‘পুনর্লিখন নয়, সংবিধান সংশোধন করা বাঞ্ছনীয়’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-19 19:19:11

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংবিধান সংশোধন না পুনর্লিখন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে পুনর্লিখন নয়, সংবিধান সংশোধন করা বাঞ্ছনীয়।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক শাসনে উত্তরণের জন্য সাংবিধানিক সংস্কার’ শীর্ষক এক পরামর্শমূলক সেমিনারে এমন মতামত উঠে আসে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ (বিআইপিএস) আয়োজিত এই সেমিনারে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজীবী, সংবাদপত্রের সম্পাদক, আইনের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন।

মতবিনিময় সভার মূল বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল যাতে বেহাত না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই আন্দোলনকে যে নামেই ডাকেন, এটি একটি সফল আন্দোলন। যে কারণে মানুষের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো জেঁকে বসা স্বৈরশাসককে দেশ থেকে পালাতে হলো। এই যে সরানো হলো, এটি হলো সাংবিধানিক অধিকার। সব অধিকার লেখা থাকে না। এ বিষয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও উদাহরণ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, শাসনতন্ত্রের সংস্কার বলেন, পুনর্লিখন বলেন, যা-ই বলেন, এটির অধিকার কার? অধিকার তাদেরই, যারা এই পরিবর্তন (সরকার পরিবর্তন) এনেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা প্রসঙ্গে বিচারপতি আবদুল মতিন বলেন, পাঁচ বছর পর হলেও গণতন্ত্রের একটু স্বাদ পেতাম। আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিল না। একটি ব্যবস্থা করা গেল ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় দু-তিনটি নির্বাচন ভালোই করলাম। পরে সেটি আবার বেহাত হয়ে গেল।

সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে বিচারপতি মতিন বলেন, ইতোমধ্যে যেগুলো স্বীকৃত বা মীমাংসিত বিষয়, এগুলোতে মনে হয় হাত দেওয়া ঠিক হবে না। যেমন ‘রিপাবলিক’। এগুলো বিদ্যমান রেখে এখান থেকে আরম্ভ করতে হবে। যেগুলো না করলেই নয়, সেটির সংস্কারের করার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে মেরামত করা, এগুলোতে হাত দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসাইন বলেন, এত সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন হলো, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেলাম। পরবর্তী সময়ে কী পেলাম? ফল শূন্য। এই ছাত্র-জনতা যদি এগিয়ে না আসত, তাহলে যে গর্তে পড়েছিলাম, সেখানেই থাকতে হতো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন আমাদের জন্য নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, একটি বক্তব্য এসেছে, আমরা কি নতুনভাবে সংবিধান লিখব, নাকি আগেরটি সংশোধন করব। আমার মত হচ্ছে আগেরটার সংশোধন করাই বাঞ্ছনীয়। কেননা, আগেরটির মধ্যে অনেক মূল্যবান বক্তব্য আছে। ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি আছে। এটিকে আরও গণতান্ত্রিক করা, আরও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের সরকার না আসে, যারা সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে। এ জন্য সংশোধন দরকার।

কী কী সংশোধন করা যায় এ বিষয়ে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথক্‌করণের (সেপারেশন অব পাওয়ার) ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে খর্ব হয়েছিল। আইন বিভাগ স্বাধীন দায়িত্ব পালন করেনি। সেটি ক্ষমতাসীন দলের ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হিসেবে কাজ করেছে। সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে গিয়েছিল নির্বাহী বিভাগের কাছে। সেটির পরিবর্তন অবশ্যই করতে হবে।

দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন করা অত্যন্ত প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, কেননা সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়টি নির্ধারণ করে বিচার বিভাগ। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দরকার। গণমাধ্যম যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেটি দরকার। নতুন নতুন আইন করে গণমাধ্যমকে কুক্ষিগত করা হয়েছিল, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পরে সেটির পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন বলতে গেলে গণমাধ্যমকে হত্যা করার প্রয়াস। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত বলে মনে করেন মাহ্ফুজ আনাম।

সভায় আরও বক্তব্য দেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের সভাপতি সি এ এফ দৌলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উত্তম কুমার দাস, গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

Related News