ষাঁড়ের ঐতিহ্যবাহী মই দৌড় দেখতে হাজারো লোকের ভিড়
জামালপুরের ইসলামপুরে ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) শীতের পড়ন্ত বিকেলে উপজেলার পার্থশী ইউনিয়নের পূর্ব গামাড়িয়া এলাকায় স্থানীয় কৃষকদের আয়োজনে পাঁচ দিন ব্যাপী এই খেলার ফাইনাল খেলা দেখতে খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আছে নারী শিশু বয়স্কসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
গত ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই খেলা অংশ নেয় ১০ টি দল। পাঁচদিন শেষে আজ ফাইনালে জয়ী হয়েছে আগুনের চরের পাঙ্খা আলির দল।
দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পর এই এলাকায় খেলাটি দেখতে দুর দুরন্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের আগমনে ঢল নামে মাঠে। চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো নারী, পুরুষ ও শিশুর উল্লাসধ্বনিতে এলাকাজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
প্রতিবছর শীতের এই সময় ক্ষেতের ফসল কাটার পর খালি মাঠে জেলার বিভিন্ন স্থানে ষাঁড়ের মই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
চারটি ষাঁড় গরুর কাঁধে জোয়াল বেঁধে হয় মই দৌড় খেলা। খেলায় প্রায় এক কিলোমিটার রানওয়ের মত দেখতে কৃষকের মাঠে গতির সাথে পাল্লা দেয় দুইটি মইয়ের আটটি গরু। যে দল আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সেই দল হয় প্রথম।
প্রতিযোগিতায় ১০টি দল অংশ নেয়। এতে প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কার ছিল ফ্রিজ, তৃতীয় পুরস্কার এলইডি টিভি এছাড়া অংশগ্রহণকারী সবার জন্যই সান্ত্বনা মূলক আরো বিভিন্ন পুরস্কার ছিল।
খেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু বলেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ খেলা তুলে ধরতেই এমন খেলার আয়োজন জরুরি। ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো আজ হারানোর পথে। সচরাচর এ খেলাগুলোর আয়োজন করা হয় না। এমন আয়োজনের সাক্ষী হতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ খেলা ধরে রাখতে এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতি বছর এমন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
খেলা দেখতে আসা দর্শক রুবাইয়েত আহম্মেদ বলেন, ‘খেলার কথা জানতে পেরে পাশের উপজেলা থেকে স্বপরিবারে দেখতে এসেছি। এ খেলা এর আগে কখনো দেখি নাই। আয়োজকদের বলবো এ খেলা যেনো প্রতিবছর আয়োজন করা হয়।’
ছোটন মিয়া নামে এক দর্শক বলেন,‘খেলা দেখে খুবই ভালো লেগেছে। পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতি বছর এমন করা উচিত।’
খেলায় অংশগ্রহণ করা এক খেলোয়াড় বলেন,‘আমাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য এ খেলা। তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এ খেলায় অংশগ্রহণ। অনেক ঝুঁকি আছে খেলায়। ঝুঁকি থাকলেও আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুশি লাগছে।’
মইদৌড় খেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মো: সোহেল রানা খোকন বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর এ এলাকায় মইদৌড় খেলা হলো। হাজার হাজার দর্শকের ভালো সাড়া পেয়ে খুবই ভালো লেগেছে। আবহমান এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আগামীতে আরও বড় পরিসরে আয়োজন করে। প্রতিবছর এ আয়োজন করা অব্যাহত রাখবো।