পটুয়াখালীতে দেশি মাছের সংকট

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম পটুয়াখালী | 2024-10-21 16:42:49

পটুয়াখালীতে দেশী মাছের সংকট নতুন মাত্রা ধারণ করেছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে দেশী মাছের অভাব দেখা দিয়েছে, যার ফলে মাছের দাম বেড়ে গেছে। মৎস্যজীবী ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, অতীতের তুলনায় বর্তমানে দেশী মাছের সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা স্থানীয় মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

আগে পটুয়াখালী জেলার পুকুর, নদী-খাল ও জলাশয়ে প্রচুর দেশী মাছ পাওয়া যেত, যেমন: চিংড়ি, রুই, কাতলা, শিং, বোয়াল, কই, মাগুর, ট্যাংরা, টাকি এবং পুটি। তবে বর্তমানে এসব মাছের মধ্যে বেশ কিছু প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। বিশেষত, দেশী চিংড়ি, পুটি, বোয়াল এবং কই মাছ এখন প্রায় মিলছে না।

বর্তমানে স্থানীয় বাজারে মাছের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। দেশী চিংড়ি আগে ছিল ৩০০-৪০০ টাকা, বর্তমানে ৯০০-১২০০ টাকা; বোয়াল আগে ছিল ৪০০-৫০০ টাকা, বর্তমানে ১২০০-১৫০০ টাকা; কই আগে ছিল ২০০-২৫০ টাকা, বর্তমানে ৪০০-৫০০ টাকা; শিং আগে ছিল ৩০০-৪০০ টাকা, বর্তমানে ৭০০-৮০০ টাকা; মাগুর আগে ছিল ২৫০-৩০০ টাকা, বর্তমানে ৬০০-৭০০ টাকা; ট্যাংরা আগে ছিল ২০০-২৫০ টাকা, বর্তমানে ৫০০-৬০০ টাকা।

স্থানীয় বাজারের পরিস্থিতি তুলে ধরে পটুয়াখালী শহরের বাসিন্দা আবদুল গনি (৬৭) বলেন, আগে যে সব মাছ খেতাম, এখন তা চোখেও পড়ে না। কালে ভাদ্রে ২-১ বার দেখি, কিন্তু কিনে খেতে পারি না। ছোট সময় এমন কিছু মাছ খেতাম, যা বর্তমান প্রজন্মের অনেকে নামই জানে না।

এদিকে, পৌর নিউ মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী দুলাল হাং (৪২) বলেন, দেশী মাছ এখন আর পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে বাজারে আসে, কিন্তু দাম এত বেশি যে, মানুষ কিনতে পারে না। মাছ বিক্রির বাজারে এমন পরিস্থিতি যে, আর কয়েক দিন গেলে দেশী মাছ চোখেই দেখা যাবে না।

বিভিন্ন কারণে মাছের সংকটের মূল কারণ হিসেবে পরিবেশগত পরিবর্তন, নদী ও জলাশয়গুলোর দূষণ এবং অবৈধ মাছ ধরার কর্মকাণ্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানীয় মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, নদী ও পুকুরের অবস্থার অবনতি ঘটেছে, ফলে দেশী মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।

মৎস্যজীবীরা জানান, জাল ফেলে মাছ ধরার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। পটুয়াখালী সদর, কলাপাড়া এবং রাঙ্গাবালী উপজেলায় মাছের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় মানুষদের জন্য মাছ কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, আমরা দেশীয় মাছের সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। মাছের উৎপাদন বাড়াতে জলাশয়গুলোর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। পাশাপাশি, অবৈধ মাছ ধরার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে।

দেশী মাছের সংকট মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং স্থানীয় মৎস্যজীবীদের উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে পটুয়াখালীর জনগণ তাদের প্রিয় খাদ্য পুনরায় সহজে পেতে পারেন।

Related News