ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের পশ্চিম মধুগ্রামের আবু আহম্মদের ১০০ ডিসিম জমি জোর পূর্বক দখল করার অভিযোগ উঠেছে তার মেয়ের জামাই রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। একই জমিতে বর্গাচাষীর কেটে রাখা ধান লুট করে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বর্গাচাষি জয়নাল আবেদীন। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, ১১ ডিসেম্বর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মধুগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷ ঘটনার পর থানায় দায়ে করা অভিযোগপত্রে তিনি একই এলাকার আবদুল লতিফের ছেলে ওমর ফারুক ভুট্টু, আবু তাহের বাবুলের ছেলে রাশেদুল ইসলাম, ফকির আহাম্মদের ছেলে কবির আহাম্মদসহ আরও ১০ থেকে ১২ জনকে বিবাদী করেছেন।
অভিযোগপত্রে জায়নাল আবেদীন দাবী করেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে স্থানীয় আবু আহাম্মদ থেকে প্রবাসী শহীদুল্লাহ মহাজন পূর্ব মধুগ্রাম মৌজার বিএস খতিয়ান ৯২ নং এর একটি জমি বন্ধক নেয়। পরে প্রবাসী জমিটি জয়নাল আবেদিনের নিকট লাগিত দেয়। এর পর জয়নাল আবেদিন ওই জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে আসছেন। ওই জমিতে ১১ ডিসেম্বর সকাল থেকে কৃষক জয়নাল আবেদীন বদলা দিয়ে ধান কাটেন। দুপুর ১২ টার দিকে হঠাৎ ওমর ফারুক ভুট্টুর নেতৃত্বে একদল যুবক এসে জমিতে কর্মরতদের মারধর করে সবগুলো ধান পিকআপে ভরে নিয়ে যায়।
জয়নাল জানান, ধান লুটের বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ করি। অভিযোগের তদন্তে এসে থানার এক কর্মকর্তা আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায়। আমাকে কোর্টে চালান দিয়ে দেবে বলেও হুমকি দেয়। পুলিশ কর্মকর্তার এমন আচরণে আমি এবং আমার পরিবার ভয়ের মধ্যে রয়েছি।
সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ির পাশে আবু আহম্মদের মালিকানাধীন ১০০ ডিসিম জায়গা জবর দখলের জন্য চেষ্টা করেন তার নিজের মেয়ের স্বামী রাশেদুল ইসলাম। এ জায়গা নেয়ার জন্য আবু আহমেদকে ফেনীর একটি বাসায় আবরুদ্ধ করে রেখে জাল সিগনেচার দিয়ে জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে। এর আগে আবু আহমেদ সে জায়গা স্থানীয় প্রবাসী শহীদ উল্ল্যাহ মহাজনের নিকট বন্ধক দেন। শহীদ উল্ল্যাহ মহাজন স্থানীয় বর্গাচাষী জয়নাল আবেদীনকে চাষাবাদের জন্য ওই জমি লাগিত দেন। পরে সে জমির ধান কেটে নিয়ে যায় আবু আহমেদের মেয়ের জামাই রাশেদুল ও তার সহযোগী ভুট্টু ও কবির। এ বিষয়ে জয়নাল আবেদীন থানায় অভিযোগ করলেও কোন সাড়া পাননি।
আবু আহমেদের ছেলে আব্দুল আজিম বলেন, একটি ভুয়া মামলায় পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করলে আমাকে মুক্ত করতে আমার বাবা আবু আহম্মদ ১০০ ডিসিম জায়গা বন্ধক দেয়। বন্ধক দেয়ার পর থেকে আমার বোনের জামাইসহ বিবাদীরা এ জমিতে চাষ করতে দিবেনা বলে হুমকী ধামকি দিতে থাকে।
একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আমি দেওয়ানী আদালতের দারস্ত হয়ে ১৪৫ ধারা জারির প্রার্থনা করি। আদালতে উল্লেখিত জমির বিষয়ে তদন্ত করতে এ্যসিল্যান্ডকে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়। এসব আদেশের তোয়াক্কা না করে ওমর ফারুক ভুট্ট ও রাসেলসহ অন্যান্যরা জয়নাল আবেদীনের জমি থেকে ফসল সব নিয়ে যায়। পরে ওই জমিতে হাল দিয়ে ডাল চাষাবাদ শুরু করে।
তিনি বলেন, আমাদের জমির সকল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও পুলিশ এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ওবায়দুল হক নামে একজন বলেন, জয়নাল আবেদীনের জমি থেকে জোর পূর্বক ধানগুলো নিয়ে যায়। সে মজুরি দিয়ে ধান কেটে জমিতে রাখে কাটা ফসল তারা পিকআপ এনে নিয়ে চলে গেছে। তার পকেটে গরু বিক্রির টাকা ছিল তাকে মারধর করে সেগুলোও নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাশেদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ওই জমি নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আদালতের আদেশ মোতাবেক তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক হয়রানীর অভিযোগ সঠিক নয়। তারপরও যে কোন পক্ষ আইন ভঙ্গ করে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।