ব্লগার ফারাবিসহ নিরীহ বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ব্লগার ফারাবিসহ নিরীহ বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ, ছবি: বার্তা২৪.কম

ব্লগার ফারাবিসহ নিরীহ বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ, ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি গেটে অনলাইন ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে কারাগারে থাকা ইসলামি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবিসহ সব নিরপরাধ-নিরীহ কারাবন্দীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও 'ছয় দফা' দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন নামের একটি সংগঠন এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

উক্ত বিক্ষোভ সমাবেসে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সরকারি মহাসচিব ও বৈষম্যহীন কারা মুক্তি আন্দোলনের সিনিয়র উপদেষ্টা মুফতি আজহারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমলে নাস্তিকদের সন্তুষ্টির জন্য ইসলামিক অনলাইন লেখক শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের উসকানিতে তাকে একাধিক মামলাসহ তার গ্রেফতারের অনেক পরে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা মামলায় যুক্ত করা হয়। এবং তড়িঘড়ি করে সেই হত্যা মামলার উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও প্রহসন মূলক রায়ে তাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, শুধু ইসলামের পক্ষে লেখালেখি করার কারণেই তার বিরুদ্ধে এই ঘৃণ্য যড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমরা অনতি বিলম্বে তার মুক্তি চাই এবং তার সব মামলা প্রত্যাহার চাই। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পরে মিথ্যা মামলায় কোনো মজলুম কারাগারে বন্দি থাকতে পারে না। তাছাড়া মুফতি আমিক ইসলামসহ সব নিরীহ মজলুম ওলামা তোলাবা ও জনসাধারণের মুক্তি দিতে হবে এবং সব মামলাগুলো প্রত্যাহার করে আমাদের এই ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুবা আমরা বাধ্য হবো আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে।

সমাবেশে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন- হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সম্পাদক ও বৈষমবাহিনী কারামুক্তি আন্দোলনের সিনিয়র উপদেষ্টা মুফতি মোহাম্মদ শরিফুল্লাহ। তিনি বলেন, ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে সব নিরীহ নিরপরাধ মজলুম বন্দীদেরকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। হাসিনার প্রহসনের হাতিয়ার অবৈধ কালো আইন সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ নামক আইনকে অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক মানবাধিকার ও সেবামূলক সংগঠন, আমরা ছয় দফা দাবি আদায়ে এবং নিরীহ মজলুম কারাবন্দীদের মুক্ত করতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছি।

অনতিবিলম্বে এই মজলুম ফারাবিসহ সব নিরীহ মজলুমদের মুক্তি দিয়ে ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুবা সারা দেশব্যাপী আমাদের নিয়ম তান্ত্রিক আন্দোলন আরও বেগবানভাবে চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, যারা এখনও কারাগারে বন্দি রয়েছে তারাও কখনো কখনো মৌলিক অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আবার কখনো কখনো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমরা নিরীহ মজলুম বন্দীদের দ্রুত জামিন ও কারাগারে অবস্থানরা বন্দীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

দাবিগুলো হলো-

আওয়ামী দুঃশাসনে 'সন্ত্রাস-বিরোধী আইন-২০০৯' নামক কালো আইনে এবং অন্যায়ভাবে আটককৃত সব নিরপরাধ মজলুম কারাবন্দীদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। আদালত কর্তৃক জামিন ও বিচারের ক্ষেত্রে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বন্দীদের ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন আচরণ করতে হবে।

সন্ত্রাস-বিরোধী আইন ২০০৯’ নামক কালো আইন অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে।

আওয়ামী সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো অপরাধীকে গুম অথবা ক্রসফায়ার দেয়া যাবে না। আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না। বিগত দিনে যারা গুম ও ক্রসফায়ারের সাথে জড়িত ছিলো তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করতে হবে। দেশের সব গুমখানা বা আয়নাঘরগুলো খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে আনতে হবে। তাছাড়া শেখ হাসিনা পতনের পরদিন সকালে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা কর্তৃক যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে সে জন্য তাকেও সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে এবং নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন থেকে নিয়ে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে যারা আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও তাদেরকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।

কারাগারের সব বন্দীদের জন্য বৈষম্যহীনভাবে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন, ফ্রান্স, মেক্সিকো, জার্মানি প্রভৃতি দেশের মতো বন্দিদশায় প্রত্যেক বন্দীকে মাসে অন্তত একবার হলেও তার স্ত্রীর সাথে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ দিতে হবে।