জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন মিডিয়া, অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত সাংস্কৃতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ-সিজেএফবি'র ২৩তম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা শেরাটন হোটেলের গ্রান্ড বলরুমে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও জানা যায়, সিজেএফবি পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এর টাইটেল স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হয়েছে দেশের অন্যতম বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন একুশে টিভির চেয়ারম্যান ও সিইও আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসনুভা মাহবুব সালাম, সিজেএফবির সভাপতি এনাম সরকার, সাধারণ সম্পাদক এমএস রানা ও কনভেনর তামিম হাসান। উপস্থাপনা করেন অভিনেতা এফ এস নাঈম ও শান্তা জাহান।
প্রতিবারের মতো এবারও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের সঙ্গীত-চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন মাধ্যমের বছর সেরা পারফর্মারদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হবে ইটিভ-সিজেএফবি সন্মাননা। থাকবে দেশ সেরা তারকাদের পারফরমেন্স।
বিজ্ঞাপন
সিজেএফবি'র বিগত ২২ বছরে একুশে টিভি টানা ৭ বছর অফিসিয়াল ব্রডকাস্ট পার্টনার হিসেবে যুক্ত ছিল। এবারই প্রথমবার টাইটেল স্পন্সর হয়ে সিজেএফবি'র সঙ্গে যাত্রা শুরু করল একুশে টেলিভিশন। এই যাত্রা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান ইটিভি'র চেয়ারম্যান আবদুস সালাম এবং সিজেএফবি'র সভাপতি এনাম সরকার।
উল্লেখ্য, দেশের জাতীয় দৈনিকের সাংস্কৃতিক সাংবাদিকদের সমন্বয়ে ১৯৯৯ সালে গঠিত হয়-কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ-সিজেএফবি। সংগঠনের ২৫ বছরে এটি সিজেএফবি'র ২৩তম পুরস্কার বিতরণী আসর।
বাংলাদেশের ফ্যাশন অঙ্গনের সুপরিচিত মুখ এ বি ওয়ালিউদ্দিন চৌধুরী। ২০০২ থেকে ফ্যাশন অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘ ক্যরিয়ারে নানা ধরনের কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন তিনি।
ওয়ালি একাধারে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার, ফ্যাশন কোরিওগ্রাফার, ইভেন্ট অর্গানাইজার এবং মডেল গ্রুমিং স্কুলের পরিচালক।
তবে বিগত কয়েক বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। কিন্তু দেশের বাইরে থেকেও নিজের প্যাশনকে ভুলে যাননি। তাইতো সেখানেই গড়ে তুলেছেন নিজের কোম্পানি। ‘অ্যাবাউট টাইম ইভেন্ট আইএনসি’ নামের এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি থেকে আগামী ২০২৫ সালে একটি শো করার পরিকল্পনা করছেন।
আর এবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত প্রবাসী বাঙালিদের বড় আয়োজন ‘আইকনিক স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ পেয়েছেন’ তিনি। সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার ও কোরিওগ্রাফার ক্যাটাগরিতে তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে বিদ্যা সিনহা মিম, তানজিন তিশা, সজল, ইমন, নিরব, প্রভা, সামিনা চৌধুরী, স্বপ্নিল সজীবসহ বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয় তারকারা পুরস্কার গ্রহণ করতে অংশ নিয়েছেন।
পুরস্কার পেয়ে ওয়ালি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে এমন পুরস্কার যে কোন শিল্পীকে অনুপ্রাণীত ও গর্বিত করে। আমি আমার দেশের জন্য আরও ভালো ভালো কাজ করে যেতে চাই। যাতে বাংলাদেশের মুখ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল হয়।’
