সংস্কার হয়নি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাবরেটরি, ব্যাহত হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংস্কার হয়নি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাবরেটরি, ব্যাহত হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা

সংস্কার হয়নি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাবরেটরি, ব্যাহত হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা

ফেনীতে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ল্যাব যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার ২ মাস পার হলেও এখনও সংস্কার হয়নি ল্যাবরেটরি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা। কবে নাগাদ ইনস্টিটিউটের ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি ল্যাবে ব্যবহারিক ক্লাস শুরু করা যাবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। শিক্ষার্থীরা বলছে, এতে করে তাদের কারিগরি শিক্ষায় ঘাটতি রয়ে যেতে পারে।

ইনস্টিটিউট হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট বন্যার পানিতে ডুবে যায় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ভবন, একাডেমি ভবনসহ নিচতলায় থাকা নয়টি ল্যাব। এতে প্রতিষ্ঠানের আসবাব, কাগজপত্রসহ ল্যাব ক্লাসে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১২টি ল্যাবে ক্ষতি হয়েছে ৯ কোটি ৮১ লাখ ৬১ হাজার ৫৯২ টাকা। বন্যায় সব মিলিয়ে ইনস্টিটিউটের ক্ষতি হয়েছে ১৪ কোটি ৯১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৭ টাকা।

বিজ্ঞাপন

কর্তৃপক্ষ জানায়, ভয়াবহ বন্যায় পদার্থ বিজ্ঞান ল্যাব, রসায়ন ল্যাব, মেশিনশপ, ওয়েল্ডিং শপ, মেটাল শপ, ফাউন্ড্রি শপ, টেস্টিং ল্যাব, পাওয়ার শপ, আরএসি ল্যাব, হাইড্রলিক্স ল্যাব, ইলেকট্রিক্যাল ওয়‍্যারিং ল্যাব, সার্কিট শপ, ইলেকট্রিক্যাল মেশিন শপ, ইএমএম ল্যাব, ইএনটি ল্যাব, সিভিল শপ, উড শপ, জিওটেকনিক্যাল ল্যাবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কম্পিউটার সায়েন্স এবং আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট ল্যাব দোতলায় থাকায় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও নিচতলার মেকানিক্যাল, পাওয়ার, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল ডিপার্টমেন্টের সবকয়টি ল্যাব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে ব্যবহারিক ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এখানে শ্রেণিকার্যক্রম ছাড়াও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষা। বন্যার ২ মাস পার হলেও এখনও সংস্কার না হওয়াতে ব্যবহারিক ক্লাস করতে পারছেন না তারা।

মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নূর জাহান কাওসার বলেন, ডিপ্লোমাতে পড়াশোনা নাই, তার মধ্যে এখন চলমান সেমিস্টারে ল্যাব ক্লাস অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সপ্তম সেমিস্টারে আমাদের থিওরির চেয়েও বেশি ল্যাব ক্লাস রয়েছে। এই সেমিস্টারের ল্যাব ক্লাসগুলো আমাদের ডিপ্লোমা পড়াশোনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু ওইসব ল্যাব ক্লাসগুলো করতে না পারলে শিক্ষায় অনেক ঘাটতি থেকে যাবে, তা যদি পরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ে পুষিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ভাল হবে।

সিভিল ডিপার্টমেন্ট দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জান্নাত বর্ষা বলেন, ল্যাব ক্লাস না হওয়াতে আমাদের পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রমে নানামুখী বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। এই সেমিস্টারে আমাদের ডিপার্টমেন্ট একটা বিষয় শুধু ব্যাবহারিকের ওপর, কিন্তু ল্যাব অচল হয়ে পড়াতে আমরা তা করতে পারছি না।

মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের পাঁচটি ল্যাব মিলে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিপার্টমেন্টের ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর মো. আব্দুল হান্নান। তিনি জানান, ল্যাবের আসবাবপত্র, যন্ত্রাংশ এবং ব্যয়বহুল প্রকৌশল মেশিনগুলো পুনরায় সচল এবং নতুন মেশিন কেনা অনেক সময়ের বিষয়। তাই দ্রুত চাইলেও ল্যাব ক্লাসগুলো পুনরায় চালু করা যাবে না।

পাওয়ার ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, চলমান সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা ল্যাব ক্লাস না করতে পারায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ঠিক কবে নাগাদ ল্যাব ক্লাসে ফিরতে পারবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে ল্যাব পুরোপুরি সচল করতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।

এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শেখ মুস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্যায় নন-টেক বিভাগসহ মোট সাতটি বিভাগের মধ্যে পাঁচটি বিভাগের ল্যাব ক্লাস বন্ধ রয়েছে। বন্যার পর চলমান সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের থিওরি ক্লাস নেওয়ার মত পরিবেশ তৈরি করা গেলেও ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়ার পরিস্থিতি কবে নাগাদ তৈরি হবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

অধ্যক্ষ আরো বলেন, তবে ফাইনাল সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট থেকে ক্যাম্পাসে ভাইভা দেওয়ার সময় ল্যাবের ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রাংশের খুঁটিনাটি দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে, যা পরে শিক্ষা, চাকরি ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।