জালেমের সাহায্যকারীও জালেম। আপনি কোনোদিন কারো ওপর জুলুম নির্যাতন করেননি। আপনি জুলুম থেকে মুক্ত একজন মানুষ। অথচ হাশরের দিন আপনাকে জালেমদের সঙ্গে ওঠানো হবে। কারণ দুনিয়াতে আপনি জুলুম-নির্যাতন করেননি বটে, কিন্তু জালেমকে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। এমনকি একটি শব্দ দ্বারাও যদি সহযোগিতা করা হয়, তবে সেটি জুলুম হিসেবে বিবেচিত হবে। আপনি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন, মানুষকে জুলুমের কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন, জুলুমকে উসকে দিয়েছেন, আপনি সত্যিকারের একজন জালেম। অথচ হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তার উল্টোটা।
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালেম হোক অথবা মজলুম। অর্থাৎ জালেমকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে এবং মজলুমকে জালেমের হাত হতে রক্ষা করবে। -সহিহ বোখারি : ২৪৪৩
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এ জালেমদের দিকে ঝুঁকবে না, অন্যথায় জাহান্নামের গ্রাসে পরিণত হবে এবং তোমরা এমন কোনো পৃষ্ঠপোষক পাবে না যে আল্লাহর হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করতে পারে, কোথাও থেকে তোমাদের কাছে কোনো সাহায্য পৌঁছবে না।’ -সুরা হুদ : ১১৩
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি একজন মুমিনকে হত্যার ব্যাপারে সামান্য একটু কথার দ্বারাও সহায়তা করবে, সে মহান আল্লাহর সঙ্গে এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার দুই চোখের মাঝখানে লেখা থাকবে- ‘আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত।’ -ইবনে মাজাহ : ২৬২০
কোরআন-হাদিসে বলা হয়েছে, জুলুম-নির্যাতনের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। ইসলামে জুলুম-নির্যাতন, অবিচার, বৈষম্য ও অন্যায়ের কোনো স্থান নেই। বরং এগুলো দূর করে একটি সুষম ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমানত তার হকদারদের হাতে ফেরতের নির্দেশ দিচ্ছেন। আর লোকদের মধ্যে ফায়সালা করার সময় আদল ও ন্যায়নীতি সহকারে ফায়সালা করো। আল্লাহ তোমাদের বড়ই উৎকৃষ্ট উপদেশ দান করেন। আর অবশ্য আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও দেখেন।’ -সুরা নিসা : ৫৮
বনী ইসরাঈলগণ তাদের পতনের যুগে আমানতসমূহ অর্থাৎ দায়িত্বপূর্ণ পদ, ধর্মীয় নেতৃত্ব ও জাতীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ তাদের মধ্যে অযোগ্য, সংকীর্ণমনা, দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিপরায়ণ, খেয়ানতকারী ও ব্যাভিচারীদের হাতে ন্যস্ত করায় সমগ্র জাতি অনাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে মুসলমানদের উপদেশ দেওয়া হচ্ছে, তোমরা বনী ইসরাঈলদের মতো অযোগ্য অসৎ ও জালেম লোকদের পরিবর্তে যোগ্য ও সৎ নেতৃত্বের হাতে নেতৃত্ব অর্পণ করো।
জুলুমের শাস্তি অত্যন্ত মারাত্মক। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এখন এ জালেম যা করছে আল্লাহকে তোমরা তা থেকে গাফেল মনে করো না। আল্লাহ তো তাদেরকে সময় দিচ্ছেন সেদিন পর্যন্ত যখন তাদের চক্ষু বিস্ফারিত হয়ে যাবে। তারা মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি ওপরের দিকে স্থির হয়ে থাকবে এবং মন উড়তে থাকবে। হে মুহাম্মদ! সেদিন সম্পর্কে সতর্ক করো, যে দিন আজাব এসে এদেরকে ধরবে। সে সময় এ জালেমরা বলবে, ‘হে আমাদের রব! আমাদের একটুখানি অবকাশ দাও, আমরা তোমার ডাকে সাড়া দেবো এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো।’ (কিন্তু তাদেরকে পরিষ্কার ভাষায় জবাব দেওয়া হবে) তোমরা কী তারা নও যারা ইতিপূর্বে কসম খেয়ে খেয়ে বলতেন, আমাদের কখনো পতন হবে না।’ -সুরা ইবরাহিম : ৪২-৪৪
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শুধু তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে থাকে। জুলুমবাজরা তাদের অত্যাচারের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে।’ -সুরা শুরা : ২২৭
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদ সমুহকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপ্রতিরোধ্য।’ -সহিহ বোখারি
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘কেউ যদি তার কোনো ভাইয়ের সম্মানহানি কিংবা কোনো জিনিসের ক্ষতি করে থাকে, তবে আজই তার কাছ থেকে তা বৈধ করে নেওয়া উচিত এবং সেই ভয়াবহ দিন আসার আগেই এটা করা উচিত, যেদিন টাকা কড়ি দিয়ে কোনো প্রতিকার করা যাবে না, বরং তার কাছে কোনো নেক আমল থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ হিসাবে মজলুমকে সেই নেক আমল দিয়ে দেওয়া হবে এবং অসৎ কাজ না থাকলেও উক্ত মজলুমের অসৎ কাজ তার ওপর বর্তাবে।’ -সহিহ বোখারি
লেখক: ধর্মীয় নিবন্ধকার।