নিউইয়র্কে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গড়ে তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কালচারকে যুক্তরাষ্ট্রে তুলে ধরার জন্যই এটি গড়ে তুলেছি। গান, নাচ, ফ্যাশন- এসব কিছু নিয়েই আমি কাজ করবো।’
নিজের জার্নি নিয়ে ওয়ালি বলেন, ‘অনেকটা শখের বসে ২০০২-৩ সালের দিকে ফ্যাশন অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত হই। কাজটি এতোটাই ভালোলেগে যায় যে, নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য ২০০৫-এ আইএনআইএফডি থেকে ২ বছরের অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা কোর্স করি ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর। তারপর থেকে দেশে-বিদেশে বড় বড় অনেক শো করেছি। এরমধ্যে রয়েছে লণ্ডনে পারা ফ্যাশন উইক, যেখানে বিবি রাসেল, কুহু প্লামন্দন, টুটলি রহমানের মতো প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে আমার পোশাকও এক্সিবিশন হয়। এছাড়া ২০১৬ ও ১৭ তে নেপাল ফ্যাশন উইক, ভারতের দিল্লীতে ২০১৫ ও ১৬ সালে দুই বার এশিয়ান ডিজাইনার উইক, দেরাদুন ফ্যাশন উইকসহ দেশের সব বড় ফ্যাশন উইকে অংশ নিয়েছি নিজের ডিজাইন করা পোশাক নিয়ে। ডিজাইনার পেশার বাইরে আমার ওয়ালিজ অ্যাসোসিয়েট নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি চালিয়েছি ১০ বছর। সেখান থেকে অনেক ধরনের আয়োজন করেছি। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- বিউটি পেজেন্ট ‘মিস্টার এন্ড মিসেস ফটোজেনিক’। এর চারটি সিজন করেছি।’
আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর সফলতার ২০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে বৈশাখী টেলিভিশন। বাংলাদেশের সংস্কৃতি লালনের অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু হয় বৈশাখী টেলিভিশনের। নতুন বছরে পা রাখার গৌরবময় সময়টাকে স্মরণীয় করে রাখতে ২৭ ডিসেম্বর বৈশাখীর পর্দা সাজানো হয়েছে গান, নাটকসহ নানা অনুষ্ঠান দিয়ে।
সকাল ১১টায় বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে রয়েছে কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতা। যদিও সকাল ৮টা ৩০ মিনিটেই শুরু হবে ‘২০ বছরে বৈশাখী’ শিরোনামে সরাসরি সংগীতানুষ্ঠান, চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে থাকছে দেশের স্বনামখ্যাত রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুণী ব্যক্তিত্বদের শুভেচ্ছা বক্তব্য।
ডেপুটি হেড অব প্রোগ্রাম লিটু সোলায়মানের প্রযোজনায় সরাসরি বৈশাখীর সংগীতানুষ্ঠান ‘২০ বছরে বৈশাখী’ প্রচার হবে ১০টি সেগমেন্টে। প্রথম সেগমেন্ট শুরু হবে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে। তাসনুভা মোহনার উপস্থাপনায় দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করবেন মনজুরুল ইসলাম খান ও চম্পা বনিক। সকাল ৯.১৫ মিনিটে শুরু হওয়া দ্বিতীয় সেগমেন্টে নজরুল সংগীত পরিবেশন দেবলিনা সুর ও ইউসুফ আহমেদ খান। সকাল ১০.৪০ মিনিটে আধুনিক গান গাইবেন খুরশিদ আলম ও শবনম প্রিয়াংকা, বেলা ১১.২০ মিনিটে গাইবেন নদী ও তাসনিম স্বর্ণা।
তাবাসসুম প্রিয়াংকার উপস্থাপনায় দুপুর ১২.১০ মিনিটে আধুনিক গান গাইবেন সাব্বির ও প্রিয়াংকা বিশ্বাস। দুপুর ১.১০ মিনিটে নাশিদ গান পরিবেশন করবেন গাজী আনাস ও তার দল। দুপুর ২.৩৫ মিনিটে ফোক গান পরিবেশন করবেন কামরুজ্জামান রাব্বী ও লিটা সরকার। বিকাল ৩.৪০ মিনিটে ফোক গান পরিবেশন করবেন সায়েরা রেজা ও সাগর বাউল।
