যান্ত্রিক শহরে তিন চাকার প্যাডেলে ঘোরে সুমিত্রার জীবন সংগ্রাম
রংপুরের যান্ত্রিক শহরের ভিড়ে তিন চাকার প্যাডেলে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে চাচ্ছেন সুমিত্রা রাণী (৪৫)। অসংখ্য অটোরিকশা, বাইক ও যানবাহনের ভিড়ে তিন চাকার বিশেষ হস্তচালিত গাড়ির প্যাডেল ঘুরিয়ে শহরে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
দৈনিক ভিক্ষা করে যে টাকা আয় হয় তাই দিয়ে পেটের খোরাক জোগান এই অসহায় নারী। চলার পথে নগরীর নবাবগঞ্জ বাজারের সামনে চোখে পড়ে তার নিদারুণ কষ্টের দৃশ্য। রোদে পুরে শহরের যানজটে প্যাডেল ঘুরিয়ে অসহায়ত্বের কথা বলতে দেখা যায় তাকে।
জানতে চাইলে সুমিত্রা রাণী বলেন, ‘ভিক্ষা করতে চাই না খুব লজ্জা লাগে। শহরে এত এত মানুষের মধ্যে ঘুরিয়া হাত পাততে খুব কষ্ট লাগে কিন্তু কপাল খারাপ কি করবো? ভিক্ষা না করলে পেটে ভাত যাবে না৷ জন্মের পর থাকি আমার দুই পা অচল, এই অভাগীকে কেউ বিয়া করে নাই। এইজন্যে শহর ঘুরি কালেকশন করিয়া যে টাকা পাই কোনমতে চলি। দুনিয়াতে ভাই ছাড়া আমাক দেখার মতো কেউ নাই অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মনের দুঃখ প্রকাশ করেন শারীরিক প্রতিবন্ধী সুমিত্রা রাণী।’
আলাপকালে সুমিত্রা বলেন, আমার বাসা লালবাগ কলেজ পাড়ায়। জন্মের পর থেকে আমি প্রতিবন্ধী। আমার দুই পা অচল, তখন থেকে বাপ-মায়ের বোঝা হয়ে বেঁচে আছি। বাপ-মা মারা যাওয়ার পর আর কোন উপায় নাই। ভাইয়ের কাছে থাকি, কেউ এই বোঝারে কাঁধে নিতে বিয়া করে নাই। বাধ্য হয়া প্যাটের ভোগে ভিক্ষা শুরু করছি। আগে চামরার রাবার লাগাইয়া ছ্যাচড়ায় ছ্যাচড়ায় অনেক কষ্ট করি যাতায়াত করতাম। পরে এই কষ্ট দেখি এক আপা তিন চাকার প্যাডেল গাড়িটা দিছে তখন থাকি আমার কষ্ট অনেকটা কমছে। এখন প্যাডাল ঘুরিয়া শহরের বিভিন্ন জাগাত যাই প্রতিদিন যে কয়টাকা পাই তাই দিয়া চলি।
তিনি বলেন, আমার দুই হাত ভালো কিন্তু পা অচল দাঁড়াতে পারিনা তাই কেউ কাজে নেয় না। আমিও চাই না ভিক্ষা করতে, কেউ যদি আমাক সাহায্য করতো ভিক্ষা করা ছাড়ি দিতাম। মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করার মতো কষ্ট আর নাই। আমার দুঃখ দেখার কেউ নাই।