পবিত্র হজপালনের অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েসি প্রদেশের মুসলমানদের। ওই প্রদেশের কোনো মুসলমান এ বছর হজের নিয়ত করলে, কাঙ্খিত কোটা পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ৪৮ বছর। শুধু সুলাওয়েসি নয় বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ার ৩৩টি প্রদেশের চিত্র একই রকম।
সুলাওয়েসি প্রদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক অফিসের প্রধান আলী ইয়াফিদ স্থানীয় বলেন, ‘তার এলাকার হজযাত্রীদের অপেক্ষার সময় ৪৮ বছর পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি দেশটির ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী নাসারউদ্দিন উমরকে বিষয়টি জানিয়েছেন, অনেক চাওয়ার পরও দক্ষিণ সুলাওয়েসির জন্য অতিরিক্ত কোনো হজ কোটা মেলেনি।’
‘এ বছর দক্ষিণ সুলাওয়েসি অতিরিক্ত হজকোটা পায়নি, যদিও আমরা অতিরিক্ত কোটা পাওয়ার আশা করেছিলাম-’ আরেক হজ কর্মকর্তা মাকাসারে আলী বলেন।
ইনন্দোনেশিয়ার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে দক্ষিণ সুলাওয়েসির হজ কোটা ৭ হাজার ৭৭২ জন। এ কোটা গত বছরের তুলনায় বাড়েনি। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত দক্ষিণ সুলাওয়েসির সম্ভাব্য হজযাত্রীদের অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৪০ জন।
ইন্দোনেশিয়া সৌদি আরব থেকে প্রাপ্ত হজকোটা বিভিন্ন প্রদেশে ভাগ করে দেয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশটিতে হজযাত্রার জন্য গড় অপেক্ষার সময়কাল ৩৪ বছরে পৌঁছেছে।
বিদেশি হজযাত্রীদের মধ্যে সংখ্যার বিচারে ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজপালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দেশটি ২ লাখ ২১ হাজার জনের হজকোটা পেয়েছে। তাতেও সন্তুষ্ট নয় দেশটি। ইতোমধ্যে অপেক্ষমাণ হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ লাখে। সৌদি আরব থেকে প্রাপ্ত কোটা অনুযায়ী যাদের হজ করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৫ বছরে মতো।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম জাকার্তা গ্লোব এক প্রতিবেদনে সরকারি কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, প্রতি বছর এ অপেক্ষার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অপেক্ষমাণ তালিকা ৫৫ লাখ হলেও কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থার তথ্য অনুসারে কমপক্ষে ১ কোটি ৮০ লাখ মুসলমান শারীরিক ও আর্থিকভাবে হজ পালনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
দেশটির হজ তহবিল পরিচালনা সংস্থা (বিপিএইচকে) প্রধান ফজলুল ইমানশাহ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এই সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হজপালন করতে ইন্দোনেশীয় মুসলমানদের সহায়তা করতে হবে।’
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী এ সমস্যার জন্য সৌদি আরবের পবিত্র শহরগুলোর প্রধান প্রধান স্থানের সীমিত ধারণক্ষমতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি মিনা, আরাফাত, কাবা এবং বিমানবন্দরগুলোতে পর্যাপ্ত ধারণ ক্ষমতা থাকতো, তাহলে আমাদের আর এ বিষয়ে আলোচনার দরকার হতো না।’
ইন্দোনেশিয়া সরকার এর আগে সৌদি আরবের কাছে হজকোটা বাড়ানোর জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি।
দেশটিতে হজের জন্য এত লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয় বিধায় অনেকে ফিলিপাইন ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে হজপালনের বিকল্প পথ খুঁজে থাকেন।