দীর্ঘ ১৪ বছর পর আগামীকাল ২৩ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ইতিহাসে কোনো খোলা ময়দানে এতবড় আয়োজনে সম্মেলন এই প্রথম। সে হিসেবে ইতোমধ্যে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসবের আমেজ।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও উদ্বোধক হিসেবে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ইতোমধ্যে সম্মেলন উপলক্ষে মঞ্চ সাজ-সজ্জাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা বিএনপি। শহরসহ জেলাব্যাপী ব্যানার-ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে। জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু জেলা বিএনপির সম্মেলন।
এর আগে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাড. আব্দুল খালেক। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রয়েছেন অ্যাড. আব্দুর রউফ, অ্যাড. শাহজাহান মুকুল, অ্যাড. মানিক খন্দকার ও অ্যাড. মিল্টন। ইতোমধ্যে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সভাপতি পদে একজন, সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চারজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দিয়েছিলেন। একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন বৈধ ষোঘণার পর স্পষ্ট হয়েছে তিনিই হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিলিমা বিশ্বাস মিলির মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সফিকুল ইসলাম পিটু, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির নেতা মোহা. খালিদ মাহমুদ, জেলা যুবদলের অর্থ সম্পাদক মো. মোমিনুর রহমান ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। সভাপতি বাদে বাকি দুটি পদে সম্মেলনের দিন নির্বাচন হবে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে বঙ্গজ ফ্যাক্টরি প্রাঙ্গনে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর ২০২১ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। জেলা বিএনপি বলছে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন, আন্দোলন সংগ্রাম, মামলা, হামলা, গ্রেফতারের কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। খানিকটা দেরিতে হলেও এবার জেলা বিএনপি বড় আয়োজনে সম্মেলন করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সম্মেলনস্থল চুয়াডাঙ্গা শহরের টাউন ফুটবল মাঠে মঞ্চ-প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের চার প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে বড় বড় তোরণ। শহর থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছেয়ে গেছে ব্যানার-ফেস্টুন। নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
কেন্দ্রীয় বিএনপি সম্মেলনের অতিথি তালিকা চূড়ান্ত করেছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উদ্বোধক হিসেবে সশরিরে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুর সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর দলের সংকটকালীন মুহূর্তে মাহমুদ হাসান খান বাবুকে আহ্বায়ক এবং শরীফুজ্জামান শরীফকে সদস্যসচিব করে দুই সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরপর ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। ওই বছর ২৭ জানুয়ারি আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা করে। প্রথম সভাতেই চুয়াডাঙ্গা জেলার ৩৬৯টি ওয়ার্ড, ৪১টি ইউনিয়ন, ৪টি পৌরসভা ও ৫টি থানায় প্রকাশ্য সম্মেলনের মধ্যদিয়ে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের নিয়ে সমন্বয় টিম গঠন করা হয়। সেই টিম প্রকাশ্য সম্মেলন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে।
এবারের সম্মেলনের জেলার চারটি উপজেলা এবং চারটি পৌর কমিটির মোট ৮০৮ জনকে ভোটার হিসেবে নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। বেশ কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় বিএনপি প্রকাশ্যে বড় পরিসরে দলীয় কোনো কার্যক্রম চালাতে পারেনি। এর আগেও চুয়াডাঙ্গা বিএনপি সেভাবে সম্মেলন আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এবার পরিবর্তীত পরিস্থিতি এবং দলের নেতাদের সিদ্ধান্তে ইতিহাসের রেকর্ড সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ জন্য গোটা সম্মেলন ঘিরে বিশাল আয়োজন চোখে পড়ছে। আর সব থেকে বড় পাওয়া হচ্ছে, কর্মী মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কর্মীরাই তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করবেন। তাই যে নেতা সুখে-দুঃখে দলের দুঃসময়ে খোঁজখবর নিয়েছেন, দলের স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন, তাদেরকে নিয়েই ভাবা হচ্ছে। আবার যারা ভবিষ্যতে কর্মী মূল্যায়ন করতে পারবেন, তাদেরকে নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।