তিন মাস পর কার্যালয়ে ফিরে অবরুদ্ধ ভিসি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কার্যালয়ে ফিরে অবরুদ্ধ ভিসি/ছবি: সংগৃহীত

কার্যালয়ে ফিরে অবরুদ্ধ ভিসি/ছবি: সংগৃহীত

প্রায় তিন মাস ‘লাপাত্তা’ থাকার পর কার্যালয়ে ফিরেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রোষানলে পড়লেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিমেবি) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) নগরীর চৌহাট্টায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। পরে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এ সময় ভিসি ১৫ দিনের মধ্যে দাবি দাওয়া পূরণের আশ্বাস দেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিয়োগ বাণিজ্যে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ডা.মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে অপসারণ করা হয়। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর কর্তৃক ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে লাপাত্তা ছিলেন তিনি। বিভিন্নভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু তার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এমনকি তিনি কারও সঙ্গে দেখাও করতেন না। এমন পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতা ও দাপ্তরিক কাজ আটকে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় সিমেবিতে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাঙ্গণে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ ও চাকুরী নিয়মিতকরণের দাবীতে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদের নেতৃবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় ভিসিকে।

বিজ্ঞাপন

অবরুদ্ধের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাইরে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে আন্দোলনকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের ১৫ দিনের ভেতর দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। ভিসি ও প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, তিন মাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় তারা অসহায়ের মতো জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। পরিবারের লোকজনকে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। তাদের নিযোগ স্থায়ীকরণে ভিসি বারবার তাদেরকে আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবে সেগুলো হয় না। তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেন জানান।

তারা আরও জানান, এতদিন ভিসিরে কোনো খোঁজ না পাওয়া গেলেও বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে তিনি কার্যালয়ে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে চাকরিতে নিয়োগকৃত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ নিজের কার্যালয়ে ঢুকে গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যাচ্ছেন, এমন খবর চাউর হয়। সিমেবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্রুত ভিবি কার্যালয়ে যান ও তাকে অবরুদ্ধ করেন।

এবিষয়ে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদীম সীমান্ত বলেন, বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ ও চাকুরী নিয়মিতকরনসহ দাবীতে আমরা ২০২৩ সাল থেকে আন্দোলন করছি। কিন্তু এই ভিসি সবসময়ই আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছিলেন। আমাদের শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীকে বেতন না দিলেও তিনি রেজিস্টার ছাত্রলীগের নেতাকে ঠিকিই বেতন দিয়েছেন। আমরা যখন ভিসিকে বললাম আমাদের এত মানুষের বেতন নাই কিন্তু রেজিস্টারের বিভাবে বেতন হচ্ছে। তখন ভিসি আমাদের শেখ হাসিনার ভয় দেখাতেন। ৫ আগস্টের পর তিনি পলাতক ছিলেন। কিন্তু আমরা আমাদের আন্দোলন চলমান রেখেছিলাম। গতকাল হঠাৎ তিনি আমাদের কল দিয়ে বলেন আমাদের সাথে বসতে চান। আমার বলেছি তিনি যদি আমাদের সাথে বসেন তাহলে আমাদের দাবী মানতে হবে এবং আওয়ামী সিন্ডিকেট নেতাদের সাথে আনতে পারবেন না। কিন্তু তিনি সকালে আমরা আসার আগেই আওয়ামী সিন্ডিকেট মেম্বারদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন এবং তার জালিয়াতি দুর্নীতির যত প্রমাণ তার অফিসে ছিল সেগুলো নিয়ে যেতে চান। তখন আমরা তাকে আটক করি। এসময় তার সহযোগী আওয়ামী সিন্ডিকেট মেম্বাররা পালিয়ে যায়।