ঈশ্বরগঞ্জে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা এনজিও
সহজ কিস্তিতে এক সপ্তাহের মধ্যেই মিলবে ৩ লাখ টাকা ঋণ। আর ঋণ পেতে গ্রাহককে জমা দিতে সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। এমন লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে পড়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে টাকা জমা দেয় কর্মজীবী কল্যাণ সোসাইটি (কেকেএস) নামে একটি এনজিও’র মাঠকর্মীর কাছে। কিন্তু গত রোববার থেকে উধাও হয়ে গেছে সেই এনজিও।
গত রোববার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরহোসেনপুর এলাকার কমপক্ষে ৩০ জনের কাছ থেকে নগদ টাকা গ্রহণ করে সদরে অফিসে গিয়ে ঋণ আনার কথা বলে লাপাত্তা হয় ওই এনজিও’র কর্মীরা। এ অবস্থায় মাথায় হাত পড়েছে বিনিয়োগকারীদের।স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে এনজিওটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ঈম্বরগঞ্জ পৌর এলাকার জয়বাংলা বাজারে একটি ভবনের নীচ তলায় কার্যক্রম চালাচ্ছিল। রোববার দুপুরের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে শতশত ভুক্তভোগীরা ওই এনজিও’র সামনে ভিড় জমিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ‘কর্মজীবী কল্যাণ সোসাইটি(কেকেএস) নামে প্রতিষ্ঠান জনপ্রতি প্রথমে ২শ টাকা দিয়ে সদস্য হলে পরে ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা জমা হলেই সেই অনুপাতে ঋণ দেওয়া হবে। কেউ যদি একসাথে জমা দেয় তাহলে তাকে সাথে সাথে ৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। ঋণ নেওয়ার পর কিস্তি হিসেবে দুই বছর মেয়াদে পরিশোধের সুযোগের কথা বলছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। সদস্য সংগ্রহের পর প্রতি এক লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে আরও ছয় হাজার টাকা করে সঞ্চয় রাখার শর্ত দেওয়া হয়। অনেকেই শর্ত মেনে সঞ্চয়ের টাকা জমা দেন।
চরহোসেনপুর এলাকার মোছাম্মৎ রেখা আক্তার জানান, ‘তিনি গত দুই সপ্তাহ ধরে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিয়ে আসছেন। গত রোববার সকালে তার বাড়িতে আসেন ওই এনজিও’র মাঠকর্মী সাজেদুল। তিনি উঠানে বসে সঞ্চয়ের বইয়ের মধ্যে তার দেওয়া ১৫ হাজার টাকাসহ জমানো মোট ৩০ হাজার টাকা লিখে বইটি ফের দিয়ে দেন। পরে বলে যান সদরে অফিসে গিয়ে ৩ লাখ টাকা ঋন নিয়ে আসার জন্য। এ অবস্থায় তিনি অফিসে গিয়ে দেখেন তালাবদ্ধ। তাকে খোঁজ করেও আর সন্ধান করতে পারেননি। এ সময় মাঠকর্মী সাজেদুলের ফোন নাম্বার ০১৮৬৯০৮৪১৩৭ এ ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বুঝতে পারেন এইট একটি প্রতারক চক্র’।
প্রতারিত হওয়া রেখা জানান, ‘তিনি ছাড়াও তার এলাকার আল-আমীন,হযরত আলী, লিপি আক্তার, হাসিনা বেগম, মজিদা ১৫ হাজার টাকা এবং আনারুল, আতাবুর ১০ হাজার। সেই সাথে রহিমা বেগম গত রোববার ৩০ হাজার টাকা জমা দেন ৩ লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার আশায়। কিন্তু সকলেই ঋণ আনতে গিয়ে অফিস বন্ধ পান’। দুপুরের পর থেকে অফিসে তালাবদ্ধ দেখে সকলেই বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে শতাধিক গ্রাহক বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত ভিড় করেন। কোনো সুরাহা না পেয়ে তারা ফিরে যান’।
বিপুল মিয়া নামে এক অটো চালক বলেন জানান, তার মোট জমা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। গত রোববার রাতে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এখন এসে দেখেন অফিসে তালা ঝুলছে। তার মতো শতশত লোকের একই অবস্থা।
ভুক্তভোগীদের কাছে দেওয়া সঞ্চয়ের বলে উপরে লেখা রয়েছে কর্মজীবী কল্যাণ সোসাইটি(কেকেএস)। গভ. রেজিনং- এস-১০৩১(৬২৪)/২০১০ ইং রেজিস্ট্রার কার্যালয় সেনপাড়া পর্বতা, মিরপুর,ঢাকা।
এ বিষয়ে ঈম্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ উবায়দুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে, জড়িত কাউকে পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।