মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার ব্যবসায়ীরা, অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে নানা অস্থিরতার কারণে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে দেশের কিছু সংবামাধ্যম বিভিন্ন ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে মিথ্যা তথ্য ও মনগড়া বক্তব্য দিয়ে খবর পরিবেশনের মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। আর এসব সংবাদের ফলে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা বলে দেশের একটি দৈনিক সংবাদমাধ্যেমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, বিনিয়োগকারী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হওয়া মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে সাররণ মানুষ আতঙ্কিত। যার কারণে তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন। তারা বলছেন, মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে শুধু ব্যাংক খাত নয়,অস্থিরতা দেখা দিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতেও।

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক সময়ে ১০টি ব্যাংক দুর্বল হওয়ার নেপথ্যে মিডিয়া ট্রায়াল এক ধরনের ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ গত সোমবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট- বিএফআইইউর সূত্রের বরাত দিয়ে একটি অনলাইন পোর্টালে ‘৯ শিল্প গ্রুপে রিসিভার বসাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে ওই প্রতিবেদনটি আরও কয়েকটি গণমাধ্যম অনেকটা হুবহু প্রকাশ করে। তবে বিএফআইইউ ওই সংবাদের সত্যতা স্বীকার করেনি। বিষয়টিকে মিডিয়া ট্রায়াল হিসেবেই দেখছেন অংশীজনরা।

এ বিষয়ে বিএফআইইউর উপ-প্রধান এ কে এম এহসান বলেন, বিএফআইইউ অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কোথাও রিসিভার নিয়োগ দিতে পারে না। রিসিভার নিয়োগ দেন আদালত। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বিএফআইইউ বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়নি। ওই অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনে বলা হয়- ব্যাংকের ঋণ আদায়ের জন্য ৯টি শিল্প গ্রুপে রিসিভার বসাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাদের মূল কাজ হবে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি খুঁজে বের করা এবং সেই সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করা।

বিজ্ঞাপন

তথ্য বলছে- আদালতের বাইরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির অপরাধ বিচার (জাজ) করাকে মিডিয়া ট্রায়াল বলে সম্বোধন করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, এমন কোনো বেআইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যা কোনো ব্যক্তির জীবন, সুনাম এবং সম্পত্তির ক্ষতির কারণ হয়। এ ছাড়াও দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তিকে অপরাধী বলা যাবে না। অংশীজনদের মতে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার কোনো বিকল্প নেই। সাংবাদিকতা হলো সঠিক তথ্য সরবরাহ করা। সাংবাদিকতায় সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের বাইরে কোনো কিছু গ্রহণযোগ্য নয়।

এ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, মিথ্যা তথ্যে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ হলে পুরো বিশ্বে ভুল বার্তা যায়। এতে দেশি- বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। তাই মিডিয়া ট্রায়ালে যেন কোনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে না পড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি-বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন- পোশাকশিল্পের বাজার আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ওপর নির্ভর করে। পোশাকশিল্প প্রায়ই এক ধরনের মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এক প্রশ্নে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি- বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গত সরকারের সময়ও ভুল তথ্য পরিবেশন করে ভুলনীতি তৈরি করা হয়েছে। তাই সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে- মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধে সাংবাদিকতার সব নীতিমালা মেনে চলতে হবে। একতরফা সংবাদ পরিবেশন অপসাংবাদিকতার শামিল। এতে ব্যবসায়ী ও ব্যবসা উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এবিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, একতরফা সংবাদ পরিবেশন অন্যায়। সেটা রাজনীতিতে হোক আর ব্যবসায়। প্রমাণিত হওয়ার আগে কোন জিনিস প্রকাশিত হলে তখন পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়। এটা কোনভাবেই কাম্য না। আমরা মানুষের আস্থার ওপর ব্যবসা করি। ব্যাংক, সাপ্লায়ার, লোকাল ক্রেতা, বিদেশি বায়াররা আমাদের বিশ্বাস করে। আমাদের একটা ব্রান্ড ভ্যালু থাকে। এখানে মিডিয়ার ট্রায়াল হলে অনেকে বিশ্বাস করে ফেলেন।

অর্থনীতিতে মিডিয়া ট্রায়ালের বিষয়ে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, মিডিয়া ট্রায়াল শুধু কাউকে হেয় প্রতিপন্নই করে না, অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব নানামুখী। মিডিয়া ট্রায়ালের লক্ষ্যবস্তু যদি কোনো ব্যবসায়ী হন, তবে এটা তার ব্যবসাবাণিজ্যে ধস নামিয়ে দিতে পারে। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেয়। অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। মিডিয়া এর দায় এড়াতে পারে না। তাই খবর প্রকাশের আগে গণমাধ্যমকেও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করা মিডিয়ার দায়িত্ব।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এমন ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা উচিত নয় যাতে ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্প উদ্যোক্তা এবং জনসাধারণের ক্ষতি হয়। রিপোর্ট অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু। তাই ব্যবসায়ীদের মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে ক্ষতি না করে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।