গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সাবেক কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম ও তার প্রধান সহযোগী অতিরিক্ত কমিশনার দেলোয়ার হোসেন এবং ওসি জাহিদের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকাসহ সন্ত্রাসী দিয়ে পিটিয়ে দুই-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন সৈয়দ রিয়াজুল করিম নামে এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
সৈয়দ রিয়াজুল করিম বলেন, ২০১৪ সালে গাজীপুরের মোগরখলে একটি নির্মাণাধীন তিন তলা ভবন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে নিট সিটি লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলি। খোলার এক বছরের মাথায় ভবন মালিকের সঙ্গে আমার বিরোধ শুরু হয়। বিরোধের কারণ আমি ভবনের ওপরে আরও দুটি তলা নির্মাণের জন্য ৮০ লাখ টাকা দেই। কিন্তু ভবন মালিক টাকা নিয়ে নতুন দুটি তলা তৈরি না করে, বরং সে আমার ফ্যাক্টরি থেকে জুটের দাবি করে। এ নিয়ে আমি আদালতে বিল্ডিং মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে শুনানিতে আদালত ওই ভবনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, পরে আমি সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকি এবং আমার অগ্রিম টাকা ভাড়া বাবদ কাটতে থাকে। পরবর্তীতে ভবন ছাড়ার কথা বললে হিসাব করে দেখা যায়, বাড়ির মালিক আমার কাছ থেকে আরও কিছু টাকা ভাড়া বাবদ পাবেন। এই বকেয়া টাকার সমাধানের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহয়তা নেই। এর মাঝেই তখনকার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল কর্মরত থাকা অবস্থায় তাঁর অতিরিক্ত কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিল্ডিং মালিককে দিয়ে চলন্ত ফ্যাক্টরি তালাবদ্ধ করে আমাদের কাছে দুই কোটি টাকা অবৈধভাবে দাবি করেন।
ভুক্তভোগী গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, পরে শাহ নেওয়াজ নামের এক লোকের মাধ্যমে বিশ লাখ টাকা নেওয়ার পরে ফ্যাক্টরি না খুলে পুনরায় আমাদের সাথে বিল্ডিং মালিকের সঙ্গে সালিশ করে ফ্যাক্টরি খুলে দেওয়ার আশ্বাসে পঞ্চাশ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। এবং ওসি জাহিদ আমার কাছ থেকে আরও পঞ্চাশ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে ফ্যাক্টরি খুলে দিতে বিলম্ব করলে আমি কমিশনার মোল্লা নজরুলকে জানাই। তখন মোল্লা নজরুল উপকমিশনার দেলোওয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ওসি জাহিদের মাধ্যমে বিগত ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ আনুমানিক রাত ৯ টায় আমাকে ফোন করে ফ্যাক্টরি খুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং পরের দিন সকালে আমাকে ফ্যাক্টরিতে যেতে বলেন। আমি ওইদিন সকালে ফ্যাক্টরিতে গেলে ভবন মালিক খাইরুল ইসলাম তার লোক নিয়ে হত্যার উদ্দেশে অস্ত্র দিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। হামলার পরে আমাকে মৃত মনে করে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে আমার গুরুতর অবস্থা থাকায় সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হলে আমাকে উত্তরা সিন সিন জাপান হাসপাতালে তাৎক্ষণিক ভর্তি করে অপারেশন করা হয়। আমার ফ্যামিলি তাৎক্ষণিক বাসন থানায় অভিযোগ করলে তখনকার পুলিশ অফিসারা কোনো আসামিকে গ্রেফতার করে নাই এবং আমি হসপিটালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমার ফ্যাক্টরির সমস্ত মালামাল, মেশিনারিজ ও ফায়ার পাম্প জেনারেটর সহ সমস্ত সরঞ্জাম তাৎক্ষণিক লুট করে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ কোটি টাকা। তখন আমাদের কর্মচারী মো. রফিকুল ইসলাম থানায় অভিযোগ করলে থানা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা ব্যবহার গ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, পরে ২০২৪ সালের ১২ আগষ্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিকট অভিযোগ করলে তখনকার উপকমিশনার দেলোয়ার হোসেন তার বন্ধু ইলিয়াস খানের মাধ্যমে আমার পঞ্চাশ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু সমাধানের জন্য বসলে দেলোওয়ার নিজের হাতে টাকা নেন নাই বলে জানান, পরে তিনি আমার পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ফেরত দিবেন এবং আমার ফ্যাক্টরির মালামাল উদ্ধারের সহযোগিতা করবেন বলে মৌখিক অঙ্গীকার করে আমাকে অভিযোগটি তুলে নেওয়ার কথা বলেন। তখন আমি তার কথায় বিশ্বাস করে অভিযোগটি তুলে নিলে সে আবার সবকিছু অস্বীকার করে।
সৈয়দ রিয়াজুল করিম বলেন, আমি এই ঘটনার বিচার দাবি করছি। এবং আমার থেকে আত্মসাৎ করা টাকা ফেরতের দাবি জানাই।
এ সময় মানববন্ধনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডেপুুটি কমিশনার সৈয়দ আজমল হকের সভাপতিত্বে সংহতি প্রকাশ করে করে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসা, ক্ষতিগ্রস্ত ভিকটিম হিসেবে বক্তব্যে রাখেন জাতীয় মানবাদিকার কমিশনের ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সহ-সভাপতি সৈয়দ রিয়াজুল করিম, সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্যে রাখেন মনিরুল ইসলাম মনির, সুমন মাস্টার প্রমুখ।