'আমরা কোনো সৎ পিতার অধীনে কাজ করতে চাই না'

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে শামিল হয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

সোমবার (৭ অক্টোবর) তারা যৌথভাবে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও টোটাল শাট ডাউন কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচির কারণে একেবারেই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে ক্যাম্পাসে। বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ প্রায় সব দাপ্তরিক কার্যক্রম।

বিজ্ঞাপন

কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, '১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় সিভাসুর বয়স আজ ২৯ বছর। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। অথচ জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পরে সিভাসুতে সকল বৈষম্য ও অপশক্তি দূর করে প্রতিষ্ঠানকে যখন ঢেলে সাজানো হচ্ছে, তখন সেই প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য উঠে পরে লেগেছে একটি চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রাযাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত, নেতৃত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সকল বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা। এটি কেবল অভ্যন্তরীণ একজন শিক্ষকের পক্ষেই জানা সম্ভব।'


তারা আরও বলেন, 'শুধু তাই নয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে একজন উপাচার্যের পক্ষে ভূমিকা রাখা তখনই সম্ভব যখন তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তরে ধারণ করবেন, অন্যথায় বাইরে থেকে কেউ এলে তিনি তার রুটিন কার্যক্রম চালাবেন, অতঃপর ভার্সিটি থেকে চলে যাবেন।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থী মো. শাহারিয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, গত ৬ অক্টোবর আমরা প্রেস ব্রিফিংয়ে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছিলাম, যার ২৪ ঘণ্টা শেষ। আমাদের যৌক্তিক ও ন্যায় সংগত দাবি যদি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা রোড ব্লক, আমাদের পেট হাসপাতালকে শাট ডাউনের আওতায় আনার মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। ইতিমধ্যে সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন টোটাল শাট ডাউনের আওতায় রয়েছে।'

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাধারণ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং এলামনাইরাও আজ সামনে থেকে বিক্ষোভ সমাবেশে ও টোটাল শাটডাউন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষিকা নাইমা ফেরদৌসী বলেন, 'এই বিশ্ববিদ্যালয়টা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাদের পিতার সমতুল্য। আমরা কোনো সৎ পিতার অধীনে কাজ করতে চাই না।'

খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষক জনাব মোর্শেদ বলেন, 'অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের মধ্য থেকে যোগ্য একজনকে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দিতে হবে। এই এক দফা দাবি শুধু এখনকার জন্য নয় সিভাসুর ক্ষেত্রে আজীবন বহাল থাকবে।'

ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের শিক্ষক ডা. রিদুয়ান পাশা বলেন, 'আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের উদ্ভাবিত পিবিএল, ইন্টার্নিশিপ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করে, সেইখানে এই গুণীজনদের বাদ দিয়ে বাইরে থেকে সৎ পিতাকে আমাদের জন্য নিয়োগ দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।'

শিক্ষার্থীরা গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ, ৩ অক্টোবর ক্লাস পরীক্ষা বয়কট ও অবস্থান কর্মসূচি, ৪ অক্টোবর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল, ৫ অক্টোবর রোড ব্লক, ৬ অক্টোবর টোটাল শাটডাউন ও ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধি দল নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।