আসছে চঞ্চল চৌধুরীর নতুন ওয়েব সিরিজ ‘ফেউ’
গতকাল ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে কলকাতার সিনেমা ‘পদাতিক’। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃনাল সেনের (প্রখ্যাত নির্মাতা) চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। বরাবরের মতোই অভিনয় দিয়ে সবার মন জয় করেছেন তিনি। তবে এমন একটি বৈচিত্রময় এবং বিখ্যাত চরিত্রে চঞ্চলের অভিনয় যেন অন্য মাত্রা পেয়েছে। তিনি নিজেই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন।
চলচ্চিত্র উৎসবের দর্শকের মধ্যে সেই প্রশংসার রেশ যেতে না যেতেই চঞ্চল তার নতুন কাজের খবর নিয়ে হাজির। বেশ লম্বা বিরতির পর নতুন ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে দর্শকের সামনে আসছেন নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। চরকি অরিজিনাল সিরিজ ’ফেউ’ নিয়ে আসছে ৩০ জানুয়ারি ফিরছেন চঞ্চল। গতকাল (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে চরকির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ পেয়েছে ’ফেউ’–এর টিজার। যেখানে একটি সংলাপে শোনা যায়, ’ও সুনীল দা, ফেউ কারা?’ উত্তরে শোনা যায়, ’এজেন্ট। সরকারি গোয়েন্দাগে এজেন্ট কয়।’
‘ফেউ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ শৃগাল বা অন্যভাবে বললে বাঘের পেছন থেকে ডেকে ডেকে বাঘের আগমন জানিয়ে দেয় এমন শৃগাল। অর্থাৎ চালাক প্রকৃতির বলা যায়। অনুসরণকারী হিসেবেও ফেউ–এর ব্যবহার দেখা যায়। ফেউলাগা মানে কারও পেছনে লেগে তাকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত বা বিরক্ত করা।
সুকর্ন সাহেদ ধীমান পরিচালিত এই সিরিজে আরও অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, তানভীর অপূর্ব, হোসেন জীবন, তাহমিনা অথৈ, রিজভি রিজু, ফাদার জোয়া, বাবলু বোস, এ কে আজাদ সেতু।
নির্মাতা বলেন, ‘পুরো গল্প জুড়েই ফেউ শব্দটার উপস্থিতি আছে। গল্পের রাজনৈতিন বর্ণনাতেও ফেউ প্রাসঙ্গিক। মানুষের স্বভাবজাত আতঙ্ক, ভয় যখন দৈনন্দিন হয়ে যায় তখনও সেটা ফেউ শব্দ দিয়ে বোঝান সম্ভব। এই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস এবং উতড়ে যাওয়ার গল্প নিয়ে ’ফেউ’ সিরিজ। তাই সিরিজের নামকরণ ’ফেউ’ সবচেয়ে যৌক্তিক মনে হয়েছে।”
সিরিজে চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছেন সুনীল চরিত্রে। সিরিজে তিনি একজন ফটোগ্রাফার। ফেউ–তে ইতিহাসের একটা ছায়া রয়েছে, প্রেক্ষাপট রয়েছে। সেই ঘটনাগুলোর অনেক তথ্য সুনীল তার ক্যামেরায় ধরে রাখে বলে জানান চঞ্চল চৌধুরী। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ’আমরা যখন শুটিং করেছি তখন ছিল প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। মাস খানেক সুন্দরবনে শুটিং হয়েছে, যার মধ্যে আমি ছিলাম ২০ দিনের বেশি। রাতে যখন লঞ্চে ঘুমাতাম, খুব ঠাণ্ডা লাগত। আমি শিতের জামা–কাপড় পরেই ঘুমাতাম। তবে ঠাণ্ডার চেয়েও ভয়ের বিষয় ছিল কুমির। আমাদের লঞ্চ যেখানে নোঙর করা ছিল, সেখানে ছিল কুমিরটা। সকালে জানালা দিয়ে মুখ বের করলেই কুমিরসহ বিভিন্ন পশু–পাখি দেখা যেত। আমরা লঞ্চ থেকে শুটিং স্পটে যেতাম ছোট ছোট ট্রলারে। রাতেও শুটিং করতে হতো। খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিল।’
কাজী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ’কাজী চরিত্রটি এই এলাকায় প্রভাবশালী মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে সে খুব বেশিভাবে জড়িত। সব জায়গায় তার কর্তৃত্ব আছে কিন্তু সেটা সে বোঝাতে চায় না। এর মধ্য দিয়ে ওই এলাকার রাজনীতি বেশ ভালোভাবে উঠে এসেছে বলে আমার মনে হয়।’
তারিক আনাম খান জানান, খুলনা অঞ্চলে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কিন্তু তিনি কখনও সুন্দরবন দেখেননি। এবারই প্রথম তিনি সুন্দরবনের একদম ভেতরে গিয়ে শুটিং করেছেন। অভিনেতা বলেন, ‘‘আামার এলাকার ভাষার ব্যবহারে আমার খুব আরাম লেগেছে। কিছু বিষয় কানে লেগে আছে। আমাকে দেখে অনেকে বলেছে, ’উরে বাবারে আপনারে এতদিন পরে দেখলাম, সেই ছোট বেলায় দিখিছি। টেলিভিশনে দেখতি যাতাম ৫ মাইল দূরি। উরি আল্লাহ এ কি দেখতিছি, আপনারে একটু ছুঁয়ে দেখি।’ সাধারণ ভাষায় হৃদয়ের কথা বলে দিল, খুব ভালো লেগেছে আমার।”
১৯৭৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগণা জেলার দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে ঘটে যাওয়া গণহত্যার ছায়া অবলম্বনে ’ফেউ’ নির্মিত হলেও সিরিজটি ফিকশনাল। এর গল্প লিখেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান, রোমেল রহমান এবং চিত্রনাট্য করেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান, সিদ্দিক আহমেদ। ইতিহাসের সঙ্গে নিজের দেখা চরিত্র, নিজের জানা ঘটনা, নিজের অঞ্চলের গল্প সিরিজে তুলে ধরেছেন বলে জানান নির্মাতা।