সিডরের ১৭ বছর, পটুয়াখালীবাসীর মনে এখনও গভীর আতঙ্ক

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পটুয়াখালী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, ঘূর্ণিঝড় সিডর পটুয়াখালীতে আঘাত হানে। একদিনের মধ্যে জেলার প্রায় ৪৬৬ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং ২১১ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। প্রায় ৩,২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়, এবং জেলার ১,০০,০০০-এরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। সিডরের পর পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হলেও, সিডরের ভয়াবহ স্মৃতি আজও স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

সিডরের কারণে পটুয়াখালীতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘরবাড়ি, সড়ক, স্কুল, কলেজ, এবং মৎস্য খাত প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষত মৎস্য খাতে বড় ক্ষতি হয়, যা জেলার অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। তাছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন এনজিও যৌথভাবে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করে, তবে সিডরের ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। সিডরের ভয়াবহ স্মৃতির কথা মনে করে স্থানীয় বাসিন্দারা আজও আতঙ্কিত।

বিজ্ঞাপন

পটুয়াখালীর স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম (৪৫) বলেন, 'সিডরের দিনটি ভুলতে পারি না। সেদিন অনেক কিছু হারিয়েছি। আবহাওয়া খারাপ হলেই আজও মনে হয় সিডর আবার আসবে।'

৬১ বছর বয়সী বৃদ্ধা জাহানারা বেগম, সিডরের সেই ভয়াল তান্ডবের কথা মনে করলে এখনো আঁতকে ওঠেন। তিনি বলেন, 'আমার বাড়ি সব কিছু ভেঙে গিয়েছিল। সিডরের সময়গুলোর কথা মনে হলে এখনও ভয় লাগে।'

বিজ্ঞাপন

আনোয়ার হোসেন (৫২) নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, 'সব কিছু হারানোর পর, আমরা যখন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াচ্ছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, আর কিছুই হবে না। এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো হলেও, সিডরের ভয় আমাদের মনে থেকে যায়।'

ছেলে হারানো এক মা রহিমা বেগম (৬০)। সিডরের সেই দুর্বিষহ স্মৃতিকে মনে করতেই বলেন, 'সিডরের রাতে আমার ছেলে হারিয়ে যায়। অনেক খুঁজেছি, কোথাও পাইনি। সেই রাতের কথা মনে হলে এখনো বুক ফেটে কান্না আসে। আমার সন্তানকে কখনো খুঁজে পাইনি, কিন্তু আজও সে ফিরে আসবে সেই আশায় বসে থাকি।'

পটুয়াখালীতে সিডরের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানুষের মধ্যে দুর্যোগের সময় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ এবং বাঁধ সংস্কারের কাজ করছে। সিডরের মতো দুর্যোগের জন্য এই অঞ্চলের জনগণ এখন আরও বেশি প্রস্তুত।

তবে, ২০০৭ সালের সিডর পটুয়াখালী জেলার জন্য এক ভয়াবহ অধ্যায় ছিল, যার ক্ষতি এবং স্মৃতি আজও মানুষের মনে রয়ে গেছে।