ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও ফানুস পোড়ানোর সময় ২০২৩ সালে ৩৬ শতাংশ ও ২০২৪ সালে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে ১০২ শতাংশ ও ২০২৪ সালে ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই নববর্ষ উদযাপনে 'আতসবাজি-ফানুস' পোড়ানো বন্ধের সুপারিশ জানিয়েছে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ করা হয়। 'নববর্ষ উদযাপনের সময় আতশবাজি পোড়ানোর কারণে বায়ু ও শব্দ দূষণের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ এবং আতশবাজি ও ফানুস মুক্ত নববর্ষ উদযাপনের দাবি'তে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২৪ এই সময়ের মধ্যে বায়ুমান সূচক কখনোই ভালো অবস্থানে ছিল না। বায়ুমান সূচক ৫০ এর নিচে থাকলে ভালো বায়ু বলা হয়, সেক্ষেত্রে গত ৭ বছরে নির্দিষ্ট দুই দিনে (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি) কখনোই বায়ুমান সূচক ৫০ এর নিচে ছিল না। তবে উল্লেখ্য যে ২০২১-২২ সালে করোনাকালীন সময়ে কম আতশবাজি, পটকা, ফানুস পোড়ানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, এই বছর ৩১ ডিসেম্বর রাতে নববর্ষ উদযাপনের আগে ৩ ঘণ্টার গড় বায়ুমান হতে, নববর্ষ উদযাপনের শুরুর সাথে সাথে বায়ুর মানের অবনিত হতে শুরু করে। রাত ১২টা বাজার কিছু পূর্ব থেকে আতশবাজি, ফানুস পোড়ানোর শুরুর সাথে সাথে বায়ু দূষণও বাড়তে থাকে। বস্তুকণার এর দূষণের মাত্রা রাত ১টায় প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে ২৪৯ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছায় যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
শব্দ দূষণ প্রসঙ্গে এই অধ্যাপক বলেন, ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের ফলে যে শুধু বায়ু দূষণ হচ্ছে এমনটি নয় এর ফলে মারাত্মক শব্দ দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। রাত ১১টা থেকে শুরু করে ১টা পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকার তীব্র শব্দ শোনা যায়। বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর গবেষণা দল গত ৭ বছর যাবত ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে শব্দ দূষণের তীব্রতাও পর্যবেক্ষণ করে আসছে। ফলাফলে বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১টার মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গড়ে (Leq) শব্দের মান ৪৮ থেকে শুরু করে ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু এই শব্দের মাত্রা ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে গড়ে সর্বনিম্ন ৮৫ ডেসিবল থেকে শুরু করে গড়ে সর্বোচ্চ ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত বা আরও বেশি অতিক্রম করে।
ক্যাপসের গবেষণা দলের মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকা ফুটানো হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হয়েছে রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। ২০২৪ সালের প্রথম ঘণ্টায় শব্দ দূষণহার আগের দিনের (৩০ ডিসেম্বর) তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং বেশিরভাগ সময় শব্দের মাত্রা ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবলের মধ্যে ছিল। যদি আমরা ঢাকা শহরকে একটি মিশ্র এলাকার সাথে তুলনা করি, তাহলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রন) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী মিশ্র এলাকার জন্য রাতের বেলা শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর রাতে এই মানমাত্রা কখনোই ৫০ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, শব্দের মাত্রা এত তীব্র যে শিল্প এলাকার জন্য নির্ধারিত শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করে। হিসাব করে দেখা যায় যে, গত ৭ বছরে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত গড়ে ৯০ শতাংশ সময় শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করেছে। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আনন্দ উদযাপন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে ৬টি সুপারিশ জানিয়েছে ক্যাপস। সুপারিশগুলো হলো— দূষণ সৃষ্টিকারী আতশবাজি ও ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে; আতশবাজি এবং ফানুসের পরিবর্তে আলোকসজ্জা, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা এবং সীমিত শব্দে দেশিয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করা যেতে পারে; গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশ সুরক্ষার বার্তা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে; শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; নববর্ষ উদযাপনের সময় পশু-পাখি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং দূষণ নির্ধারণ এবং তার প্রভাব কমানোর জন্য গবেষণায় আরও বেশি তহবিল বরাদ্দ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, অরন্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রকিবুল হাসান মুকুল, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. রাশেদুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।