তমা রসিদের উপস্থাপনায় সন্ধ্যা ৫.৩০ মিনিটে ফোক গান পরিবেশন করবেন আশিক ও অনন্যা আচার্য্য। রাত ৮.৩০ মিনিটে বৈশাখী ফোক লাইভে অংশ নেবেন সালমা ও তার দল। সংগীতানুষ্ঠান ছাড়াও সরাসরি ইসলাম ও সমাধান নিয়ে হাজির হবেন উপাস্থাপক এইচ এম বরকতউল্লাহ। অতিথি থাকবেন ইসলামী স্কলার আহমদ উল্লাহ।
রাত ১০.০০টায় প্রচার হবে মহিন খানের রচনা ও পরিচালনায় একক নাটক ‘টক্কর’। এতে অভিনয় করেছেন নিলয়, হিমি, রাশেদ সীমান্ত, ময়মুনা মম প্রমুখ। রাত ১২.০০টায় প্রচার হবে বাংলা সিনেমা ‘মিয়া বাড়ির চাকর’। এতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, রাজ্জাক, হুমায়ুন ফরীদি প্রমুখ।
২০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বৈশাখী টেলিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক টিপু আলম মিলন বলেন, আমাদের জন্য এদিনটি বড়ই আনন্দের। ২০টি বছর একটি চ্যানেলের জন্য কম কথা নয়। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যারা বৈশাখী টেলিভিশনের সঙ্গে ছিলেন এখনও যারা আছেন তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং দর্শকদের অফুরন্ত ভালোবাসার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। বৈশাখী টেলিভিশন যাত্রা শুরুর পর থেকেই দর্শকদের কথা চিন্তা করে নানাবিধ অনুষ্ঠান প্রচার করে আসছে। কারণ দর্শকদের ভালোবাসা ছাড়া এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব ছিল না। ভবিষ্যতেও বৈশাখী টেলিভিশন সবশ্রেনীর দর্শকের কথা মাথায় রেখে আরো নতুন নতুন অনুষ্ঠান এবং বরাবরের মতো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করবে। ব্যাপক আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল আমাদের কিন্তু বিশেষ কারণে এবারও বৈশাখী টিভি কার্যালয়ে তেমন আয়োজন থাকছে না, তবে পর্দায় এ আয়োজনের কোনো কমতি নেই। ২০ বছরে বৈশাখী টিভির এ পর্দা আয়োজন দর্শকদের ভালো লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সবশেষে এমন আনন্দঘন মুহূর্তে বৈশাখী টেলিভিশনের সম্মানিীত সকল দর্শক, বিজ্ঞাপণদাতা, কেবল অপারেটরসহ সকল শুভানুধ্যায়ীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
২০২৪-এর আছে আর মাত্র অল্প ক’টা দিন। বছর শেষে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। শোবিজ অঙ্গনও তার বাইরে নয়। আর শোবিজের কথা আসলে শুরুতেই উঠে আসে চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ। ফিরে দেখা যাক কেমন ছিলো এ বছরের ঢালিউডের চিত্র-
বলা যায়, শুরুতে ভর করা ব্যর্থতা শেষে রূপ নিয়েছে হতাশায়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ৪৯ ছবি। ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে আরও এক ছবি। বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি গল্পনির্ভর মিলিয়ে সিনেমার সংখ্যা ৫০টি।
এবারও সিনেমা ছিল উৎসবকেন্দ্রিক। অর্থাৎ দুই ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা ছিল। বছরের বাকি সময় কেটেছে হতাশায়। বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে মুক্তি পায় ‘শেষ বাজি’, ‘কাগজের বউ’, ‘রুখে দাঁড়ও’ তিনটি সিনেমা।
এই তিনটি সিনেমা মুখথুবড়ে পড়ে। চলচ্চিত্রের বছর শুরু হয় ব্যর্থতা দিয়ে। এর পর রোজার ঈদ পর্যন্ত মুক্তি পায় আরও চার সিনেমা। প্রার্থনা ফারদিন দীঘি অভিনীত ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’, অপু বিশ্বাসের ‘ট্র্যাপ’ ও ‘ছায়াবৃক্ষ’ এবং জয়া আহসানের ‘পেয়ারার সুবাস’। জয়া ও আহমেদ রুবেল অভিনীত ছবিটি কিছুটা আলোচনা তৈরি করলেও বাকিগুলো একেবারেই দর্শকখরা দেখা যায়। হল মালিকরা অভিযোগ করেন, তারা নাকি ছবিগুলো চালিয়ে বিদ্যুৎ বিলও তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। ‘পেয়ারার সুবাস’-্এর প্রিমিয়ারে এসে মারা যান অভিনেতা আহমেদ রুবেল।
