‘নারী-শিশু পাচারের অন্যতম কারণ বাল্যবিবাহ’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-09 20:37:01

নারী ও শিশু পাচারের পিছনে বাল্যবিবাহ অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ফলে যার যার অবস্থান থেকে এগুলো রুখে দাঁড়ানো আবশ্যক বলে জানান তিনি।

বুধবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘উইমেন্স এম্পাওয়ারমেন্ট: উইমেন্স ভয়েস অ্যান্ড লিডারশীপ বাংলাদেশ প্রকল্পের সাফল্যের গল্প’ শিরোনামে এক সম্মেলনে এসব বলেন তিনি।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পের ফলাফলগুলো তুলে ধরা হয় এই সম্মেলনে। এ সময় সন্মেলনে উপস্থিত হয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নারী, মেয়ে, হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা তাদের জীবনের অণুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো তুলে ধরেন এবং জীবনের সকল প্রতিকূলতা, আকাঙ্খা এবং অর্জনের গল্প শোনান।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অংশগ্রহণকারীরা তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পগুলো প্রেরণাদায়ক এবং শক্তিশালী।

এসময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা-পরিচয়ের নারীদেরকে সামনে আনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যদি মানুষের বিভিন্নতা অনুযায়ী সমস্যাগুলো সমাধান না করে শুধুমাত্র একক উপায়ে নারীদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হয় তবে তা বৈষম্য দূর করতে যথেষ্ট নয়। নারী শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে স্কুলগুলোতে সুষম টিফিন নিশ্চিত করা দরকার, যা বাস্তবায়নে অন্তর্বতীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করছি।

বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের বিরোধীতা করে তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নারী ও শিশু পাচারের পিছনে অন্যতম কারণ। যার যার অবস্থান থেকে এগুলো রুখে দাঁড়ানো আবশ্যক।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. সাইদুর রহমান বলেন, নারী ক্ষমতায়নে পুরুষদের এগিয়ে আসাতে হবে। বাল্যবিবাহ উচ্চশিক্ষায় নারীদের সংখ্যা কমে যাওয়াই প্রধান কারণ। বাল্যবিবাহ রোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নারী এবং পুরুষ একে অপরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘অংশগ্রহণ আর অংশীদারিত্ব এক নয়। বর্তমানে অনেক অংশগ্রহণকারী নারী আছেন। কিন্তু তাদের অংশীদারিত্ব কতটুকু? আমাদেরকে সমতা এবং ন্যায্যতা আলাদাভাবে বুঝতে হবে। যদি এটি স্পষ্ট না হয়, নারী ক্ষমতায়ন সঠিকভাবে বোঝা এবং নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশে অবস্থিত কানাডা দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স, ডেবরা বয়েস তার বক্তব্যে এই নারী নেত্রীদের ভুমিকা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলার মাধ্যমেই নারীর বিরুদ্ধে বৈষমের বিরোধিতা করতে হবে যা আমরা সাম্প্রতিক সময় থেকে শিক্ষা নিতে পারি। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়তে চাইলে একসাথে আওয়াজ তোলার বিকল্প নেই।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম নারীবাদকে সংজ্ঞায়িত করে বলেন, ‘আমার কাছে মানুষের সমঅধিকারে প্রতি সকলের বিশ্বাসই হল নারীবাদ। পুরুষকে আমাদের এই জেন্ডার সমতায়নের যাত্রায় সহযাত্রী হিসাবে গণ্য করতে হবে।’

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের ২০টি জেলায় বাংলাদেশে উইমেন্স ভয়েস অ্যান্ড লিডারশীপ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার মধ্যে স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠনগুলিকে অনুদান প্রদান এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাতে তারা তাদের এলাকার প্রান্তিক এবং ঝুঁকির সম্মুখীন নারী ও মেয়েদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে।

এছাড়া স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠন সম্প্রদায় ভিত্তিক সংগঠনগুলিকে বিশেষত যারা প্রান্তিক ও দুর্বল- তাদের অধিকার প্রয়োগে সহায়তা করার ক্ষমতা জোরদার করছে।

Related News