পেঁয়াজের মাঠ থেকে চুরি হচ্ছে স্যালো মেশিন, বিপাকে কৃষক
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদের ভরা মৌসুমে মাঠ থেকে একের পর এক ঘটছে স্যালো মেশিন চুরির ঘটনা। ফলে সময় মতো ক্ষেতে পানি দিতে না পেরে সেচ সংকটে ভুগছে পেঁয়াজ চাষীরা। অন্যান্য ফসলের ফলনেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
সংকট কাটাতে কেউ কেউ নতুন করে শ্যালো মেশিন কিনে মাঠে স্থাপন করছেন। নতুন মেশিন কেনায় কৃষকের বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়।
জানা গেছে, চলতি বছর রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এখনো কিছু কিছু মাঠে পোঁয়াজ রোপণ চলছে। অন্যরা রোপণ শেষে ব্যস্ত সেচ দেওয়াসহ নানা পরিচর্যায়। ঠিক এমন সময়েই ঘটছে চুরির ঘটনা।
কাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দেড় মাসের ব্যবধানে মাঠ থেকে আমার দুটি শ্যালো মেশিন চুরি হয়েছে। আমার শ্যালো মেশিন দিয়ে শুধু আমি একাই নয়; মাঠের অনেক কৃষক তাদের ক্ষেতে সেচ দেন। আমার দুটি শ্যালো মেশিনসহ গত দুই মাসের মধ্যে এই মাঠ থেকে ৭ থেকে ৮ টি শ্যালো মেশিন চুরি হয়েছে। শ্যালো মেশিন চুরি হওয়ায় আমিসহ অন্য কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি।
একই মাঠের কৃষক মমিন মোল্লা বলেন, সেচ দেওয়ার জন্য দুই বছর আগে আমি প্রায় ১৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি শ্যালো মেশিন কিনে মাঠের মধ্যে স্থাপন করি। দুই মাস আগে রাতের অন্ধকারে চোর আমার শ্যালো মেশিনটি চুরি করে নিয়ে যায়। আবারও আমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে আরেকটি শ্যালো মেশিন কিনে বর্তমানে সেচ দিচ্ছি।
কৃষক আমিন শেখ জানান, আমাদের এই মাঠে পেঁয়াজ, গম, সজ, মশুরি ও সরিষার আবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি ফসলের ক্ষেতেই বর্তমানে নিয়মিত সেচ দিতে হচ্ছে। গত দুই মাসের মধ্যে এই মাঠ থেকে ৭ থেকে ৮টি শ্যালো মেশিন চুরি হয়েছে। একের পর এক শ্যালো মেশিন চুরি হওয়ায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। চুরির ভয়ে সেচ দেওয়া শেষে ভারি শ্যালো মেশিন খুলে বাড়ীতে নিতে হচ্ছে, আবার সেচ দেওয়ার সময় বাড়ী থেকে এনে মাঠে স্থাপন করতে হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুটিই বেড়েছে। আমাদের দাবী, পুলিশ যেন এই চোর চক্র ধরার বিষয়ে সক্রিয় হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিতপ্তরের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জেলার সফল কৃষি উদ্যোক্তা কাজী সিদ্দিকুর রহমান জানান, সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠে (গাইরের চকে) তার মাল্টা বাগান রয়েছে। পাশাপাশি এ মাঠে পেঁয়াজেরও আবাদ করেন তিনি। মাল্টা বাগান ও পেঁয়াজ ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য মাঠের মধ্যে আলাদা জায়গায় দুটি শ্যালো মেশিন স্থাপন করেন কাজী সিদ্দিক। গত ৫ই ডিসেম্বর দিবাগত রাতে অজ্ঞাতনামা চোর তার একটি শ্যালো মেশিন চুরি করে নিয়ে যায়। এরপর গত ২১শে জানুয়ারী দিবাগত রাতে তার অপর শ্যালো মেশিনটিও চুরি হয়ে যায়।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জনি খান বলেন, ফসলি জমিতে সময়মতো সেচ দিতে না পারলে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষকদের শ্যালো মেশিন চুরির বিষয়টি আমি আগামী আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে উত্থাপন করবো।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেন, শ্যালো মেশিন চুরির ঘটনায় কোনো কৃষক থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে চুরি ঠেকাতে ওই এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।