ডিম নেই পাবনার বাজারে, বিপাকে ভোক্তারা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পাবনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রিতে বাধ্য করতে ভোক্তা অধিদফতর জরিমানা করায় ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। খুঁজে অতিরিক্ত মূল্যেও মিলছে না ডিম।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে পাবনার বাজারগুলোতে ঘুরে কোত্থাও ডিমের দেখা মেলেনি। এদিকে অস্থির সবজির বাজারও। অর্ধশত টাকার নিচে নেই কোনো সবজি। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ছুঁয়েছে প্রায় ৪০০ টাকার ঘর।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনার বড় বাজার ও লাইব্রেরি বাজার সহ অধিকাংশ বাজারেই ডিমের দোকান বন্ধ। প্রতিদিন ভোর থেকে খাচি খাচি ডিম সাজিয়ে যে ব্যবসায়ীরা বসে থাকতেন, দেখা মেলেনি তাদের। দুএকজন আশেপাশে থাকলেও দোকান বন্ধ রেখে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করছেন। ক্রেতারা ডিম কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। বাজারের সব জায়গায় ঘুরেও মিলছে না ডিম।

ক্রেতারা জানায়, এতদিন অতিরিক্ত মুনাফার জন্য চড়া দামে ডিম বিক্রি করেছে ব্যবসায়ীরা, সামর্থ্য না থাকায় অল্প করে হলেও ডিম কিনে খেয়েছেন তারা। কিন্তু এখন সেটিও বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

ক্রেতা মাহবুব মিয়া বলেন, বিলাসিতার জন্য না হোক অন্তত প্রয়োজনীয় হারে তো ডিমটা খেতে চায় সবাই। ব্যবসায়ীরা লাভ করবে, বাড়ি গাড়ি করবে। এতে দেশের মানুষ মরুক বা বাঁচুক সেটা তাদের বিবেচনার বিষয় নয়। কোনোভাবে বাঁচার উপায় নাই। পেপে ছাড়া পঞ্চাশ টাকায় এক সবজি মেলা অসম্ভব। এক কেজি কচু কিনতে গেলে ৬০ টাকা, বেগুন ৮০/৯০ টাকা। সপ্তাহ বা মাসে বাজারে যে দর বৃদ্ধির হিড়িক দেখা যায়, এক বছরে একজন চাকুরীজীবীর ওই টাকা ইনক্রিমেন্ট হয় না। তাহলে কিভাবে বাঁচবে মানুষ?

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, ফার্ম থেকে কেনা দামের থেকেও কমে বিক্রি না করলেই জরিমানা করা হচ্ছে। এজন্য তারা নতুন করে ডিম কিনছেন না, যা মজুত আছে লুকিয়ে বিক্রি করে শেষ করে আর ডিম আনবেন না। আগামীকাল ডিম বেচা বিক্রি সব বন্ধ বলেও জানান তারা।

ডিম বিক্রি বন্ধ রাখার ব্যাপারে পাবনার বড় বাজারের এক ব্যবসায়ী বার্তা ২৪.কম কে বলেন, সব স্তরে যদি শৃঙ্খলা না থাকে তাহলে শুধু আমাদের ধরে জরিমানা করে বাজার ঠিক করা সম্ভব নয়। আমরা কম দামে কিনতে পারলে অবশ্যই কমেই বিক্রি করবো। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। ফার্ম থেকে একটি ডিমের দাম প্রায় ১৩ টাকার ওপরে পড়ে যাচ্ছে। অথচ ম্যাজিস্ট্রেট এসে বলেন ১১টাকার বেশি দাম নেয়া যাবে না। বেশি দামে ক্রয়ের রশিদ দেখালেও জরিমানা করেন। তাহলে কিভাবে ডিম বিক্রি করবো?

তিনি বলেন, অতিরিক্ত লাভ করলে ফার্ম মালিক ও বড় আড়ৎদাররা করে। তারা যদি দাম না কমান আমাদের সাধ্য আছে কমানোর? অথচ দোকান খুললেই জরিমানা গুণতে হচ্ছে। দুএকজন ব্যবসায়ীর কাছে খুবই অল্প কিছু ডিম ছিলো, সেগুলো আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাজার ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আগামীকাল থেকে দোকান একদমই বন্ধ রাখবে ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে পাবনার বড় বাজারে আসা ক্রেতা শফিউল হাসান বলেন, বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। এ কয়দিন স্বাভাবিক লাভের বাইরে অতিরিক্ত লাভের জন্য চড়া দামে ডিম বিক্রি করলেন তারা। ডিম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই চলে গেছে । ব্যবসার নামে এমন দুর্বৃত্তায়ন রোধে সরকার প্রতিটি ডিমের মূল্য প্রায় ১১ টাকা করে বেধে দিয়েছেন। সে নির্দেশ তারা মানেন না। বাধ্য হয়ে ভোক্তা অধিদফতরকে দিয়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করছেন। তাতেও তারা থামছেন না। এবার ভোক্তা অধিদপ্তর ও সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ডিম বিক্রিই বন্ধ রাখলেন। যদিও তারা বলছেন কেনার চেয়ে কম দামে বিক্রি করলে লোকসানে পড়বেন, এজন্য ডিম বিক্রি করছেন না। 

এদিকে স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও। বেড়েছে ভোজ্য তেলের দামও। এ নিয়ে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। রবিবার (১৩ অক্টোবর) পাবনার বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম প্রায় ৪শ টাকা ছুঁয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৮০-৯০ টাকা, আলু ৫২ টাকা, পটল ৫৫ টাকা, করোলা ৮৫, বরবটি ৮০-৯০ টাকা, পেপে ২৫-৩০ টাকা, কচু ৫৫-৬০ টাকা, পাতা কপি ৬০-৭০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।