জ্বালানি তেলের দাম কামানোর সুযোগ রয়েছে: বিপিসি চেয়ারম্যান
ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়ার পর ডিজেলে লিটার প্রতি ১.৬৬ টাকা মুনাফা করছে। দাম কিছুটা কমানোর সুযোগ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) কারওয়ান বাজার বিপিসির লিয়াজোঁ অফিসে এক সেমিনারে এক প্রশ্নের তিনি মন্তব্য করেছেন।
চেয়ারম্যান বলেন, আমার নির্দেশ হচ্ছে কোন কিছু গোপন করার চেষ্টা করা যাবে না। সবকিছু থাকতে হবে স্বচ্ছ এবং উন্মুক্ত। বিপিসির কিছু গ্রে এরিয়া রয়েছে এ কথা স্বীকার করি। এটা হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে অদক্ষতা। আমরা দক্ষতা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছি, উদ্যোগ ছোট ছোট হতে পারে, কিন্তু যোগফল অনেক বেশি। আমরা প্রতিযোগিতামুলক ক্রয়াদেশ প্রদান এবং আলোচনার মাধ্যমে প্রিমিয়াম খরচ অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। জুলাই-ডিসেম্বরে প্রিমিয়াম খরচ ৮.৮৩ ডলারের নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আগে জি টু জি ভিত্তিতে আনা জ্বালানি তেলে ১২.০৩ ডলার এবং দরপত্রের মাধ্যমে আনা তেলে ৯.৩২ ডলার পরিশোধ করা হতো। প্রিমিয়াম খরচ কমে যাওয়ায় বিদায়ী জুলাই-ডিসেম্বর মাসে ৭৬৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বিপিসির। এভাবে আমরা তেলের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
তিনি বলেন, আমি বিসিআইসিতে কাজ করেছিলাম সেই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। আমি যোগদান করার পর দেখলাম, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আনা তেলের তুলনায় জি টু জি ভিত্তিতে আনা তেলে প্রিমিয়াম খরচ বেশি। আমরা তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন চালু হলে প্রিমিয়াম খরচ আরও কমে আসবে। পাইপলাইনটি চালু হলে সাগরে আসা বড় জাহাজ থেকে ডিজেল সরাসরি নারায়নগঞ্জ ডিপোতে চলে আসবে। প্রকল্পটি জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমাদের খরচ কিছুটা বেড়েছে। ২০২২ সালের ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকার মতো, এখন ১২০ টাকার উপরে দিতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দামের উপর।
দেশের বাজারে দাম কমানোর আর কোন সম্ভাবনা আছে কি-না। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারদর কমে গেলে অবশ্যই কমে আসবে। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়, আমাদের প্রতিবেশি দেশের তুলনায় এখনই ২০ টাকার মতো দর কম রয়েছে। আরও বেশি কমে গেলে চোরাচালান হওয়ার একটা শঙ্কা থেকে যায়। এ ছাড়া দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্যও একটি কৌশল প্রয়োগ করা হয়। হঠাৎ বেড়ে গেলে যাতে ভোক্তার উপর বড় চাপ না পড়ে।
বিপিসির জেনারেল ম্যানেজার (বন্টন ও বিপণন) মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন বলেন, তেলের মূল্য এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ট্যাগ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারদর বেড়ে গেলে বাড়বে, কমে গেলে কমবে। একটি প্রাইসিং ফর্মুলার অধীনে বিপিসি এখন ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিনের দাম নির্ধারণ করছে। আগে ৩ মাস পর পর জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েলের দাম নির্ধারণ করলেও এখন ওই দুটি পণ্যের দাম বিইআরসি নির্ধারণ করবে। বিপিসি ফার্নেস অয়েল ও জেট ফুয়েলের দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব বিইআরসিতে প্রেরণ করবে।
সেমিনারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে দেখা গেছে ওই অর্থবছরে জ্বালানি তেলের ব্যবহার ৫ লাখ ৮৪ হাজার মে. টন কমে এসেছে। দু’একটি পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেলেও সবচেয়ে বেশি ডিজেলের প্রায় ৭ লাখ টনের মতো কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিজেলের ব্যবহার ছিল ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৩ টন। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যবহৃত হয়েছে ৪২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭৯ টন। ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া এর প্রধান কারণ বলে মনে করছে বিপিসি।
ডিজেলের পাশাপাশি অল্প পরিমাণে অকটেনের ব্যবহার কমেছে। আগের অর্থবছরে অকটেনের ব্যবহার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫৫৭ টন, যা গত অর্থবছরে হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৬ টন। তবে ব্যবহার বেড়েছে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট-এ-১ এর। আগের বছরের তুলনায় ৬৯ হাজার ৪৯৪ টন ব্যবহার বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ এসেছে দেশীয় উৎস থেকে, আর ৯২ শতাংশ জ্বালানি যোগান এসেছে আমদানি থেকে। ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ৬৩ শতাংশ হচ্ছে ডিজেল। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েল ১৪ শতাংশ।
সেমিনারে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) কবীর মাহমুদ, পরিচালক (অপরেশন ও পরিচালন) অনুপম বড়ুয়া, বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) এটিএম সেলিম অংশ নেন।