জনপ্রিয়তা বাড়ছে ৫০ টাকার ইলিশ-খিচুড়ির

, জাতীয়

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) | 2024-12-12 05:58:33

সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীতে অবস্থিত পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। যে জায়গায় একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। আর লাল কাঁকড়া ও বিশাল ম্যানগ্রোভ বন, পাশাপাশি জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করতে যেতে হবে অপার সম্ভাবনাময় কাউয়ারচর এলাকায়। 

সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি স্থানীয় তরুণদের উদ্যোগে কাউয়ার চরে চালু হওয়া ৫০ টাকার ইলিশ খিচুড়ির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত কাউয়ার চর নামক স্থানটি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণ স্পট হিসাবে খুবই জনপ্রিয়। প্রতিদিন সূর্যোদয় দেখতে পর্যটকদের আগমন বাড়তে থাকায় নতুন খাবার উপহার দেয়ার জন্য মিরাজ শিকদার শুরু করেন ইলিশ-খিচুড়ি বিক্রি। শুরুর পর পরই তিনি এতে লাভের মুখ দেখতে থাকেন। তার দেখাদেখি সেখানে এখন প্রায় ৮-১০ টি দোকান গড়ে উঠেছে। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নতুন এসব খাবারে পর্যটকদের মন রাখতে এক পিচ ইলিশ মাছসহ খিচুড়ি মাত্র ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করছেন এসব ব্যবসায়ীরা। শুধু দামই নয়, সমুদ্র থেকে নিয়ে আসা জেলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তাজা ইলিশ সাজানো থাকে থরে থরে যার যেটা পছন্দ সেটাই পর্যটকদের সামনে কেটে, মশলা মেখে, ভাজি করে দেয়া হয়, যা একমাত্র এই কাউয়ার চরেই মিলবে।

প্রতিদিন ভোর ৫টায় শুরু হওয়া এই নান্দনিক খাবার থাকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। এই সময়েই প্রতিটি দোকানে প্রায় ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। যেখানে লাভের পরিমাণ কম হলেও পর্যটকদের শতভাগ চাহিদা পূরণই ব্যবসায়ীদের একমাত্র লক্ষ্য। 

অল্প টাকায় এসব সুস্বাদু খাবার পেয়ে উচ্ছ্বাসিত ঘুরতে আসা পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা সাফওয়ান শাহাদ বলেন, সকালে সূর্যোদয় দেখতে এসে দেখলাম থরে-থরে ইলিশ মাছ সাজানো, সমুদ্র থেকে নিয়ে আসা সকালবেলার তাজা ইলিশ আর খিচুড়ি আসলে প্রশসংনীয়। অল্প টাকায় খাবারটা আসলেই অনেক মজাদার ছিল।

সূর্যোদয় উপভোগ করতে আসা আরেক পর্যটক ডা. আতিকুজ্জামান বলেন, আমি পরিবারসহ এখানের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এসেছি। এখানে আসার পরে অনেকগুলো দোকান যাচাই-বাছাই করে দেখলাম যে, আমাদের সাধ্যের ভেতর ইলিশ এবং খিচুড়ি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা দুইটা ইলিশ নিয়েছি ৫৮০ টাকায়। যা ৮ থেকে ৯ পিস হয়েছে। আসলে আজকের এই আয়োজনটা আমাদের মুগ্ধ করেছে।

ট্যুর গাইডের সভাপতি মো. বাচ্চু খলিফা জানান, মূলত এখানকার ব্যবসায়ীদের এই আয়োজনটিকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা যখন পর্যটকদেরকে প্রতিটি স্পট ঘুরিয়ে দেখাই তার মধ্যে এটাও অন্যতম। এখানে সূর্যোদয় দেখার পরে এই ইলিশ খিচুড়ি খেয়ে পর্যটকরা অনেক আনন্দিত হয়। একসাথে তাদের সূর্যোদয় দেখাও হয় এবং সকালের নাস্তাটাও হয়ে যায়।

কাউয়ার চরের ইলিশ খিচুড়ির উদ্যোক্তা সিকদার রেস্টুরেন্টের মালিক মো. মিরাজ সিকদার বলেন, মূলত সাগরের পাড়ে পর্যটকরা সূর্যোদয়ের ঝাউবন, লাল কাঁকড়ার চর দেখতে আসে। এখানে এসে যদি তারা সমুদ্রের তাজা মাছ খেতে পারে তাহলে তার অনেক খুশি হয়। সেই জায়গা থেকেই তাজা মাছ এবং খিচুড়ি খাওয়ানোর উদ্যোগ জাগে আমার মধ্যে। এরপর থেকেই এটা আমি শুরু করে দেই, আমার দেখাদেখি অনেকগুলো দোকান এখানে উঠেছে, দোকান বেশি হওয়াতে আমাদের বেচা বিক্রি কমেনি বরং পর্যটকরা দেখে শুনে যাচাই বাছাই করে খেতে পারছে। 

আল্লাহ'র দান রেস্টুরেন্টের মালিক আ. রহমান জানান, সমুদ্র থেকে জেলেদের নিয়ে আসা ইলিশ, লাক্কা, কোড়াল, বাঁশপাতা, চিংড়িসহ ১০-১৫ আইটেমের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যাবে আমাদের কাছে এগুলো আমরা স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে সংগ্রহ করে রাখি পরে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করি। এখানে এসে পর্যটকদের সময় কাটে শতভাগ আনন্দ উল্লাসে। এটাকে টিকিয়ে রাখতে এই এলাকাকে আরো উন্নত করার দাবি সরকারের কাছে। 

ট্যুর অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন অফ কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট জনাব রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কাউয়ার চরের মত এরকম সুন্দর একটি জায়গাতে ব্যবসায়ীদের এ উদ্যোগকে আমরা অনেকটা সেবা হিসাবে দেখছি এবং সকল ট্যুর গাইড,ও ট্যুর অপারেটর সদস্যদের নির্দেশ দেয়া আছে যাতে কেউ পর্যটকদের সাথে প্রতারণা না করে।

Related News