জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি পুনঃসৃজনে ‘লাল মজলুম’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতিসহ এই অঞ্চলের গণমানুষের নির্যাতন, সংগ্রাম ও গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি পুনঃসৃজন করতে রাজধানীর রাজপথে আসছে গণ-অর্থায়নে নির্মিতব্য রাজপথ-গণপরিবেশনা ‘লাল মজলুম’।

আগামী শনিবার বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হবে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিযেটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান।

তিনি বলেন, ‘লাল মজলুম’ ক্রাউড ফান্ডিংয়ে নির্মিত একটি রাজপথ-গণপরিবেশনা। একদিকে শিক্ষার্থী-শ্রমিক জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতি যেমন রোমশন করে পুনঃসৃজন করে, তেমনি এই জনপদে ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে সংঘঠিত গণঅভ্যুত্থানকেও একসূত্রে গ্রথিত করে।

বিজ্ঞাপন

জনগণের রাজনৈতিক আত্মত্যাগের স্মৃতি ভুলে যাওয়ার বিরুদ্ধে এক অবিরত সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তাকে জনপরিসরে শিল্পরূপ দিতে 'লাল মজলুম একটি গেরিলা প্রচেষ্টারূপে গণ্য হতে পারে। ঔপনিবেশিক আধুনিকতাবাদী প্রতাপশালী চিত্তা 'সেকুলারিজম ধারণার বিপরীতে, এই গণপরিবেশনা ইনক্লুসিভিটি ধারণাকে আত্মপ্ত করতে প্রয়াসী। সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদ, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদ, এমনকি ব্যক্তির ক্ষুদ্রতম পরিসরে থাকা ফ্যাসিবাদকেও এই পরিবেশনা প্রশ্ন করে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ধারণা প্রয়োগ করে 'লাল মজলুম'। মনে করিয়ে দেয় যে, সহিষ্ণুতা, সহাবস্থান এবং একে অপরের সাথে সংযোগ ও সংশ্লিষ্ঠ ঘটনা ঘটলেই কেবল আমাদের জীবন অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে।

এই নান্দনিক-রাজনৈতিক লক্ষ্যে, এই পরিবেশনায় ওরস সংস্কৃতির গান, অভ্যুত্থানের মিছিল, রাষ্ট্রীয় ও সংকীর্ণ সেক্টারিয়ান সন্ত্রাস, নজরুলের 'বিদ্রোহী' কবিতার বিভিন্ন আঞ্চলিক বাংলা ও চাকমা ভাষায় গণরূপায়ণ, রবীন্দ্র-নজরুল কাব্যের র‌্যাপ সংগীতায়ন, নারী ও প্রকৃতির রূপ অন্বেষণ করা হবে। এই গণপরিবেশনায় যে কোনো প্রকার ক্ষমতাকেই ক্রিটিক করার নৈতিক সৌন্দর্য এবং মজলুমের কথা বলার রাজনৈতিক পরিসরকে কল্পনা করার ভাষা প্রভৃতি আত্মশুদ্ধি করে একটি হাইব্রিড শিল্পভাষ্য নির্মাণের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

রাস্তায় সংঘটিত মিছিল ও গণপরিসরে উপস্থাপিত বিভিন্ন শিল্পকর্ম যেমন পথনাটক, পোস্টার নাটক, ইনস্টলেশন ও পারফরম্যান্স আর্টের ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে এই উন্মুক্ত নাট্য পরিবেশনায়। লিখিত সাহিত্য ব্যবহার করা হলেও তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শরীর, সময় সম্পর্কের ভিত্তিতে এই পরিবেশনার অ্যাকশন, ডায়লগ ও স্পেস ডিজাইন করা হয়েছে। এই গণপরিবেশনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর 'হ্যাপেনিং' স্বভাব।

অর্থাৎ যখন এটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগ পর্যন্ত স্থানে স্থানে সংঘটিত হবে সেদিনই কেবল এই পরিবেশনার পূর্ণাঙ্গ রূপ গঠিত হবে। তাই অনেকাংশেই 'লাল মজলুম' কোনো পূর্বনির্ধারিত নাট্য পরিবেশনা নয়। বরং স্থান-স্থাপত্য-চলমানতা ও দর্শকের সংযোগে পূর্ণ হবে 'লাল মজলুম'।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে খণ্ড খণ্ড দৃশ্যে চলমান এই পরিবেশনাটি শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি গণ-অধিবেশনমূলক সংলাপের দৃশ্যায়নের মাধ্যমে শেষ হবে। বর্তমানের রাজনৈতিক-সামাজিক জটিল সংকটগুলোকেও একটি বহুত্ববোধক সাংস্কৃতিক শিল্পভাষার প্রয়োগে তুলে ধরে 'লাল মজলুম' পরিবেশনায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শিল্পী ও সংগঠকদের অভিনয়সহ বিভিন্ন স্তরে অংশ নিয়েছেন। এই ব্যতিক্রমী এপিকধর্মী রাজপথ-গণপরিবেশনা বস্তুত কল্পনা ও সৃজনশীলতা নির্ভর সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, কর্তৃত্ববাদের বিপরীতে, বাংলাদেশের নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সংক্রান্ত নিপীড়িতের বাসনাকে নান্দনিক-সাংস্কৃতিক বয়ান আকারে নির্মাণের প্রচেষ্টা চালাতে চায়।