চাদরে ঢাকা মেয়ের মরদেহ, থামছে না বাবা-মায়ের কান্না

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ঘরের সামনে রাখা খাটিয়ায় চাদরে ঢাকা শাহিদা আক্তারের (১৩) মরদেহ। সেখানে বসে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করছেন স্বজনরা।

বিজ্ঞাপন

আর খাটিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইলে শাহিদার ছবি দেখে অঝরে কাঁদছেন তার বাবা-মা। বিলাপ করে বলছেন আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও, আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও। পরিবারের লোকজন তাদের শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্ত কিছুতেই কান্না থামাতে পারছেন না তারা।

বৃহস্পতিবার রাতে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের পশ্চিম দাপুনিয়া মহল্লায়। নিহত শাহিদা আক্তার ওই মহল্লার শহীদ মিয়ার মেয়ে।

গত বুধবার রাতে রাজধানী ঢাকার খিলগাওয়ের তিলপাড়া এলাকার নুরুল হায়দার রাকিবের বাসা থেকে শাহিদার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে শাহিদার মরদেহ বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে নিজ বাড়ি গৌরীপুরের পশ্চিম দাপুনিয়া গ্রামে নিয়ে আসা হয়।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শাহিদার বাবা শহীদ মিয়া পেশায় রিকশাচালক। মা মাহফুজা বেগম গৃহিণী। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে শাহিদা সবার বড়। ছোট বোন মীম আক্তারের বয়স আট ও ছোট ভাই মেহেদি হাসান মারুফের বয়স দুই বছর।

২০২০ সালে ঢাকায় নূরুল হায়দার রাকিবের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় শাহিদা আক্তার। রাকিব গৌরীপুর পৌর শহরের সতীশা মহল্লার হাসমত আলীর মেয়ের জামাতা।

গত বুধবার রাতে রাকিবের বাসায় সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়নায় পেচানো ঝুলন্ত শাহিদাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

শাহিদার বাবা শহীদ মিয়া বলেন, আমি গরিব রিকশাচালক মানুষ। ভিটেমাটি কিছু নেই। চার বছর আগে পাশ^বর্তী মহল্লার হাসমত আলী তার মেয়ের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজের জন্য আমার মেয়ে শাহিদাকে নিয়ে যায়। এখন সেই বাড়ি থেকেই মেয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। কেন আমার মেয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল আমি এর বিচার চাই।

শাহিদার মা মাহফুজা বেগম বলেন, গত রোযার ঈদের সময় মেয়ে বাড়ি ফিরে আর যেতে চাইছিল না। পরে হাসমত আলী বুঝিয়ে শোনিয়ে দুই মাসের কথা বলে কোরবানির ঈদের সময় শাহিদাকে ঢাকায় তার মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। গত সোমবার রাতে শাহিদার সাথে কথা হলে আমি বলি মা বাড়িতে এসে বেড়িয়ে যা। মেয়ে বলে এখন আসবো না কয়েকদিন পর একেবারেই চলে আসবো। কিন্তু এখন মেয়ে আসলো লাশ হয়ে। জীবিত মেয়েকে আর দেখা হলো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসমত আলী বলেন, আমার মেয়ে নাদিরা নাজনীন সেতু তার স্বামী রাকিবের সাথে ঢাকায় বসবাস করে। চার বছর ধরে শাহিদা ওদের সাথেই থাকতো। আমার মেয়ে শাহিদাকে বোনের মতো দেখতো। কিভাবে কি হল বলতে পারছি না। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসবো।