শীতপ্রবণ জেলায় শীতবস্ত্রের বরাদ্দ শিথিল
দেশের উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা ঠাকুরগাঁও। সীমান্তবর্তী এ জেলায় শীতকাল আসলে হিমালয়ের হিম বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। সকাল থেকে সন্ধ্যা দেখা মিলে না সূর্যের আলো। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পরে সাধারণ মানুষের জীবন। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। এতে কর্ম হারিয়ে ফেলেন অনেক দিনমজুরসহ খেটে খেয়ে খাওয়া মানুষ।
প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করা শীতপ্রবণ জেলায় বরাদ্দ একেবারে কমানো হয়েছে। প্রতি বছরে চাহিদার অর্ধেক বরাদ্দ পেয়ে থাকেন জেলার সাধারণ মানুষ। আবার সে বরাদ্দের মান ও বিতরণ নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের আলোচনা।
কোনবারের শীতের শুরুতে সহযোগিতা পান না শীতার্তরা। কর্ম হারিয়ে বসে থেকেও কম্বল ছাড়া পান না বাড়তি কোন সহযোগিতা। সেই কম্বল পেতে শেষ নেই ভোগান্তির। যাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয় তারা দিয়ে থাকেন পছন্দের মানুষকে।
শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতের সুযোগ সুবিধা চান খেটে খাওয়া মানুষেরা৷
সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের শ্রমিক লতিফুর রহমান বলেন, প্রতিবারে কম্বল ঠান্ডার শেষত দেয়া হয়। তাতে হামার ঠান্ডা শেষ হয়ে যায়। গতবার কম্বল পাইনি, এবারও কম্বল মিলবে না। হামার কষ্ট কমানোর জন্য আগে ভাগে ভালো মানের কম্বল দেওয়া উচিত।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, প্রতিবছরে শীতে কম্বল ও আর্থিক অনুদানের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় চাহিদা৷ এতে দেখা যায়, জেলায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২৮,৮০০ পিস কম্বল ও ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২ লাখ পিস কম্বল ও ৫০ লাখ টাকা চাহিদা পাঠানো হয়৷ এর বিপরীতে ২৭,৫০০ পিস কম্বল ও ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৯১০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়৷ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৮০ হাজার পিস কম্বল ও ৪০ লাখ টাকা চাহিদার বিপরীতে ৪৩ হাজার পিস কম্বল ও ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়৷ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৮০ হাজার পিস কম্বল ও ৪০ লাখ টাকা চাহিদা থাকলেও শুধু ৪১ হাজার ৫৫০ পিস কম্বল দেওয়া হয়। আর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৫০ হাজার পিস কম্বল আর ২০ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে প্রতি বছরে চাহিদা কমানোর পাশাপাশি কমে এসেছে বরাদ্দ। চলতি অর্থ বছরে যার অবস্থান একেবারে তলানিতে । শীতে কাবু হওয়া জেলার মানুষের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকল্পনা মাফিক শীতার্তদের পাশে থাকার আহবান সুশীল সমাজের।
ঠাকুরগাঁও জার্নালিস্ট ক্লাবের সভাপতি রেজাউল প্রধান বলেন, প্রতিবারের চেয়ে এবারে চাহিদা কম পাঠানো হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। এতে করে সংগ্রাম আরো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ছিন্নমূল মানুষের। বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে শীতার্তদের পাশে দাড়ানো জরুরি হয়ে পরেছে৷
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছি। এ শীতে আরেক ধাপে চাহিদা পাঠানো হবে। আগের বিতরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এবারে আগে ভাগে শীতার্তদের বরাদ্দ তুলে দেওয়া হবে।