জাতীয় ও ইউপি নির্বাচন একইদিনে করা হবে: মুয়ীদ চৌধুরী
কেন্দ্রের বুথ দখল রুখতে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একইদিনে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন আয়োজনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য একটা আলাদা কমিশন আছে, তবু আমাদের চিন্তাটা হলো- একইদিনে ইউনিয়ন পরিষদ আর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাহলে বুথ দখল আর সহজ হবে না। কারণ ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বার ওয়ার্ডভিত্তিক পাহারা দিবে। তাহলে সেন্ট্রালি আর কেউ বুথ দখল করতে পারবে না। এটি আমরা সুপারিশ করবো বলে চিন্তা করছি।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে এখন যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় তাতে পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্সটাই বেশি থাকে। আর এটিকে যদি আমরা মাল্টিপল ওয়ার্ডে করে দিই যে মেম্বাররা চেয়ারম্যানদের নির্বাচিত করবে। তাহলে ওখান থেকেই গণতন্ত্রটা শুরু হবে। তাহলে কেউ পুরো জিনিসিটা দখল করে বসে থাকবে না। যদিও এটি তার ব্যক্তিগত চিন্তা। তবে তিনি এটি নিয়ে তার সহকর্মীদের সাথেও কথা বলেছেন বলে জানান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেক জায়গায় জবাবদিহিতা আনা একটি কঠিন ব্যাপার। যদি লোকাল গভমেন্ট সিলেক্টেড রেস্ট্রিক্টেড গভমেন্ট হয় তাহলে হয়তো জবাবদিহিতা আসতে পারে। যদি আমরা ইউনিয়ন পরিষদে আনতে পারি, উপজেলায় আনতে পারি তাহলে কিছুটা জবাবদিহিতা আসবে।
এসময় তিনি সরকারি অফিস আদালতে জনবল প্রসঙ্গে বলেন, এখন যেভাবে অনেক লোক নিয়োগ করা হয়, এতো লোক দরকার নাই। আরও কম লোকে সরকার চলতে পারে। পুলিশের সংখ্যা আরও দরকার। কারণ আজকে জটিলতার কারণে আইনশৃঙ্খলা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে গত সরকার যেভাবে করেছিলো সেভাবে না। জেনুইন অব পিপল ওরিয়েন্টেড যাতে তৈরি করা যায় সেজন্য আমাদের সুপারিশ থাকবে।
‘ডিসি সাহেবের সাথে সাধারণ মানুষ দেখা করতে পারে না। এজন্য ভাবছি সপ্তাহে একদিন ডিসি অন্য কোন কাজ করবেন না। পাবলিক প্লেসে এভেইলেভেল থাকবেন। যেকোন মানুষ এসে খোলামেলাভাবে তার সাথে দেখা করতে পারবেন। ডিসি সাহেব যদি কনফারেন্স রুমে থাকেন ওইদিন, অন্য ডিপার্টমেন্টের অফিসাররাও থাকবেন, এসপি সাহেব থাকবেন, তাহলে মানুষ এসে যেকোন বিষয় সরাসরি ফয়সালা করতে পারবে।’ এটি একটি ভালো কাজ হতে পারে।’ মুয়ীদ চৌধুরী বলেন।
এসময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মোখলেসুর রহমান বলেন, বিগত আমলে নানাভাবে প্রশাসনকে জনবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমরা এই প্রশাসন শব্দটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু বলা যায় কিনা সেটিও চিন্তা করছি। আমার এরই মধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন কিন্তু অফিসে আর লাল ফিতা নাই। আমাদের এই নতুন প্রজন্ম যারা রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই পরিবর্তন এনে দিলো তাদেরকে প্রাপ্য সম্মানটা দিতে হবে।
তিনি বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কারে এ পর্যন্ত অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনেক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাকরি আর চাকরির মতো থাকবে না। আমরা চাকর জনগণের। জনগণ আমাদের বেতন দেয়। নতুন করে আমাদের সকলকে এটি ভাবতে হবে। অনেকে বলেন সেবা দান। না, আমরা পাবলিক সার্ভেন্ট।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সম্পাদক অধ্যাপক এমএ সামাদ, সরকারি ইয়াছিন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফজলুল হক, বাকীগঞ্জ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান, সনাক ও মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি শিপ্রা রায়, ব্যবসায়ী নেতা আওলাদ হোসেন বাবর, সাংবাদিক মফিজ ইমাম মিলন, হারুন আনসারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামিয়া আক্তার, সোহেল শেখ, নিরব ইমতিয়াজ শান্ত, আনিসুর রহমান সজল, ফজলুল হাদি সাব্বির প্রমুখ।