পাঠ্যপুস্তকে সংবিধান পরিপন্থী ‘আদিবাসী’ শব্দ বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাঠ্যপুস্তকে সংবিধান পরিপন্থী ‘আদিবাসী’ শব্দ বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পাঠ্যপুস্তকে সংবিধান পরিপন্থী ‘আদিবাসী’ শব্দ বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক সংগঠন ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের দাখিল নবম-দশম 'বাংলা ভাষার ব্যাকরণ' বইতে সংযোজিত সংবিধান পরিপন্থী পরিভাষা 'আদিবাসী' শব্দ বাতিল এবং এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহী অপকর্মের সাথে জড়িতদের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।

রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা এনসিটিবির সামনে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ সংগঠনের ব্যানারে এই বিক্ষোভ শুরু করেন। উক্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা এনসিটিবি ভবনের সামনে সমাবেশ এবং ৫ দফা দাবির পর ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে আদিবাসী শব্দ বাতিল, দোষীদের শাস্তি, এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে ভুল স্বীকার করে লিখিত বিবৃতি এবং এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিতে ঘন্টা ব্যাপী শ্লোগান দেয়।

বিজ্ঞাপন

এ সময় সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ ইয়াকুব মজুমদার বলেন, “আমরা বিক্ষোভ করছি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহী ‘আদিবাসী’ শব্দ বাতিল এবং যারা পাঠ্যবইয়ে এ শব্দ যুক্ত করেছেন তাদের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে।”

যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহম্মদ মহিউদ্দিন রাহাত জানান, আল্টিমেটাম দেওয়া সত্ত্বেও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের দাখিল ৯ম-১০ম শ্রেণির “বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি” বই থেকে বিতর্কিত ও রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা “আদিবাসী” শব্দ প্রত্যাহার না করায় এনসিটিবি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছি সার্বভৌমত্ব রক্ষায়।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনকারীরা জানান, পাঠ্যপুস্তকে “আদিবাসী” পরিভাষা অন্তর্ভুক্তি অনুমোদন করায় এনসিটিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগসাজশ থাকা কর্মকর্তাদের পদত্যাগসহ আন্দোলনকারীদের দেওয়া পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারি ঘোষণা না এলে ঘেরাও কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এসময় তদন্ত কমিটি গঠন ও জড়িতদের অপসারণসহ শাস্তি দাবি করেন তারা।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, “গত ৮ জানুয়ারি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঠ্যপুস্তক থেকে বিতর্কিত ও সার্বভৌমত্ববিরোধী ‘আদিবাসী’ শব্দটি প্রত্যাহারের ঘোষণা চেয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় আমাদের হতাশ করেছে। তাই দেশের স্বার্থে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার স্বার্থে এনসিটিবি ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “বইতে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজন খুবই আপত্তিকর, অনাকাঙ্ক্ষিত, সংবিধানবিরাধী ও রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ, যা বিচ্ছিন্নতাবাদের পথ সহজ করবে। কারণ বাংলাদেশে একমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষক ও দোসররাই উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ‘আদিবাসী’ বলে প্রচার চালায় ও স্বীকৃতি চায়। তাদের এই প্রচার ও স্বীকৃতি চাওয়ার পেছনে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। ছলে-বলে-কৌশলে তাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের দেশে ‘আদিবাসী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন একটি তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র ‘জুম্মল্যান্ড’ তৈরির পথ সহজ হবে। এনসিটিবিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সেই পৃষ্ঠপোষক ও দোসররাই ‘আদিবাসী’ শব্দটি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সরকারকে একটি তদন্ত কমিটি করে অতিদ্রুত এদের চিহ্নিত ও অপসারণ করতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমকি।”

সংগঠনের আহ্বায়ক জিয়াউল হক জিয়ার নেতৃত্ব ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল এনসিটিবি এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান সম্রাটের দপ্তরে যান কিন্তু চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ে না থাকায় প্রতিষ্ঠানের সদস্য (অর্থ) প্রফেসর রবিউল কবির চৌধুরী বিক্ষোভকারীদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাদের সাথে একমত পোষণ করে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দ ব্যবহারের বিষয়ে ভুল স্বীকার করেন এবং অতিশীঘ্রই সংশোধনের আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও আশ্বাস দেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে বসবাসরত এসব জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী/উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১৯ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার নির্দেশ দেয়।

এনসিটিবি হতে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দ সংশোধনের আশ্বাস প্রদান করায় অবস্থান কর্মসূচি আপাতত প্রত্যাহার করা হলেও দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দ জানান।