পৃথিবীর সর্বত্র উচ্চারিত ধ্বনি ‘আল্লাহু আকবার’

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মাওলানা আল আমিন, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2025-01-23 21:12:24

আল্লাহু আকবার (اللَّهُ أَكْبَرُ)। পৃথিবীর সর্বত্র উচ্চারিত ধ্বনি। এটি ইবাদত-বন্দেগিতে, শক্তি সঞ্চারে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। ইসলামি সংস্কৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতীক। এ ধ্বনি উচ্চারণের মাধ্যমে আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়।

পবিত্র কোরআন-হাদিসে আল্লাহু আকবার ধ্বনির বহুল ব্যবহার আছে। আল্লাহু আকবার ধ্বনি কাফের, মুশরেক ও জালেমের বুকে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আহবান আজান শুরু হয়েছে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে। আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করা হয়। বহুত্ববাদ, ত্রিত্ববাদ, স্রষ্টার অংশিদারিত্বের বিশ্বাস ও শিরকি আকিদা থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করে। এটা সকল বিশ্বাসী মুসলমানের পরিভাষা, যা হৃদয়ে শক্তি সঞ্চার করে এবং ঈমান বৃদ্ধি করে। বাতিলের মনে শংকা সৃষ্টি করে।

হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর অন্যতম সহচর হজরত নাসির উদ্দিন (রহ.)-এর কণ্ঠে উচ্চারিত আল্লাহু আকবার আজানের ধ্বনিতে হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের প্রাসাদ ভেঙে খান খান হয়েছিল। সিলেটের জমিনে তওহিদ ও রেসালাতের আলো জ্বলে উঠেছিল। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষী ও সেক্যুলার রাজনীতির ধারক-বাহকরা আল্লাহু আকবার ধ্বনিকে সহ্য করতে পারে না। এ ধ্বনি তাদের মানসপটে হিংসার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নিছক মানবরচিত মতবাদ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা আল্লাহু আকবারের মহিমা ভুলে গিয়েছে। এই অন্ধ ও তালাবদ্ধ হৃদয় তাদের অন্ধকারের অতল গহবরে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিটি মুসলিম কিংবা অমুসলিম দেশেই আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করে বিশ্বাসী মুসলমানরা। পৃথিবীর সব দেশের মসজিদগুলোতে ৫ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজান দিতে হয়। আর আজানের শ্রেষ্ঠত্বই হচ্ছে আল্লাহু আকবার ধ্বনি। পৃথিবীতে যতদিন মুসলিম থাকবে, মসজিদ থাকবে ততোদিনই আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারিত হবে।

হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানা থেকে ইসলামের সব যুদ্ধে আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আল্লাহু আকবার বলেই যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছেন। দুনিয়ার দিকে দিকে ইসলামের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি হয়েছে। প্রতিটি ওয়াক্তের নামাজে তাকবিরে তাহরিমা থেকে শুরু করে রুকু, সেজদায় আল্লাহু আকবার বলতে হয়।

এককথায়, মুসলামানদের জীবনের পরতে পরতে এ নামের মহিমা ও ধ্বনি বহমান। আল্লাহু আকবার ধ্বনিতেই আবার বিজয়ী হবে মুসলমান। পৃথিবীতে বইবে আবার শান্তি ও সুখের ধারা। নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার।

মহান আল্লাহর তাসবিহ বা প্রশংসা বাক্যের মধ্য সবচেয়ে মর্যাদাবান তাসবিহ আল্লাহু আকবার। মর্যাদাসম্পন্ন জিকির ও তাকবিরের মধ্যেও এটি সবচেয়ে বড়। এ তাকবিরের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর একান্ত কাছাকাছি হয়। এটি ইসলামের এক বিপ্লবী স্লোগানও বটে।

বিশ্ববিখ্যাত স্কলার শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসায়মিন (রহ.) আল্লাহু আকবার-এর চমৎকার অর্থ ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আল্লাহু আকবার অর্থ হচ্ছে- হাকিকত এবং আক্ষরিক অর্থে আল্লাহতায়ালা সব কিছুর চেয়ে বড় এবং মহান। তিনি ইলম (জ্ঞান), কুদরত (ক্ষমতা), সামি (শোনা), বাসির (দেখা) এবং কর্তৃত্বে সব কিছুর চেয়ে বড়। এমনকি আল্লাহতায়ালা সত্ত্বাগত দিক থেকেও সবচেয়ে বড়। কিন্তু তিনি কত বড়? সাত আসমান এবং সাত জমিন পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার হাতের তালুতে কীসের মতো?

মহান আল্লাহর কাছে এসব (এতোই ছোট); যেন আমাদের কারো হাতের তালুতে একটা সরিষার দানার মতো! কেননা আল্লাহতায়ালা নিজেই বলেন, ‘ওরা আল্লাহর যথোচিত কদর করেনি। কেয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তার হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তার ডান হাতে গুটানো। পবিত্র ও মহান তিনি, ওরা যাকে অংশী করে, তিনি তার উর্ধ্বে।’ -সুরা যুমার : ৬৭

কোরআনে কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দপ্তর; যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য; আমি এটা পালন করবই।’ -সুরা আম্বিয়া : ১০৪

লেখকের লেখার পর যেমন কাগজপত্র গুটিয়ে নেওয়া সহজ, তেমনি সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর জন্য আকাশ সুবিস্তৃত হওয়ার সত্ত্বেও তা নিজের হাতের মধ্যে গুটিয়ে নেওয়া কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। তিনি মহান আল্লাহ- ‘আল্লাহু আকবার।’

তাই শায়খ উসাইমিন বলেন, আল্লাহ মহান। আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে বড়, যেমন- তার আসমা (সুন্দরতম নামসমূহ) ও সিফাত (সুমহান গুণাবলীতে); একইভাবে তিনি নিজেও সবকিছুর চেয়ে বড়। আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্বের প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবন করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) আরশ সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, আরশ কত বড় সেটা মানুষের পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। তাহলে চিন্তা করে দেখুন, আরশের সৃষ্টিকর্তা (আল্লাহ) কত বড় সেটা বুঝা মানুষের জন্য কতটা সম্ভব!

সুতরাং তুমি যখন বলো- আল্লাহু আকবার তখন তুমি এটা অনুভব করবে যে, আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে বড়। তিনি ইলম, কুদরত, হেকমত, সমস্ত কাজ পরিচালনার দিক থেকে সবচেয়ে মহান, অনুরূপভাবে তিনি নিজে সমস্ত কিছুর চেয়ে বড়।

Related News