শিশুদের প্রাণী পোষার অভ্যাস যেসব প্রভাব ফেলে
অনেকে কুকুর, বিড়াল, পাখি, খরগোশ সহ নানা ধরনের পোষা প্রাণীরাখতে পছন্দ করে। বাড়িতে পশুপাখি লালন পালন করা একটি নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব। অনেকে প্রাণীপোষ মানানোকে বাড়তি ঝামেলা মনে করেন। তবে পোষা প্রাণীবৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের জীবনে নানারকম ইতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। এমনকি শিশুদের মধ্যেও অনেক ভালো অভ্যাস গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
পৃথিবী যতটা মানুষের ঠিক ততটাই অন্যান্য জীবজন্তুরও। মানুষ উন্নত প্রাণী হওয়ায় অন্যান্য পশুর তুলনায় মানুষ বেশি যত্নশীল হতে পারে। পোষা প্রাণী এবং মালিকের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তা ব্যক্তি জীবনে ভালোবাসা, বিশ্বাস, সহানুভূতি এবং বোঝাপড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বভাব তৈরি করতে সাহায্য করে।
ভারতীয় প্রাণীখাদ্য প্রতিষ্ঠান কার্নিওয়েলের প্রতিষ্ঠাতা জে.এস. রমাকৃষ্ণ পশুপাখি পালনের উপকারিতা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন,‘শিশুরা যখন বাড়িতে পালিত পশু সঙ্গে বেড়ে ওঠে, তখন তাদের মদ্যে সহানুভূতির আধিক্য দেখা যায়। এমনকি শিশুদের মধ্যে দায়িত্ববোধও বাড়তি থাকে। আমরা কার্নিওয়েল আপনার পশু এবং পরিবারের মধ্যে মজবুত স্নেহের বন্ধন তৈরিতে বিশ্বাসী।’
একটি সাক্ষাৎকারে শিশুদের পরিবারে গৃহপালিত পশু থাকার বেশ কিছু প্রভাবশালী দিকও তুলে ধরেছেন তিনি। যেমন-
১. মানসিক চাপ: ঘরে একটি পালিত প্রাণী থাকলে শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা শেখানো অনেক সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে যখন শিশুরা উদ্বেগ বা মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। এছাড়া তাদের মধ্যে সহানুভূতি এবং অন্যের প্রয়োজনে নিজের পছন্দের সঙ্গে আপস করাও শেখায়। সামাজিকতা শেখানোর পাশাপাশি শিশুদের স্বাস্থ্যেও এর প্রভাব পরে। যেমন, শিশুরা পোষা প্রাণির সাথে খেললে অক্সিটোসিন নিঃসরণ হয় এবং কর্টিসলও কমে। এই প্রক্রিয়া শুধু ছোটদের নয়, বড়দের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।
২. চঞ্চলতা: সাধারণত পোষ্যদের সঙ্গে সময় কাটানো শিশুরা শারীরিক কার্যক্রমেও বেশি সময় কাটায়। তাদের সাথে খেলাধুলা বা হাঁটাহাটি বেশিকরা হয় বলে শিশেুদের এরকম শরীরচর্চার মতো কাজ হয়। এতে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে আর হৃদয়ও ভালো থাকে।
৩. যোগাযোগ: পোষ্য প্রাণীর সাথে সময় কাটানো শিশুরা একা বেড়ে ওঠা শিশুদের তুলনায় বেশি সামাজিকতা বজায় রাখতে পারে। প্রাণী পালনের ফলে শিশুদের মধ্যে যত্নশীল এবং সহানুভূতির স্বভাব গড়ে ওঠে। যেহেতু পশুরা কথা বলতে পারে না, তাই তাদের অনুভূতি বুঝে নিতে হয়। এই কারণে শিশুদের মধ্যে অপ্রকাশিত অনুভূতিও আয়ত্তে আনার এক প্রকার দক্ষতা লক্ষ্য করা যায়।
৪. এলার্জির সম্ভাবনা: পালিত পশু-পাখিতে শিশুদের এলার্জির সমস্যা হওয়ার ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। বরং এর বিপরীতে পশুসঙ্গে তাদের অ্যালার্জি আর অ্যাজমার মতো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে। গবেষণায় জানা যায়, পশুদের সংস্পর্শে থাকার শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৫. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: পোষা প্রাণীর সাথে মিথস্ক্রিয়া শিশুদের জ্ঞানের বিকাশকে উদ্দীপিত করে। পশু প্রাণিদের আবেগ ভাষায় প্রকাশ করতে না পারাই শিশুদের এই দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শিশুদের বেশি চিন্তা করে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তাকে উন্নত করে।
৬.ব্যক্তিত্বের উন্নতি: শিশুকে যখন পোস্যের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যেমন- খাওয়ানো, গোসল করানো, পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে রাখা, ট্রেনিং করানো তখন তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ স্থাপিত হওয়ার কারণে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস