ফেনীর ৩৪ শতাংশ পরিবার চলে প্রবাসী আয়ে
সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী ফেনী জেলার জনসংখ্যা ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৬ জন। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলার ৩ লাখ ৩১ হাজার ৯২৭ জন মানুষ কর্মসূত্রে প্রবাসে গেছেন। জনশুমারি ও গৃহগণনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জনশুমারির পূর্ববর্তী দুই বছরে জেলার ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বা ১ লাখ ২৫ হাজার ২৭০টি পরিবার প্রবাসী আয় ভোগ করেছেন।
জাতীয় পর্যায়ে এ হার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ফেনীর প্রবাসী আয় গ্রহণকারী পরিবারগুলোর মধ্যে ৭৬ দশমিক ৮১ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে এবং ২৩ দশমিক ১৯ শতাংশ পরিবার শহরে বাস করে। এসব পরিবারের মধ্যে সর্বোচ্চ ফেনী সদরে বাস করেন। অন্যদিকে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে চট্টগ্রাম বিভাগে এগিয়ে রয়েছে ফেনী।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে ৩১৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন বা ৩১ দশমিক ৭০ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন ফেনীর প্রবাসীরা।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থছরে ৬০৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৫৫ দশমিক ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫১৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন এ জেলার প্রবাসীরা।
একই সূত্রমতে, জেলায় চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯২৮ জন ব্যক্তি কর্মসূত্রে প্রবাসে গেছেন। গতবছর এ জেলা থেকে বিদেশ যান ২২ হাজার ৮১৫ জন। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় বিদেশ হতে লাশ এসেছে ৫টি। তবে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গণনাকালে ফেনীতে ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৩ জন ব্যক্তি প্রবাসে ছিলেন, যা জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি ফেনী অফিসের সহকারি পরিচালক দিদার মিয়া জানান, প্রবাসীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট জটিলতা কিংবা কোন এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে জেলা অফিসে কোন অভিযোগ জানালে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে কোন দালালের মাধ্যমে কেউ প্রতারিত হলে সেক্ষেত্রে কিছু করার সুযোগ থাকে না।
প্রবাসীদের আর্থিকভাবে কোন সহযোগিতা উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসীরা যে আয় করে তা যদি কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চায় সেক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কোন প্রবাসী চাইলে ঋণ নিতে পারে।
তবে প্রবাসে থাকা প্রবাসীদের রয়েছে নানা অভিযোগ। পাসপোর্ট জটিলতা, ইমিগ্রেশন হয়রানিসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তারা।
নিজামুল হক রিয়ন নামে এক কুয়েত প্রবাসী বলেন, বিদেশে এসেছি এক বছর হলো। পরিবার থেকে দূরে থেকে উপার্জন করছি। দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছি তবে প্রবাসীদের প্রাপ্য সম্মান এখনও সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি। এখনও প্রবাসে কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে দৌঁড়াতে হয়। এসব বিষয়ে হয়রানি বন্ধ করা প্রয়োজন।
শেফাজ চৌধুরী নামে কাতার প্রবাসী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশিরা অনেক বেশি। এখানকার প্রবাসীদের কাজের নিরাপত্তাসহ আর্থিক নিরাপত্তা আরও বেশি বাড়াতে হবে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলে অথচ আমরা অবহেলিত হয় দেশে গেলে। এখনও ইমিগ্রেশন জটিলতা, পণ্য চুরি বন্ধ হয়নি। নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
প্রবাসীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারি পরিচালক জানান, কোন প্রবাসী প্রতারণার শিকার হলে বা প্রবাসে মারা গেলে তাদের লাশ ফিরিয়ে আনাসহ প্রবাসীদের কল্যাণে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কাজ করে থাকে।
তিনি জানান, কোন প্রবাসী হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলে সেক্ষেত্রে সরকারি নিবন্ধিত এজেন্সি হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে দালাল দ্বারা প্রতারিত হলে কিছু করার থাকে না।
অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বিষয়ে তিনি বলেন, অনিবন্ধিত এজেন্সি দ্বারা প্রতারিত হলে সহায়তার সুযোগ নেই। কাগজপত্র ঠিক থাকলে সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এছাড়াও আদালতে মামলা করার সুযোগ থাকে।
এদিকে প্রবাসীর অধিকার আমাদের অঙ্গীকার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ আমাদের সবার এ প্রতিপাদ্য আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবসে র্যালি ও আলোচনা সভা করেছে ফেনী জেলা প্রশাসন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।