত যাবে। তাদের ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা বন্ধ করুন। তাদের নাটকের অংশ হবেন না। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে মিথ্যা তা সর্বশক্তিমান প্রমাণ করবেন।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। এটি হতে পারে, আমাদের মুখের মিথ্যার আকারে, অথবা আমাদের পেছনে ক্ষতিকারক কথা ও কাজে, অথবা হতে পারে লোকদের খারাপ উদ্দেশ্যের আকারে।

সবসময় দোয়া করুন, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য যা আদেশ করেছেন তা নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট করুন। আপনি সবকিছুর ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণে আছেন তা জেনে আমরা যেন ভালোভাবে ধৈর্যধারণ করতে পারি। আমাদের অব্যাহতভাবে মনে করিয়ে দিন যে এই পৃথিবীতে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী হয় না। আমাদের সেরা আচরণের দিকে পরিচালিত করুন, আমাদের পাপসমূহকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের অন্তরকে পবিত্র করুন।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তিনি তাদের পূর্ণ পুরস্কার দান করবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন।’ -সুরা আন নিসা : ১৭৩

Related News