‘চসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে দুর্নীতি করেছেন মেয়র-কাউন্সিলররা’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বিজ্ঞাপন

নাগরিক সেবা নিশ্চিতের জন্য ওয়ার্ড-ভিত্তিক পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) নগরীর চকবাজারের কাঁচাবাজার এলাকায় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে এই ঘোষণা দেন মেয়র।

বিজ্ঞাপন

এদিন মেয়র চকবাজার ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হাজিরা নেন এবং স্থানীয়দের কাছে তাদের কাজের পারফরম্যান্স জানতে চান। এরপর মেয়র চকবাজার এবং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সড়কের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং এলাকাবাসীর কাছ থেকে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হন। এসময় মেয়র ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে লিফলেট বিতরণ করেন।

মেয়র বলেন, ‘আমি এসি রুমে বসে থাকার জন্য আসিনি। আমি রাস্তায় কাজ করার জন্য, জনগণের পাশে থাকার জন্য এসেছি। আমি পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারীদের বলছি আমি নগর পিতা নই, নগরসেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। জনগণের দুর্ভোগ যাতে না হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর আমি বেশি জোর দিচ্ছি। চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি এবং হেলদি সিটি করতে চাই আমি। গত সরকারের আমলে প্রতিটি কাউন্সিলর প্রতিটি ওয়ার্ডে একেক ওয়ার্ড থেকে ৬০, ৭০, ৮০, ৯০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী রেখেছে তারা ঠিকমত জনগণের কাজ করছে কিনা সেটা সরাসরি তাদের কাছ থেকে জানার জন্য আমি হাজিরা নিচ্ছি। আমি জনগণকে জিজ্ঞেস করছি তাদের দেখা গিয়েছিল কিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযানে। কারণ তাদের কাজটাই হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং এজন্য তারা করপোরেশন থেকে টাকা নিচ্ছে।

একেকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রায় ১৪-১৬ হাজার টাকা করে টাকা নিচ্ছেন উল্লেখ করে মেয়র আরও বলেন, ‘তাঁরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার যে মূল লক্ষ্য সেটা বাস্তবায়ন করছে কিনা তা দেখার জন্য প্রতিটা ওয়ার্ডে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমি পূর্ব বাকলিয়া গিয়েছি, পশ্চিম বাকলিয়া গিয়েছি। আজকে চকবাজার ওয়ার্ডে আমি এসেছি এভাবে প্রতিটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি এবং আমি গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জনগণ যাতে ময়লা আবর্জনা রাস্তায় না ফেলে, নালার মধ্যে না ফেলে, বরং ডাস্টবিনে ফেলে এই গণসচেতনতা বৃদ্ধি করছি।’

যে জায়গায় পরিচ্ছন্ন-কর্মীরা সেবা দিচ্ছেন না তা জানাতে জনসাধারণকে অনুরোধ করেন মেয়র। বলেন, ‘আপনারা আমাদের জানাবেন, ব্যবস্থা নেব। ইনশাআল্লাহ জনগণের যেকোনো সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। ইতিমধ্যে আপনারা জানেন ডেঙ্গুর জন্য প্রথমদিন থেকে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেন্টার খোলা হয়েছে। যেখানে ডেঙ্গুর যে টেস্ট সেটি বিনামূল্যে করে দিচ্ছি। আমরা ওইখানে ১০টি বেড রেখেছি। যেকোনো সময় মুমূর্ষু রোগী সেখানে চিকিৎসা নিতে পারবে।’

দুর্নীতি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে যাচ্ছি। প্রতিটা ওয়ার্ডে যাওয়ার পরে সুনির্দিষ্ট কিছু দুর্নীতির চিত্র আমি দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে আপনারা দেখেছেন আমি যখন শোলকবহর ওয়ার্ডের বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে দেখলাম ২৫টা দোকান থেকে অলরেডি ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে এবং সেখানে সিটি করপোরেশন পুরা এক বছরে পেত মাত্র এক লাখ টাকা। অথচ সেখানে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা প্রতিবছর আয় করার কথা ছিল। কাজেই এই যে একটা দুর্নীতি মেয়র এবং কাউন্সিলররা মিলে করেছে আমি একে একে সব দেখতে পাচ্ছি। কাজে আমি মনে করি শুধু একটা ওয়ার্ডে নয় প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা এবং মেয়ররা মিলে দুর্নীতি করেছে এটার শ্বেতপত্র বের হওয়া উচিত এবং জনগণকে সেটা জানানো উচিৎ এবং জনগণই বিচার করবে দুর্নীতির জন্য তাদের কি শাস্তি পাওয়া উচিত।’ 

নগরবাসীর সহায়তা চেয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, ‘একটা জিনিস মনে রাখবেন, আমি হাজার হাজার কোটি টাকা জলাবদ্ধতা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এবং মশা মারার জন্য যদি খরচ করে যদি জনগণকে সচেতন করতে না পারি তখন এই নগরকে আপনি সুন্দর রাখতে পারবেন না। এজন্য আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন। এ শহর আমার-আপনার সবার। ময়লা যথাস্থানে ফেলুন। প্রতি তিনদিনে ঘরে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি ফেলে দিন। আসুন সবাই মিলে ডেঙ্গুর আতঙ্কমুক্ত থাকি।’

মশা মারতে মস্কুবান ব্যবহার হচ্ছে চসিক মেয়র বলেন, ‘আমরা মস্কুবান নামের একটি ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করছি মশা মারতে। এছাড়া উন্নত দেশগুলোতেও খোঁজ নিচ্ছি মশা মারার ভালো ওষুধের জন্য। বর্তমানে যেসব ওষুধ আমাদের সংগ্রহে আছে সেগুলোর মানও পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরীসহ পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।