একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন স্বামী-স্ত্রী

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কিশোরগঞ্জ | 2024-10-16 20:27:28

‘শিক্ষার কোনো বয়স নেই, শেখার কোনো শেষ নেই’ তা আবারও প্রমাণ করে দেখালেন কিশোরগঞ্জের মো. বদিউল আলম (নাঈম) ও শারমীন আক্তার দম্পতি। তারা ৪৩ ও ৩৩ বছর বয়সে এসে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জে কুলিয়ারচর উপজেলার বাসিন্দা মো. বদিউল আলম (নাঈম) এবং শারমীন আক্তার বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। নাঈম-শারমীন দম্পতির আলোচনা এখন কিশোরগঞ্জবাসীর মুখে মুখে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফলে কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্বামী নাঈম পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ২৯ এবং স্ত্রী শারমীন পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৫।

পেশায় ঠিকাদার নাঈম কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামের মো. কনু মিয়া ও মোছাম্মাৎ সাজেদা দম্পতির ছেলে। ১৯৯৭ সালে তার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। অপরদিকে গৃহিনী শারমীন আক্তার কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মঙ্গলকান্দি গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন ও মায়া বেগম দম্পতির মেয়ে। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয় তার। ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও সন্তান গর্ভে আসায় আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। ২০০৮ সালে বিয়ে হওয়া এ দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান আছে।

তাদের বড় মেয়ে বুশরা আক্তার বীথি স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও মেজো ছেলে রেদোয়ান আলম সিয়াম একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সবার ছোট মেয়ে তাসনীম (৫) এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি।

এ দম্পতি জানান, ২০২০ সালে বড় মেয়ে বীথি ও তৎকালীন কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনার উৎসাহে নতুন করে পড়াশোনা করার আগ্রহ জাগে তাদের।

ওই বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তারা দুজন বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসায় ভর্তি হন। পরে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় নাঈম জিপিএ ৪ দশমিক ৯৫ এবং স্ত্রী শারমীন জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন।

বদিউল আলম (নাঈম) বলেন, বিয়ের আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও কয়েকবার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যবসা ও সাংসারিক চাপে শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।

শারমীন আক্তার বলেন, মনের জোর এবং স্বজনদের উৎসাহে পড়াশোনা করে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন।

এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরে তারা নিজেরা আনন্দিত হওয়াসহ তাদের পরিবারে যেমন আনন্দের বন্যা বইছে, তেমনি এলাকার লোকজনও খুশি হয়ে তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছে বলে জানালেন এই দম্পতি।

লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। বদিউল আলম ও শারমীন আক্তার দম্পতি এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। তারা কলেজে নিয়মিত ছিলেন এবং লেখাপড়ায়ও মনোযোগী ছিলেন। আমি প্রায়ই ক্লাস রুমে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিতাম। ব্যবসা-সংসার সামলিয়ে যে পড়াশোনা করা যায় এটা দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

Related News