বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে চিকিৎসাসেবা!
রাজবাড়ীর মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য একটি ১০০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতাল ও ৪টি উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। জেলা শহরের একমাত্র সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালগুলোতে ৮০ শতাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পেতে যেতে হয় অন্য জেলায়।
জানা গেছে, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ ও পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন করে জুনিয়র কনসালটেন্ট, ৭ জন করে মেডিকেল অফিসার, ১ জন করে ডেন্টাল সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ রয়েছে। আর কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ৩ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ রয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থপেডিক্স, জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, জুনিয়র কনসালটেন্ট নাক কান গলা, জুনিয়র কনসালটেন্ট চর্ম ও যৌন, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু এই ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তবে হাসপাতালে শুধু গাইনি ও শিশু কনসালটেন্ট রয়েছে। বাকি ৮টি পদই শূন্য। মেডিকেল অফিসার ৭ জনের মধ্যে ৪ টি পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। কিন্তু সনোলজিস্টের পদ না থাকায় আল্ট্রসনোগ্রাম মেশিন দিয়ে কোনো পরীক্ষা হয় না। এছাড়াও এক্সরে টেকনিশিয়ান না থাকায় পড়ে রয়েছে এক্সরে মেশিন।
হাসপাতালটিতে আধুনিক মানের অপারেশন রুম রয়েছে। এনেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে কোনো অপারেশন হয় না। প্রসূতি মা হাসপাতালে আসলে সিজারের ব্যবস্থা নেই। সেই রোগীকে যেতে হয় রাজবাড়ী বা ফরিদপুর জেলায়।
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। অপারেশন থিয়েটার থাকলেও এনেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় অপারেশন কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। এছাড়াও আলট্রাসনোগ্রাফির ডাক্তারের কোনো পদই নেই আমাদের হাসপাতালে। ফলে চিকিৎসকদের কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। গাইনি চিকিৎসক থাকলেও এনেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালে সিজার করা যাচ্ছে না। আমরা হাসপাতালে সার্বিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের পরিস্থিতি আরও খারাপ। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে আছে শুধু গাইনি কনসালটেন্ট ও এনেসথেসিয়া। বাকি ৮টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে গাইনি কনসালটেন্ট ডা. সাবরিনা মেহের গত ১১ নভেম্বর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। তার বাড়ি চট্রগ্রাম জেলায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বাড়ি থেকে দূরে পোস্টিং হওয়ায় তিনি বদলির চেষ্টা করছেন। এজন্য নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। ফলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী।
একই অবস্থা পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ১০টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে ৭টি পদই শূন্য রয়েছে। আছে জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া। তবে নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার। অ্যাম্বুলেন্স চালক অবসরে যাওয়ার পর নতুন চালক নিয়োগ হয়নি। ফলে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রয়েছে।
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. এবাদত হোসেন বলেন, আমরা এই সীমিত জনবল নিয়েই সেবা দেবার চেষ্টা করি। আমাদের সনোলজিস্ট পদে সরকার নিয়োগ দেয়নি। এজন্য আল্ট্রসনোগ্রাম করা হয় না। অ্যাম্বুলেন্স চালক অবসরে গেলে নতুন কাউকে সরকার নিয়োগ দেয়নি। এজন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রয়েছে। সবগুলো বিষয়ই আমি প্রতিমাসে কর্তৃপক্ষকে জানাই।
কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার হলেও সেখানে চিকিৎসকের সংখ্যা অন্য তিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অনেক কম। কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ৩ জন মেডিকেল অফিসার পদ রয়েছে। এর মধ্যে দুইজন কনসালটেন্ট আর ২ জন মেডিকেল অফিসার আছে। এছাড়া আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য। সব মিলিয়ে বেহাল চিকিৎসাসেবা কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, আমাদের চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি কনসালটেন্ট রয়েছে। বাদ বাকি কনসালটেন্ট নেই। বিষয়গুলো নিয়ে ডিজি অফিসে প্রতিমাসে যে সভা হয় সেখানে বলি। পাশাপাশি অনেক মেডিকেল অফিসারের পদও শূন্য রয়েছে। আমাদের ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই আল্ট্রসনোগ্রাম মেশিন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই পদে কোনো সনোলজিস্ট নিয়োগ দেয়নি। ফলে কোন মেডিকেল অফিসারে ওই বিষয়ে কোর্স করা থাকলে সে সনো করে। না হলে ওই ভাবেই পড়ে থাকে। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবারও অবহিত করব।