চলতি বছর রোজার ঈদে মুক্তির প্রতিযোগিতা করে এক ডজন ছবি। অধিকাংশ ছবি নিয়েই দর্শকদের আগ্রহ তেমন দেখা যায়নি। তবে হিমেল আশরাফ পরিচালিত শাকিব খান অভিনীত সিনেমা ‘রাজকুমার’ কিছুটা আশার আলো দেখায়। কিন্তু সিনেমাটি নিয়ে নির্মাতা ও অভিনেতা যে গালগল্প শোনা গিয়েছিল সেটা প্রেক্ষাগৃহে দেখাতে পারেননি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ছবিটি ব্যবসাসফল হয়েছে ঠিকই কিন্তু ছবির মান ও নির্মাণে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি তেমনভাবে। বাকি ১০ সিনেমার মধ্যে ‘দেয়ালের দেশ’, ‘ওমর’, ‘কাজল রেখা’ ব্যবসায়িকভাবে সফল না হলেও প্রশংসিত হয়। এ ছাড়া ‘সোনার চর, ‘মেঘনা কন্যা’, ‘আহারে জীবন’, ‘গ্রিন কার্ড’, ‘মোনা: জ্বিন ২’, ‘মায়া: দ্য লাভ’, ‘পটু’, ‘লিপস্টিক’ ব্যবসায়িক দিক থেকে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
তবে দৃশ্য বদলায় ঈদুল আজহায়। মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত এবং রায়হান রাফী পরিচালিত সিনেমা ‘তুফান’। এই সিনেমা দিয়ে চাঙা হন হল মালিকরা। এই সিনেমার একাধিক গান জনপ্রিয়তা পায়। সিনেমা মুক্তির পর সেই জনপ্রিয়তার পারদ আরও ছড়াতে থাকে দর্শকদের হৃদয়ে। বছরের সেরা হিট তকমা পায় ‘তুফান’। ব্যবসায়িকভাবেও ছবিটি প্রত্যাশার তুলনায় বেশি সফলতা পায়। এই ছবির তাণ্ডবে মুক্তি পাওয়া বাকি আরও চার ছবি ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘ডার্ক ওয়ার্ল্ড’, ‘রিভেঞ্জ’, ‘আগন্তুক’ আলোচনায় আসতে পারেনি। যদিও ট্রেলার, পোস্টার ও বিষয়বস্তু দিয়ে কৌতূহল জাগিয়েছিল ‘ময়ূরাক্ষী’। ইয়ামিন হক ববিও নজর কেড়েছিলেন। তবে সফলতার দৌড়ে বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেনি।
উৎসবের সিজনে অর্থাৎ দুই ঈদের মাঝে মুক্তি পায় সোহেল মণ্ডল-নীলার ‘শ্যামাকাব্য’, তাসনিয়া ফারিনের ‘ফাতিমা’, ‘ডেডবডি’, ‘ময়নার শেষ কথা’, ‘সুস্বাগতম’, ‘আন্তঃনগর’ সিনেমাগুলো। এসব ছবি দেখতে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করেননি।
তবে দর্শক খরার মাঝেই আরো কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয় দেশের পটপরিবর্তনে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বন্যার কারণে স্থবিরতা নেমে আসে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দুটি সিনেমা মুক্তি পায়। এগুলো হলো ‘আজব কারখানা’ ও ‘অমানুষ হলো মানুষ’। পাঁচ মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পাওয়া ‘আজব কারখানা’র মাধ্যমে ঢালিউডে ক্যারিয়ারের অভিষেক হয় সুপার মডেল শাবনাজ সাদিয়া ইমির। তার সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা হলেও সফলতার মুখ দেখেনি। মনোয়ার হোসেন ডিপজল অভিনীত ‘অমানুষ হলো মানুষ’ ছবিটিও চরমভাবে হতাশ করে দর্শকদের।
অক্টোবরে আবারও শুরু হয় সিনেমা মুক্তি। ঈদের বাইরে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘দরদ’। অনন্য মামুন পরিচালিত এতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন বলিউড অভিনেত্রী সোনাল চৌহান। সিনেমাটি নিয়ে হল মালিকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু ছবিটি মুক্তির পর একেবারেই মুখথুবড়ে পড়ে। শাকিব খান বছরের শেষে এসে হতাশ করেন দর্শক ও হল মালিকদের। সাদামাটা গল্প ও নির্মাণ দিয়ে ছবিটি দর্শক ফেরাতে পারেনি। ‘দরদ’ ছাড়াও মুক্তি পেয়েছে আরও ১৫টি সিনেমা। এগুলো হচ্ছে ‘জিম্মি’, ‘শরতের জবা’, ‘বাদশা দ্য কিং’, ‘হৈমন্তীর ইতিকথা’, ‘চরিত্র’, ‘রংঢং’, ‘৩৬ ২৪ ৩৬’, ‘ভয়াল’, ‘দুনিয়া’, ‘নয়া মানুষ’, ‘৮৪০’, ‘হুরমতি’, ‘ডেঞ্জার জোন’, ‘মাকড়শার জাল’, ‘প্রিয় মালতী’। সিনেমাগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখাননি দর্শক।
