সিলেট আদালত পাড়ায় বহিরাগতদের মহড়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ৩নং বার হলের দ্বিতীয় তলায় নবনিযুক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এটিএম ফয়েজ’র কক্ষে গিয়ে তাকে খোঁজাখুজি করে মহড়া দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আদালতের পিপি এটিএম ফয়েজ।
তিনি জানান, আজকে সিলেট জেলা ও দায়রা জজের বিভিন্ন মামলাগুলো পরিচালনা করে আমি আমার চেম্বারে আসি। সেখানে অনেক আইনজীবী আমাকে ফুলের তোড়া দেন ও মিষ্টি বিতরণ করেন। আদালতের কাজ শেষ করে আমি আমার বাসায় চলে আসি। বাসায় আসার পর জানতে পারি কিছু বহিরাগত আমার কক্ষে গিয়ে আমাকে খোঁজাখুজি করেছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটা শুধু আমার চেম্বার নয় এটা সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির চেম্বার। এই ধরণের ঘটনা যদি আগামী দিনেও ঘটে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবো।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে আমি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় সিলেটের সাধারণ আইনজীবীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরে তাদেরকে ১ ঘন্টা সময় বেধে দিয়েছেন।
তবে সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি অশোক পুরকায়স্থ ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ইয়াহ-ইয়া চৌধুরী (সুহেল) মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও কল রিসিভ করেননি। এছাড়াও সরাসারি গিয়ে তাদের বক্তব্য নিতে চাইলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে, একইদিন সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নবনিযুক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নিয়োগকে প্রত্যাখ্যান করে আদালত পাড়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে আইনজীবীরা। একপর্যায়ে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নিয়োগপ্রাপ্ত পিপি এডভোকেট এটিএম ফয়েজের কক্ষের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আন্দোলনকারীরা।
এসময় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বলেন, ‘সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এডভোকেট এ টি এম ফয়েজকে প্রতিহত করা হবে। তার বিরুদ্ধে আদালতের আইনজীবিরা ক্ষিপ্ত। তাকে প্রতিহত করতে সকল আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ। সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এডভোকেট এ টি এম ফয়েজ একজন বহুরুপি ও বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিএনপিতে আসলেও বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দীর্ঘ আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। দলে তার সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা, অনুপস্থিতি ও দলীয় নেতাকর্মীদের আইনী সেবা প্রদানে তার বিতর্কিত ভূমিকার কারণেএকসময় আইনজীবি ফোরামের সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।’
তারা অভিযোগ করেন, ‘তিনি দীর্ঘ দুই বৎসর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রান্ট হয়ে স্বপরিবারে স্থায়ী ভাবে আমেরিকায় পাড়ি জমান। গত ৫ আগষ্টের খুনি হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে তিনি পিপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন এবং সংশ্লিষ্টদেরকে ভুল বুঝিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটি বাগিয়ে নেন। যা সিলেটের আইন অঙ্গনের সর্বস্তরের আইনজীবিদের মর্মাহত করেছে।’ নেতৃবৃন্দ সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনা করে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত এটি এম ফয়েজকে পরিবর্তনের জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য-গত ২০ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী আইজীবী ফোরামের নেতারা সিলেট আদালতের দুই পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এটিএম ফয়েজ ও মুজিবুর রহমানের রুমে তালা দেন।
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর সিলেটের সকল কোর্টে পাবলিক প্রসিকিউটর, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়।