চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর সচিবালয়ের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতন আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অবস্থানরত ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিস উপ-পরিদর্শকদের (এসআই) জোড় করে সরিয়ে দিয়েছে সচিবালয়ে ডিউটিরত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাত ১১টার পর থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিস উপ-পরিদর্শকদের (এসআই) সাজিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, রাত ১১টার পর থেকে শাহবাগ থানার পুলিশ সদস্যরা আমাদেরকে এখান থেকে জোর করে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের স্থান পরিবর্তন না করে এখানেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
অব্যাহতি পাওয়া এসআই রবিউল রবি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ অনশন পালন করছি। কিন্তু রাত ১১টার পর থেকে এখানে পুলিশ আসে। আমাদের অনশনে তারা বাধা সৃষ্টি করছে। তারা আমাদের অনশনের এই স্থান থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে বলেছে।
তিনি বলেন, পুলিশের শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, অপারেশন) পরিচয়ে আমাদের বাধা দেন। তাদের সঙ্গে এক পর্যায়ে আমাদের বাকবিতণ্ডা হয়।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ের সামনে ঘুরে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিস উপ-পরিদর্শক (এসআই) সদস্যদের আমরণ অনশনের চিত্র দেখা গেছে।
এদিন দ্বিতীয় দিনের মতন চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আমরণ অনশনের অবস্থান কর্মসূচিতে অনর ছিলেন তারা।
চাকরিচ্যুত আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিল, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে আমরণ অনশন চলমান থাকবে।
তার আগে গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে ৪০তম (ক্যাডেট) সাব-ইন্সপেক্টর ২০২৩ ব্যাচ এর অব্যাহতি প্রাপ্তদের চাকুরীতে পুর্নবহালের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দাবি আদায় না হওয়ায় এক সংবাদ সন্মেলন করে অনশনের ঘোষণা দেন।
পরে কর্তৃপক্ষের ডাকে সন্ধা ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ সচিবালয়ে প্রবেশ করে অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
সেখানে জনপ্রশাসন সচিবের সাথে বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় অনশন কর্মসূচি চলমান রাখের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
সোমবার (১৩জানুয়ারি) অব্যাহতি প্রাপ্ত ক্যাডেট আলমগীর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ৪০ তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর ব্যাচের চলমান ট্রেনিং থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি প্রদানের প্রতিবাদ ও চাকরিতে পুনবহালের দাবিতে আমরা ৩২১ জন সাব-ইন্সপেক্টর গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। আমাদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে স্বরাষ্ট্র সচিব মহোদয় দেখা করে আমাদের দাবির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় আমরা সবাই (৩২১ জন) আজ (১৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।
তিনি বলেন, সকাল থেকে অপেক্ষা করেও এখন পর্যন্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে চাকরিতে পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত আজ (১৩ জানুয়ারি) এখন থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সচিবালয়ের সামনেই অবস্থান করবো।
এর আগে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, বিগত ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর আমরা ট্রেনিংয়ে অংশ নিই। ট্রেনিং সম্পন্ন হওয়ার পর আমাদেরকে নানান কারন দেখিয়ে চাকরিতে নিয়োগ না দিয়ে চারটি ধাপে মোট ৩২১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাই আমরা ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিস উপ-পরিদর্শকরা(এসআই) আমাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান নিয়েছি।
সাজিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ছোট ছোট কারনে আমাদের ট্রেনিং সম্পন্ন করে পোস্টিং দেয়ার পরিবর্তে মোট ৩২১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের নাস্তা না খাওয়ার কারন দেখিয়ে ২০৩ জনকে বাদ দেয়া হয়। মাঠে কমান্ড না শোনে দাড়িয়ে থাকার কারন দেখিয়ে ৪৯ জন, ক্লাসে অমনোযোগী থাকার কারন দেখিয়ে ৫৮ জনকে বাদ দেয়া হয়। ক্লাসে মার্চিং না করে যাওয়ার জন্য ৩ জন এবং সর্বশেষ মাঠে হইচই করার জন্য ৮ জনকে বাদ দেয়া হয়। তাই আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই অবিলম্বে আমাদের চাকরিতে পুনর্বহালের অনুরোধ করছি।
আন্দোলনকারী অনামিকা সাহা বলেন, ‘আমরা এক বছর অনেক ত্যাগ স্বীকার করে প্রায় বিনা বেতনে ট্রেনিং করেছি। যখন চাকরিতে নিয়মিত হওয়ার কথা, তখনই আমাদের বাদ দেওয়া হলো। এখন আমরা চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ছি।
আন্দোলনকারী আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর আবেদন ও স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের যতগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আছে সেখানে আমরা লিগেল প্রসিডিওর মেইনটেইন করে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা আজকেসহ বেশ কয়েকদিন শান্তিপূর্ণভাবে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছি। আমরা আশা রাখছি আজকে আমাদের পক্ষে একটা সিদ্ধান্ত আসবে। আর যদি সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে আমরা চারটার একটা প্রেস রিলিজ করে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দিবো।