৩ মিলিয়নের ক্লাবে চট্টগ্রাম বন্দর, বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির ধারায় পঞ্চমবার

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অস্থিরতা এবং ডলার সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর আবারও তিন মিলিয়নের (থ্রি-মিলিয়ানার) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। চলতি বছর ৩০ লাখের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের মাধ্যমে এটি পঞ্চমবারের মতো এ মাইলফলক অর্জন করেছে।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভেলেন্ট ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসভিত্তিক গড়ে ২ লাখ ৭০ হাজার টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেল করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টিইইউ।

মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬২, ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৬, মার্চে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭৪, এপ্রিলে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৯, মে মাসে ৩ লাখ ১৯৩, জুনে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৩, জুলাইয়ে ২ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৫, আগস্টে ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৯, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩২৪, অক্টোবরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৯ এবং নভেম্বরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৮ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে। এছাড়া ডিসেম্বরের ১৫ দিনে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে ৫১ হাজার ৪৬৩ টিইইউ।

বিজ্ঞাপন

বন্দর কর্তৃপক্ষের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসের পরিসংখ্যানে গড়ে সাড়ে ৩ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের হিসাব অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৪৬০ টিইইউ ছাড়াতে পারে। ২০২২ সালে বন্দরটি ৩১ লাখ ৪২ হাজার টিইইউ এবং ২০২১ সালে ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউ হ্যান্ডেল করেছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী টার্মিনাল ম্যানেজার রাজীব চৌধুরী বলেন, বন্দরের ইকুইপমেন্ট ফ্যাসিলিটি সম্প্রসারণের ফলে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বেড়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হচ্ছে। আমরা আশা করছি, ২০২২ সালের রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হব।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এবিসি শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আরিফ জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পারফরম্যান্স অনেকটাই উন্নত হয়েছে। তবে আরও উন্নতি করতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, কনটেইনার খালাস কার্যক্রম বন্দরের বাইরে সরিয়ে নেওয়া এবং সহজ শর্তে অফডক বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে স্ক্যানার স্থাপন করা।

তিনি জানান, স্ক্যানার স্থাপনের কাজ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে বলে শুনেছেন। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং আরও বৃদ্ধি পাবে। তৃতীয়ত, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন করা।

সৈয়দ মো. আরিফ মনে করেন, এসব উদ্যোগ কার্যকর হলে চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বন্দরে পরিণত হবে।

পর্যালোচনা অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ বন্দরগুলোর তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের মুন্দ্রা পোর্ট ২৪তম এবং শ্রীলঙ্কার কলম্বো পোর্ট ২৭তম অবস্থানে আছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বেড়েছে দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিং স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তবে বন্দরের পারফরম্যান্স দেশের অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে।

তিনি আরও জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষের কাজ হলো প্রয়োজনীয় ফ্যাসিলিটি দেওয়া। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের ধারাবাহিক উন্নতি করতে হলে ট্রেড বাড়ানো জরুরি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বন্দরের ভেতরে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া রাখার পরিবর্তে বাইরে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এতে জাহাজের ওয়েটিং টাইম ও স্টে টাইম কমে যাবে। ফলে আরও বেশি জাহাজ ভিড়তে পারবে এবং কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।