ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্রের দাপটে অসহায় শিক্ষক পরিবার

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-13 19:58:41

বাড়িটির সামনে একটি নামফলক। সেখানে লেখা মো. আলমগীর, যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক। বাড়ির নীচতলায় একটা বড় ফেস্টুনে লেখা মো. আলমগীরের নাম। সেখানে বড় করে তার পরিচয় দেয়া আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। অথচ এই বাড়ির মালিক তিনি নন। সাত বছর আগে একটি ভূয়া দলিল তৈরি করে বাড়িটির দুটি ফ্ল্যাট নিজের দখলে নিয়েছেন। এখন বাড়ির মালিকদের চাপের মধ্যে রেখে পুরো বাড়ি দখলের পায়তারা করছেন।

মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ১১ নম্বর সড়কের ৪৭ নম্বর বাড়িটি অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা রাবেয়া বেগম ও তার চার বোন মালিক। রাবেয়া বেগম তাঁর অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক স্বামীকে নিয়ে বাড়িটির তৃতীয় তলায় বসবাস করলেও প্রতিনিয়তই আতঙ্কের মধ্যে থাকছেন।

সাত বছরের বেশি সময় দখলে রাখা দুটি ফ্ল্যাটের ভাড়া বাজার দরে হিসেবে করলে গত সাত বছরে দুটি ফ্ল্যাট থেকে অন্তত ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আলমগীর। আর পরিবারটির ওপর যে মানসিক নির্যাতন করেছেন তা হিসেব করার মতো নয়।

রাবেয়া বেগম জানান, মায়ের কাছ থেকে পাওয়া ভূমিটি উন্নয়নের জন্য একটি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে তাঁরা চুক্তিবদ্ধ হন। বাড়ি নির্মাণের এক পর্যায়ে ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা নামধারী আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্রের সদস্য মোঃ আলমগীর পরিকল্পিতভাবে আমাদের পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়া আমাদের নির্মিত ভবনটি আত্মসাতের লক্ষে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সম্পূর্ণ আইনবর্হিভুত পন্থায় একটি বায়না দলিল তৈরি করে অত্যন্ত সু-কৌশলে তার মাদকাসক্ত ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে উক্ত ভবনের ২য় ও ৬ষ্ঠ তলায় প্রবেশ করে। এরপর থেকে তিনি ও তার পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় তিনি ও তার বৃদ্ধ স্বামীর উপর মারমুখি হয়ে হত্যার চেষ্টা করে।

তিনি আরও বলেন, এসব হুমকি হামলা থেকে বিভিন্ন সময় আশপাশের মানুষের সহযোগিতায় প্রানে বাঁচলেও কিছুদিন আগে আলমগীর ও তার মাদকাসক্ত ছেলে তাদের ওপর আক্রমনাত্মক হয়ে ভয় ভীতি প্রদর্শন করলে তার স্বামী তাৎক্ষনিক হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাকে একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর সেবারের মত কোনরূপ প্রানে বেঁচে যান।

রাবেয়া বেগম জানান, ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্রের সদস্য আলমগীর ভবনটি সম্পূর্ণ আত্মসাতের জন্য তাহার মাদকাসক্ত ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ওই ভবনে বিভিন্ন রকম মাদক বিক্রি সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি জানান, এই অবস্থায় তার একমাত্র অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী মেয়ে দেশে এসে আলমগীরের মালিকানার বৈধতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে জানালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা নামধারী ভূমিদস্যু ও জালিয়াত চক্রের সদস্য আলমগীরের বৈধ কোন আইনগত কাগজপত্রের ভিত্তি না পাওয়ার দরুন মোঃ আলমগীরের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি হস্তান্তরের অনুমতি পত্রটি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বাতিলের আদেশ দেয়। ওই ঘটনার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা নামধারী মোঃ আলমগীর ও তার মাদকাসক্ত ছেলে রাবেয়ার অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী একমাত্র মেয়ে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা কতিপয় সন্ত্রাসী শ্রেনীর লোকজনসহ পরিকল্পিতভাবে তার পরিবারকে হত্যা ও গুমের মাধ্যমে উক্ত ভবনটি সম্পূর্ণরূপে দখলের পায়তারা করছে।

জানা গেছে, বাড়ির দখল নেয়ার পর থেকে একাধিক মামলা হয়। ওইসব মামলায় নিজেদের পক্ষে রায় পান রাবেয়ারা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্তেও আলমগীরের কাগজপত্র ভূয়া বলে প্রমাণ হয়। পুলিশের তদন্ত ও আদালতের রায় স্বত্বেও আলমগীর ক্শতার দাপট দেখিয়ে ফ্ল্যাট দুটি দখলে রেখে দেন। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লাও সালিসের মাধ্যমে আলমগীরকে ওই ফ্ল্যাট দুটি ছাড়ার রায় দিলেও আলমগীর তা করেননি। মুক্তিযোদ্ধা নামধারী এই ব্যক্তি দুটি ফ্ল্যাট ক্ষমতার দাপটে দখল করে রেখেছেন।

গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আলমগীর ভোল পাল্টে আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে রাবেয়ার পরিবারকে হুমকি ধামকি প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।

রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আগের সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই ব্যক্তি আমাদের জীবনকে অতিষ্ট করে রেখেছিল। এখন নতুন সরকার আসার পরও তার দাপট কমেনি। আমরা আশঙ্কা করছি, যে কোনো সময় আলমগীর আমাদেরকে মেরে পুরো বাড়ি দখল করে নেবে। এ অবস্থা থেকে বাঁচাবে কে?’

এ বিষয়ে জানতে মো. আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, ফ্ল্যাট দুটি তার নিজের। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

Related News