গত ২০ ডিসেম্বর মুক্তি পায় ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’। এই সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে তার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি প্রশংসা পেলেও সিনেমা হলে দর্শকদের ভিড় নেই মোটেও। আগামী ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে জয়া আহসান অভিনীত সিনেমা ‘নকশী কাঁথার জমিন’। এটিই হবে বছরের শেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমা। এই সিনেমার ভাগ্যে কী আছে এখনো বোঝা মুশকিল।
বছরজুড়ে দেশের সিনেমার পাশাপাশি আমদানি করা হয় চারটি সিনেমা ‘হুব্বা’, ‘মি. অ্যান্ড মিসেস মাহি’, ‘ক্রু’ ও ‘স্ত্রী ২’। প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতে ভালো করলেও দেশে ব্যবসা করতে পারেনি ছবিগুলো।
‘পুষ্পা ২’ দেখতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে নারী মৃত্যুর ঘটনায় একের পর এক বিতর্কেই জড়াচ্ছেন দক্ষিণের সুপারস্টার অভিনেতা আল্লু অর্জুন। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এমনকী জেলও খাটতে হয়েছে অভিনেতাকে। তবে এবার আগুনে কিছুটা জল ঢেলে পরিস্থিতি শান্ত করলেন আল্লু।
প্রথমে ২৫ লাখ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও এবার নিহতের পরিবারকে ২ কোটি টাকা দিলেন অভিনেতা। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ক্রিসমাসের দিন হায়দরাবাদের কেআইএমএস হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে থাকা শ্রী তেজাকে দেখতে যান আল্লু অর্জুনের বাবা আল্লু অরবিন্দ এবং সিনেমার অন্যান্য নির্মাতারা। শ্রী তেজা পদপিষ্ট হয়ে নিহত সেই নারীর ছেলে। সেখানে গিয়ে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন আল্লু অরবিন্দ। তিনি ‘পুষ্পা ২’-এর প্রযোজক।
শ্রী তেজাকে দেখে হাসপাতালের বাইরে এসে আল্লু অর্জুনের বাবা আল্লু অরবিন্দ জানান, আট বছরের শ্রী তেজার জন্য আমরা সকলে মিলে ২ কোটি টাকা দেবেন তারা। এতে তার চিকিৎসা খরচসহ অন্যান্য সহায়তা মিলবে। আল্লু অরবিন্দ বলেন, শ্রী তেজার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। পরিবারের সহায়তায় আমরা ২ কোটি টাকা দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আল্লু অর্জুন দেবে ১ কোটি, চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবে ৫০ লক্ষ এবং পরিচালক সুকুমার দেবেন ৫০ লক্ষ টাকা। তেলঙ্গানা ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের সভাপতি দিল রাজুর মাধ্যমে এই টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে।
গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থিয়েটারে ‘পুষ্পা ২’-এর প্রিমিয়ার শোয়ে ভিড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শ্রী তেজার মায়ের। মারাত্মক জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শ্রী তেজাকে।
এ ঘটনার পর থেকেই তোপের মুখে পুষ্পা অভিনেতা। মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একরাত জেলও খেটেছেন তিনি। এরপর অভিনেতার বাড়িতেও হামলা করে জনতা। তেলেঙ্গনার বিধানসভাতেও উঠে আসে আল্লু অর্জুনের প্রসঙ্গ। যা নিয়ে বেশ কঠিন সময় পার করছেন আল্লু অর্জুন।