ফ্ল্যাটের মালিকানা দ্বন্দ্বে দীপ্ত টিভির কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-10 18:28:58

রাজধানীর হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্ট আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটের মালিকানা দ্বন্দ্বের জেরে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে একটি ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে।

নিহতের বাবা সুলতান আহমেদের অভিযোগ, তিনজনের মালিকাধীন জমি নিয়ে প্লেজেন প্রপার্টি লিমিটেড নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানি একটি ভবন নির্মাণ করে। ৯ তলা ভবনের ২৭টি ফ্ল্যাট। যার মধ্যে জমির প্রত্যেক মালিক পেয়েছেন সাড়ে চারটি করে ফ্ল্যাট। অন্য দুই মালিকের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিলেও তার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন নানা চেষ্টার পর দুটি ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও বাকি আড়াইটি ফ্ল্যাট বুঝে পাননি।

সম্প্রতি ডেভেলপার কোম্পানি দখলে থাকা ফ্ল্যাটে নির্মাণ কাজ শুরু করে। তাই বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বাধা দিতে যান সুলতান ও তার ছেলে তানজিল। কাজে বাধা দেওয়ায় ডেভেলপার কোম্পানির লোকজন তানজিলের ওপর হামলা চালায়। এতে তানজিলসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরবর্তীতে তানজিলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ভুক্তভোগী সুলতান আহমেদ বলেন, ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে ফ্ল্যাট দখলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মামুনও জড়িত। তারা সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফ্ল্যাট ও জমি মালিকদের জিম্মি করে জোরপূর্বক ফ্ল্যাট দখল করে।

তিনি আরও বলেন, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান মিয়া। এই সোলায়মান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে চাকরি করতেন। তার সহযোগিতায় মামুন বিভিন্ন সময়ে আমার কাজ বন্ধ রেখেছে। অথচ অপর দুই জমির মালিকের ফ্ল্যাট ২০২২ সালের জুন মাসেই বুঝিয়ে দিয়েছে।

পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে সুলতান আহমেদ আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। ‍কিন্তু পুলিশ আমাদের জিডি নিতো না। এমন কি পরশু রাতেও হামলার আশঙ্কায় থানায় গিয়েছি। থানার ওসি আমার অভিযোগ রাখেনি। বলেছে হামলা হলে তাদের জানাতে। আজ হামলার কথা জানালে ঘটনার প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ পাঠিয়েছে। পুলিশ গিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির লোকদের সঙ্গে কথা বলতেছিলো। অথচ তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমার ছেলেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিতে চাইলে সেখানেও তারা দেরি করায়। হামলাকারীরা আমার ছেলের গলা চেপে ধরেছে। বুকে আঘাত করেছে।

লোকজন দিয়ে হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্লেজেন প্রপার্টি লিমিটেডের মালিক ও বিএনপি নেতা রবিউল আলম বলেন, আমি কোনো লোকজন পাঠাই নি। একজন ইনিঞ্জনিয়ার পাঠিয়েছি। তারা অন্যায়ভাবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফ্ল্যাটে কাজ করছিলো, তাদের কাজ বন্ধ করার জন্য বলতে গিয়েছিল। এখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

নিহতের বাবা তার ফ্ল্যাট দখলে রাখার অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে রবিউল আলম বলেন, আমার সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তিন চার বছর আগে ভবনের কাজ শেষ করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। এই ভবনের জমির মালিক তিনজন। তারা প্রত্যেকে সাড়ে চারটি করে ফ্ল্যাট পেয়েছেন। দুজন মালিক অর্ধেক অংশ কিনে নিয়েছেন। কিন্তু সুলতান সাহেব ফ্ল্যাটের অর্ধেক অংশ অর্থাৎ সাড়ে ৬শ বর্গফুট ফ্ল্যাটটি কেনার কথা বললেও কিনছেন না। বরং তিনি দখলের চেষ্টা করছেন। তাই আমরা আদালত থেকে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। সেই নির্দেশনা অমান্য করে তিনি কয়েকদিন ধরে কাজ করছিলেন। এটা বন্ধ করতেই আমার লোকজন সেখানে গিয়েছিলো। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আশাকরি ময়নাতদন্তে সব প্রমাণিত হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, সুলতান সাহেব ফ্ল্যাটটি কিনে সমস্যা সামাধন না করে ডিবি হারুনের শ্বশুরের সহযোগিতায় আমাকে চাপে রেখেছেন। হারুনের শ্বশুর মহানগর হাউজিংয়ের কমিটির সভাপতি ছিলো। তার প্রভাবে সে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করেছে। আমি তাদের দ্বারা ভুক্তভোগী।

ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে মিলে ফ্ল্যাট দখল ও গণমাধ্যম কর্মীর ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মামুন বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাকে চাপে ফেলা হচ্ছে। আমি এই ভবনের মালিক কিংবা ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে জড়িত না। ভবনে আমার শ্বশুর একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। আমি শ্বশুরের বাসায় থাকি। আজকের ঘটনার সময়ে আমি বাসায় ছিলাম না। কি হয়েছে জানিও না। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি। একজন সরকারি কর্মকর্তা কি কারো ওপর হামলা করতে পারে? বরং সুলতান সাহেব লোকজন নিয়ে আমার বাসায় ভাঙচুর চালিয়েছেন। আমার বাসার দরজা ভেঙে বাসায় প্রবেশ করেছেন। বাসার আসবাবপত্র ভেঙে ফেলেছেন। এমন কি তারা সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে নিয়ে গেছে।

হামলার অভিযোগ নিয়ে গেলেও সহযোগিতা না কারার বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সহযোগিতা করেছি। আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমন কি হামলার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। যারা জড়িত তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।

তানজিলের ওপর কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, প্লেজেন প্রপার্টি লিমিটেড কোম্পানির লোকজন হামলা করেছে। আমরা তাদের সাইট ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনকে আটক করেছি। প্লেজেন প্রপার্টি লিমিটেড নামের ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হবে।

Related News