ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওই ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮ টার দিকে দিকে উপজেলার রামচন্দ্রপুর ত্রিবেণি শ্মশান খাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজনই সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা গেছে।
ঘটনার পরপরেই একটি বেনামি নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে একটি খুদেবার্তা আসে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে। সেখানে ওই খুদেবার্তা প্রেরক নিজেকে ‘জাসদ গণবাহিনীর’ নেতা কালু হিসেবে দাবি করে ওই তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। কিন্তু ওই ক্ষুদেবার্তা প্রেরক সত্যিকারের কালু কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিহত ৩ জনের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের আবু হানিফ ওরফে হানিফ আলী (৫৬) ও তার শ্যালক শ্রীরামপুর গ্রামের লিটন হোসেন (৩৫)। এর মধ্যে হানিফ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক নেতা। নিহত অন্য দুইজনই সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
সন্ত্রাসী নেতা কালু পরিচয় দিয়ে পাঠানো খুদেবার্তার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনাবাসীর উদ্দেশে জানানো যাচ্ছে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুণ্ডু নিবাসী হানিফ তাঁর দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে তিন থেকে চার গুলির শব্দ শুনতে পান এলাকাবাসী। এরপর ভয়ে আর কেউ ঘর থেকে বের হননি। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি মরদেহ ও দুইটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তারা পুলিশে খবর দেন।
শৈলকূপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের মতিয়ার রহমান বলেন, রাতে স্থানীয়রা গোলাগুলির শব্দ পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তিনজনকেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আমরা তিনটা লাশ পেয়েছি। লাশ দেখে মনে হচ্ছে, গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম হানিফ। তিনি পূর্ব–বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন। অপরজন হানিফের শ্যালক লিটন। তবে বাকি একজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
ওসি আরও জানান, ঘটনাস্থলে দুটি কালো রঙের পালসার মোটরসাইকেল, একটি ম্যাগাজিন ও গুলি পাওয়া গেছে। কি কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) ও জাসদ গণবাহিনী নামে দুইটি চরমপন্থি দলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। শুক্রবার রাতে রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে যায় প্রতিপক্ষরা। নিহত হানিফের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৩টি হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর একই স্থানে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়।
নিহত হানিফ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি ছিলেন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়। উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকলে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমা নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন হানিফ।