শাহ আমানতেও সামিটের ক্ষমতার দাপট, জমি দখল করে গড়ে তুলেছে ডিপো

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-10-17 15:12:04

একদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সদ্য সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের ভাই। অন্যদিকে আবার সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনীও। মুহাম্মদ আজিজ খানকে ঠেকানোর সাধ্য আছে কার! সত্যিই তাই যেন হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

ক্ষমতার দাপট আর রাজনৈতিক প্রভাবের জোড়া ‘সাফল্যে’ ভর করে বিমানবন্দররের ১২ একর জমি দখলে নিয়েছিল মুহাম্মদ আজিজ খানের মালিকানাধীন সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)। শুধু তাই নয়। দখলের পর ৬০০ কোটি টাকার সেই সরকারি সম্পদের ওপর বেসরকারি কনটেইনার ডিপো গড়ে তুলে ব্যবসাও করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গার নাজিরপাড়ায় (চড়ি হলদা) অবস্থিত ওই জায়গা এভাবেই অবৈধভাবে ভোগ করে আসলেও রাজনৈতিক প্রতাপের কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

তবে বেআইনীভাবে দখলে রাখা জায়গা ছেড়ে দিতে এসএপিএলকে কয়েকবার নোটিশ দিয়েছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কিন্তু সেই নোটিশকে পাত্তাই দেয়নি এসএপিএল। এক পর্যায়ে উচ্ছেদের জন্য সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটও পাঠানো হয়েছিল। এবার আরও বড় ক্ষমতা দেখায় সামিট। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে উচ্ছেদ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য করেছিল। তবে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন সবাই কথা বলছে সামিটের এই দখলদারী নিয়ে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও জায়গাটি পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে এসএপিএল দখল করা জমিতে কনটেইনার ডিপো স্থাপন করে। সে সময় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও কিছুই করতে পারেনি। উল্টো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টার্মিনালটি মূল স্থাপনার বাইরে টিন দিয়ে আরও সম্প্রসারণ করে তারা। এর প্রায় এক যুগ পর বিমানবন্দরের দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই বেবিচকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে এসএপিএল কর্তৃপক্ষকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে সেখানে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আহাম্মেদ জামিল নোটিশটি স্বাক্ষর করেছিলৈন। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের পক্ষে নোটিশ গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন) ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার।

যদিও ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদারের দাবি এসএপিএল অবৈধ দখলদার নয়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কেনা সম্পত্তির ওপর কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড বিমানবন্দরের কোনো জায়গা দখল করেনি। আর বেবিচক থেকে দেওয়া নোটিশের বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।’

তবে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। জানা যায়, ১৯৯২ সালে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন টার্মিনাল ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরির কারণে তৎকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পতেঙ্গা থানার দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় সাগরপাড়ে ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অধিগ্রহণকৃত জায়গায় যেতে অনীহা জানায়। সে কারণে তাঁদের জন্য বিমানবন্দরসংলগ্ন বিজয়নগর এলাকায় জায়গা অধিগ্রহণ করা হয় এবং সেখানেই তাদের পুনর্বাসন করা হয়। অন্যদিকে আগে ক্রয় করা ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জায়গায় বিমানবন্দরের নতুন আবাসিক কলোনি নির্মাণের প্রস্তাব নেওয়া হয়। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানের অভাবে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড সেখান থেকে ১২ একর জায়গা দখল করে নেয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জায়গা ছেড়ে দিতে বারবার তাগাদা দিলেও সামিটের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রতিবারই পিছু হটতে হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জমি উদ্ধারে গিয়েও ফিরে আসতে হয়।

তবে বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আলমগীর। তিনি বলেন, ‘শুনেছি বিমানবন্দরের বেশ কিছু জায়গা বেদখল রয়েছে। সেগুলো উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Related News