রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার চাঁদ উদ্যান লাউ তলা এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত দুজন স্থানীয় কিশোর গ্যাং গ্রুপ "ঠোঁটে ল" গ্রুপের সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করা হলেও তারা শ্রমজীবি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, আটক পাঁচ জনই ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া। তারা ভ্যান চালক ও রাজমিস্ত্রীর কাজ করত।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাঁদ উদ্যান হাউজিংয়ের ৬ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক বাসিন্দারা বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেক বাসিন্দাই স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলছেন। তবে কেউ কেউ আবারও এই গ্রুপের অন্য সদস্যদের হামলার আশঙ্কাও করছেন। এর আগে বুধবার দিবাগত রাত বারোটায় মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকার ৬ নম্বর রোডে যৌথ বাহিনীর অভিযানে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযানে নিহতরা হলেন- নিহতরা হলেন শরিয়তপুর জেলার গোসাইর হাট উপজেলার দেশ ভুয়াই এলাকার আব্দুল সাত্তারের ছেলে মোঃ জুম্মন (২৬) ও ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ এলকাার মোঃ শাহজাহান আলীর ছেলে মিরাজ হোসেন (২৫)। এছাড়াও আটককৃতরা হলেন- হোসেন (২৩, মিরাজ (২৫), আল আমিন (২৪), মমিনুল (২০) ও মেহেদী (১৭)।
নিহতদের বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত দুইজন চাঁদ উদ্যান এলাকার ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং "ঠোঁটে ল" গ্রুপের সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া পাঁচ সদস্য এ এলাকার আরেক ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং গ্রুপ "লাল ও ডায়মন্ড" গ্রুপের সদস্য। তবে, যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, বসিলা ৪০ ফিট, সাত মসজিদ হাউজিং ও সোনা মিয়ার টেক এলাকার কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো একসাথে হয়ে যৌথ বাহিনীকে চারপাশ থেকে ঘিরে হামলা চালায়। এ সময় পুরো কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো "ঠোঁটে ল" গ্রুপের প্রধান দ্বীন ইসলাম ওরফে দিলা, ফাডা আলামিন এর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে গুলি বর্ষন করে। যৌথ বাহিনীর সাথে গোলাগুলির সময় দুইজন নিহত হলেও দিলা ও ফাডা আলা আমিন সহ অনেকে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, এ এলাকা জুড়ে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ গড়ে ওঠেছে। তারা দিনের আলো কিংবা রাতের আঁধারে যেকোনো সময় সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে সব চিনিয়ে নেয়। পাশাপাশি, প্রতিদিনই ১৫-২০ জন একত্র হয়ে এদের অস্ত্রের মহড়া চলে। কেউ তাদের ভয়ে মুখ খুলতে চায় না। কেউ মুখ খুললেই তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নেমে আসে ভয়াবহ নৃশংসতা। বুধবার দিনের বেলায় ও একাধিকবার তাদের অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
বাড়ির ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা বকুল বেগম জানান, হঠাৎ করে গতকাল রাত সাড়ে বারোটার দিকে দেখি বাড়ির চালের ওপর দৌঁড়াদৌড়ির শব্দ। এ সময় বাড়ির চারদিকে সেনাবাহিনী ঘেরাও করে ফেলে। তখন আমাদের সবাইকে যে যার বাসার ভিতরে ঢুকে দরজা, লাইট বন্ধ করে দিতে বলে। কিছুক্ষনের মধ্যে শুনতে পারি সেনাবাহিনী বলছে আপনারা অস্ত্র ফেলে দিয়ে দ্রুত আত্মসমর্পণ করেন। এভাবে প্রায় ২ ঘন্টার মতো সেনাবাহিনী তাদেরকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে। এক পর্যায়ে আমরা গুলির শব্দ শুনতে পাই। পরে রাত প্রায় দুইটা আড়াইটার দিকে আমাদের বাসার চালের ওপর থেকে দুইজনের মরদেহ নামায়। এছাড়াও, এ বাড়ির দো-তলায় ছোট রুমে ভাড়া থাকা পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে যায়। আমি গত ৭ বছর যাবৎ এ বাড়ির ম্যানেজার হিসেবে আছি। যারা মারা গেছে তারা পাশের এলাকার। কিন্তু তাদের চিনি না।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রহিমা বেগম জানান, গতকাল রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে আমরা দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনতে পাই। তখন বাসা থেকে বের হয়ে দেখি সেনাবাহিনী কাদের যেন ধাওয়া করছে। সেনাবাহিনী আমাদের এলাকায় এসে আমাদের সবাইকে বাসায় ঢুকে দরজা লাইট বন্ধ করে দিতে বলে। আমরা বাসায় ঢুকে শুনতে পারি পাশেই কাদেরকে যেন সেনাবাহিনীর লোকজন বলতেছে দ্রুত অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্নসমর্পণ করেন। এমন করে প্রায় দুই ঘন্টার মতো সেনাবাহিনী তাদেরকে আত্মসমর্পণ করার জন্য বলছিল। এক পর্যায়ে আমরা গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। তবে, মনে হয়েছে দুই পাশ থেকে গুলি হচ্ছে। আমরা আতঙ্কে লাইট ফ্যান সব বন্ধ করে দিয়ে বাসার ভেতর বসে থাকি। পরে রাতের দিকে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে নিচে নামিয়ে আনা হয়। এ সময় বাড়ির দো-তলায় ভাড়া থাকা পাঁচজনকে উপরে টিনের চাল খুলে আটক করে নিয়ে যায়।
পাশেই ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন জানান, যারা মারা গেছে তারা সবাই কিশোর গ্যাং এর সদস্য। মারা যাওয়ার আগেও বিকেলে চুরি চাপাতি নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে মহড়া দিয়ে গেছে। এরা প্রতিনিয়ত ছিনতাই করত। আতঙ্কে এ এলাকার লোকজন সন্ধ্যার পর চলাচল করতে পারে না।
এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগ মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানান, যৌথ বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে নিহতদের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। তাদেরকে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়াও, যাদেরকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।