বিআরটিএ'র নির্ধারিত ঢাকা মেট্রোর সিএনজি অটোরিক্সার দৈনিক জমা ৯০০ টাকা অবিলম্বে কার্যকর করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা চালক ঐক্য পরিষদ।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
পরিষদের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে— ২০০৭ সালে ঢাকা মেট্রোর জন্য সরকার অনুমোদিত ৫ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা অবিলম্বে চালকদের নামে রেজিস্ট্রেশন (ব্লু-বুক) প্রদান করতে হবে; ঢাকা শহরের আয়তনের সাথে সঙ্গতি রেখে আরও ১৫ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের নামে অনুমোদন দিতে হবে; সিএনজি অটোরিক্সা চালক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে রাষ্ট্র এর পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে; আইএলও কনভেনশন ৮৭ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে; প্রশাসনের সব ধরনের চালক হয়রানি বন্ধ করতে হবে; পার্কিং-এর পর্যাপ্ত স্থান নির্ধারণ না করে নো পার্কিং মামলা বন্ধ করতে হবে; লেন/বাইলেন করে মহাসড়কে অটোরিক্সা চলাচল করতে দিতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং বিধিমালা ২০২৩ এর শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী ধারা ও বিধি বাতিল করতে হবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাবেশে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা চালক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শেখ হানিফ, সদস্য সচিব মো. গোলাপ সিদ্দিক, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
পাবনার সাঁথিয়ায় দাঁড়িয়ে থাকা করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন কৃষিশ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোর ৫ টার দিকে সাঁথিয়া-মাধপুর সড়কের রাঙামাটিয়া নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, উপজেলার রাঙামাটি গ্রামের আলতাফের ছেলে খোকন ইসলাম (২৭), ছোন্দহ গ্রামের নজিমুদ্দিনের ছেলে ধনী প্রামাণিক (৫০), একই গ্রামের সাইদের ছেলে রাসেল আহমেদ (২৭)। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. লতিফ জানান, ভোরে কৃষি শ্রমিকরা পেঁয়াজ লাগানোর জন্য করিমন যোগে অন্য এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। উক্ত স্থানে এলে সাঁথিয়াগামী মালবাহী ট্রাক চাপা দিলে ঘটনা স্থলেই ৩ জন মারা যায়। মরদেহ উদ্ধার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আহতদের হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা ও হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ে অব্যাহত রয়েছে শীতের তীব্রতা। রাতভর কুয়াশা ঝরে বৃষ্টির মতো। সকালের দিকেও কিছুটা থাকে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ। এ জেলায় কয়েক দিনের ব্যবধানে আবারও বইছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ ও হিমেল হাওয়া। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা মেলেছে সূর্যের।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে তেতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এ জেলায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
তবে, রাতভর তীব্র শীতের দাপট ও তাপমাত্রার পারদ ১০ ডিগ্রি নিচে নামলেও বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে দেখা মেলে সূর্যের। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে তাপমাত্রাও৷ এদিনসর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। তবে সন্ধ্যার পর থেকে আবার তাপমাত্রা হ্রাস ও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
এ বিষয়ে জেলা শহরের হোটেল শ্রমিক মমিন ইসলাম বলেন, শীতকাল আসলে আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়। শীতকালে অনেক শীত বস্ত্র আসে কিন্তু আমরা গরিব মানুষ পাই না। তেমন কাজও করতে পারি না।
একই কথা বলেন জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে পাথর শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নদীর পানি বরফের মত ঠাণ্ডা। কয়েকদিন থেকে অনেক শীত অনুভূত হচ্ছে। কষ্ট হলেও পাথর উত্তোলন করতে হচ্ছে। কারণ কাজ না করলে আমাদের আহার মিলেনা।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, এ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আজকে সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৪ শতাংশ এবং গতিবেগ ঘণ্টায় ৬-৮ কিলোমিটার। আরো কয়েকদিন আবহাওয়া এমন থাকতে পারে।