আগে ভুয়া মামলা করতো পুলিশ, এখন দিচ্ছে জনগণ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘আগে ভুয়া মামলা করতো পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিতো। এখন জনগণ দিচ্ছে ১০টা নাম ৫০টা বেনামি।’
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা এটা আমি মোটামুটি বলব। তবে এখনো সন্তোষজনক নয়। আমরা সন্তোষজনকে আনার চেষ্টা করতেছি। আপনারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। কিন্ত কোন সময় ভালো ছিল সেটি আপনারা বলেন না। এবার অন্য বারের চেয়ে ভালোভাবে পূজা হয়ে গেল, এটাও কিন্তু আপনারা একটু কম বলেছেন। আমরা যতটুকু আশা করেছি ততোটুক বলা হয়নি। কিন্তু আরও একটু বেশি করে বলা দরকার ছিল আপনাদের।
তিনি বলেন, ‘সভায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিল, তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে আরও উন্নতি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, এ ব্যাপারে আমি সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকদের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। বারবার আমি এ কথাটা বলি। সাংবাদিকরা একটু সাহায্য সহযোগিতা করেন পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।’
আন্দোলন পরবর্তী পুলিশের মনোবল প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশের যে মনোবল হারিয়েছে সেটি আগের চেয়ে কি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়েছে না! এটি আস্তে আস্তে বাড়ছে। যেমন ধরেন, আমার মনোবল। কোনো আত্মীয়-স্বজন হারালে সে সময় যে মনোবল সেটি কি দুইদিনে চেঞ্জ হয়? হয় না। একটু সময় লাগে, একটা সময় এসে আমরা ঐসব ভুলে যাই। ঠিক একইভাবে পুলিশের মনোবলের জন্য একটু সময় দিতে হবে। আর আমার কাছে এমন কিছু নেই যে আমি বললে হয়ে যাবে। এটাতো জাদুর মতো না, আমি চাইলাম হাতে চলে আসলো। এটার জন্য তাদের সবাইকে সময় দিতে হবে।
আন্দোলন পরবর্তী নির্ধারিত সময়ে যে পুলিশ সদস্যরা যোগদান করিনি তাদের শাস্তি দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা জয়েন করেনি তারা আমাদের চোখে ক্রিমিনাল। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। যাদের পাওয়া যাচ্ছে দেখেন না তাদের মাঝে মাঝে ধরা হচ্ছে। যারা আসছে না তাদের ধরা হচ্ছে। আপনারও একটু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন, আমরা ধরে ফেলব।
সরকার পতন পরবর্তী হওয়া বিভিন্ন মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগে ভুয়া মামলা করতো পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিতো। এখন জনগণ দিচ্ছে ১০টা নাম ৫০টা বেনামি। এটির জন্য আমরা টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি, যেন জনগণ জানতে পারে। যদি একচুয়াল মামলা হলে আপনাকে ধরার কথা। এরকম যাদের আছে কাউকে কি ধরা হয়েছে? এটি হয় তো আপনাদের ভেতর থেকে কেউ বা শত্রুতামি করে দিয়েছে। মামলাটাতো আমার পুলিশ, র্যাব, আর্মি, আনসার দেয়নি। পাবলিক দিয়েছে। এজন্য আপনি যে কোনো হেনস্তার শিকার হননি এজন্য আমাদের আরও ধন্যবাদ দেওয়ার কথা।
পার্শ্ববর্তী দেশ অর্থাৎ ভারতের মিডিয়া মিথ্যা প্রচার করে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ রেখে বলেছেন, আপনাদের কি আরও একটা কথা বলি আমাদের যে ভুল হয় না, তা না, আমাদেরও ভুল হয়। আমরা যদি এখানে কোনো কিছু করি সেটি ধরিয়ে দেন। আমরা যদি কোনো জায়গায় পয়সা খাই সেটিও বলে দেন। কিন্তু আমার একটা অনুরোধ- মিথ্যা সংবাদ প্রচার করবেন না। যেটা ঘটে নাই ওটা বলবেন না। এটাতে কিন্তু পাশের দেশ সুবিধা পেয়ে যাই। আমাদের দেশের মিডিয়ার যে একটা সুনাম আছে, পাশের দেশের মিডিয়ার তেমন সুনাম নেই। তারা সবচেয়ে বেশি মিথ্যায় প্রচার করে। আর ওই মিথ্যাটাকে কাউন্টার করতে পারবেন আপনারা (সাংবাদিক)। আমি বললে যতটা বিশ্বাস করবে না, আপনারা যেটা বলেন মানুষ সেটি বেশি বিশ্বাস করবে। আপনাদের কাছে আমি অনুরোধ করবো, আপনারা এটার কাউন্টার করেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ওপরে অন্য কোনো রাষ্ট্রের উসকানি আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অন্য দেশের উসকানি তো আপনারাই দেখতেছেন। প্রথমেই তো বলেছি, কী হারে পাশের দেশের মিডিয়া মিথ্যাচার করছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজ নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখা হচ্ছে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই জাহাজটা মিডল ইস্ট থেকে আসছে। সেখান থেকে এসে একটা দেশে গেছে সেখান থেকে আমাদের দেশে আসছে। আমাদের দেশে কোনো দেশের জাহাজ আসা নিষিদ্ধ আছে? আমরা কি কারো কাছে বন্দি যে শুধু তাকেই সেবা করবো? আমার দেশ সবার ওপরে। খেজুর, পেঁয়াজ, আলু-এগুলো সামনের রোজার সময় দরকার। এগুলো কি আমরা আসতে দিবো না? যারা এগুলো রটাচ্ছে তারা আমাদের শত্রু।
জুলাই হত্যাকাণ্ডে চট্টগ্রামে অন্তত ৫০ জন অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে সিএমপি শুধু একজন এবং র্যাব চারজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকি অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি উপস্থিত পুলিশ কমিশনারকে অস্ত্রধারীদের তালিকা করে তাদের গ্রেফতারে ব্যবস্থা গ্রহণের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন।
এসময় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান, পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ও চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ উপস্থিত ছিলেন।