জানা গেলো জন্মদিনে রুনা লায়লার ‘বড় চমক’ কী
‘আমার প্রতি জন্মদিনে আপনারা অনেক শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান, ভালোবাসা দেন, উপহার দেন। সেই সঙ্গে দোয়া-আশীর্বাদ তো থাকেই আপনাদের। ভাবছি আমার এবারের জন্মদিনে আপনাদের একটা উপহার দেবো’– এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন গানের মহাতারকা রুনা লায়লা। গতকাল সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করেছিলেন তিনি। সেই উপহারকে ‘বড় চমক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
তাই গতকাল পর্যন্ত সেই ‘বড় চমক’ ফাঁস করতে চাননি রুনা লায়লা। তবে আজ তার জন্মদিনে জানা গেলো কি সেই চমক! সেই উপহারটি হলো অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ‘দ্য রুনা লায়লা’।
আজ (১৭ নভেম্বর) রুনা লায়লার জন্মদিন। এ উপলক্ষে শ্রোতা-ভক্ত ও সংগীতানুরাগীদের অন্যরকম উপহার দিলেন তিনি। ইউটিউব চ্যানেলটির (https://www.youtube.com/@TheRunaLaila) ভিডিও ভালো লাগলে লাইক, সাবস্ক্রাইব ও শেয়ার করার অনুরোধ জানিয়েছেন দেশবরেণ্য এই সংগীতশিল্পী।
ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘গানের জগতে আমার ৬০ বছরের পথচলায় যা কিছু করেছি এবং আগামীতে কী করতে চাই সেগুলো তুলে ধরতে আপনাদের সবাইকে পাশে চাই। আপনাদের ভালোবাসা যেন থাকে। আপনারা ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। নিজের যত্ন নেবেন। আমি সবাইকে ভালোবাসি। অনেক ধন্যবাদ।’
ভিডিও বার্তা শেয়ার দিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রুনা লায়লা লিখেছেন, ‘জন্মদিনের শুভেচ্ছার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ! আমার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল শেয়ার করে বেশ উচ্ছ্বসিত লাগছে।’
রুনা লায়লার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা প্রথম কন্টেন্ট হলো ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’র ভিডিও। বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে তার এই পরিবেশনা। গানটি লিখেছেন মাসুদ করিম, সুর করেছেন সুবল দাস।’
ইউটিউবে আপলোড করা রুনা লায়লার দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ‘হ্যালো হাই’। বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে ‘সুপারুনা’ অ্যালবামে ছিল এটি। ১৯৮২ সালের ১ ডিসেম্বর ইএমআই মিউজিক কোম্পানি থেকে এই অ্যালবাম প্রকাশের প্রথম দিনেই ১ লাখ কপি বিক্রি হয়। এজন্য উপহার হিসেবে গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রুনা লায়লা। অ্যালবামটির কাজ হয়েছিলো লন্ডনে, যেখানে একসময়ের বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলস গান রেকর্ডিং করতো।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই কণ্ঠশিল্পী ক্যারিয়ারে মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। এরমধ্যে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলিউডের ‘ঘারোন্দা’ (১৯৭৭) ছবিতে জয়দেবের সুরে ‘তুমহে হো না হো’ ও ‘দো দিওয়ানে শেহার মে’ (সহশিল্পী: ভূপিন্দর সিং) গান দুটি আপলোড করেছেন তিনি। এছাড়া রয়েছে একটি করে বাংলা দেশাত্মবোধক ও ফোক গান এবং পাঞ্জাবি গান।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। জন্মদিন উপলক্ষে ভক্ত, স্বজন, পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ভরে আছে সেসব ভালোবাসায়। কিংবদন্তি এই শিল্পীর গান গেয়ে সম্মান জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীরা।
ছয় দশকের সংগীত জীবনে রুনা লায়লার প্রাপ্তি অসামান্য। কালজয়ী অসংখ্য গান উপহার দিয়েছেন, বলিউডে খ্যাতিমান সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের সঙ্গে গান করেছেন, উপমহাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন, গোল্ড ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, মডেল হয়েছেন, রিয়েলিটি শো’র বিচারকের আসনে বসেছেন, মানবতার কল্যাণে ভূমিকা রেখেছেন। এমন আরও অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে তার নামের পাশে। গুণী এই শিল্পী অনন্য কণ্ঠে মন্ত্রমুগ্ধ সবশ্রেণির সংগীতপিপাসু।
রুনা লায়লা মোট আটবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। ‘দি রেইন’, ‘জাদুর বাঁশি’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেবদাস’, ‘প্রিয়া তুমি সুখী হও’ ও ‘তুমি আসবে বলে’ ছায়াছবিতে গান গেয়ে সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
রুনা লায়লার কালজয়ী গানের তালিকায় রয়েছে ‘যখন আমি থাকবো নাকো’, ‘বুকে আমার আগুন জ্বলে’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’, ‘আয়রে মেঘ আয়রে’, ‘এই বৃষ্টিভেজা রাতে’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘পাখি খাঁচা ভেঙে উড়ে গেলে’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত’, ‘সুখ তুমি কী বড় জানতে ইচ্ছে করে’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল’ প্রভৃতি। দেশের গানের তালিকায় উল্লেখযোগ্য– ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যরাগে’, ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো’।